দুর্গাপুর, ২২ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : গত তিন মাস মজুরি পায়নি। তার ওপর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। কারখানার ভেতর পানীয় জলের সঙ্কট। প্রায় কুড়িদিন ধরে একপ্রকার অর্ধাহারে দিন কাটছে। সংগঠন করা শ্রমিকরা বকেয়া পেলেও, কানাকড়িও জোটেনি বলে অভিযোগ।
এমনই দ্বিচারিতা ও অমানবিক শোষনের শিকার কাঁকসার বামুনাড়া শিল্পতালুকে এক বেসরকারী কারখানার আবাসিক শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার বঞ্চিত শ্রমিকদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল। কারখানার গেটে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ক্ষোভ উগরে দিল। ঘটনাকে ঘিরে চরম উত্তেজনা। খবর পেয়ে কাঁকসা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ঘটনায় জানা গেছে, কাঁকসার বামুনাড়া শিল্পতালুকের ওই বেসরকারি কারখানায় প্রায় ২০০ জন আবাসিক ঠিকা শ্রমিক রয়েছে। মূলত, বিহার, ঝাড়খন্ড ওইসব শ্রমিকরা কাজের তাগিদে ঠিকাশ্রমিকের কাজে রয়েছে। কারখানার ভেতরে তাদের থাকার কমিউনিটি কোয়াটার। অভিযোগ, গত তিন মাস তাদের মজুরী বকেয়া। তার ওপর একমাস যাবৎ তাদের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন। তার ফলে বন্ধ হয়ে পড়েছে পানীয় জলের পম্প। মালিকপক্ষের দেখা নেই। এদিন বঞ্চিত শ্রমিকরা কারখানার গেটে বিক্ষোভে সামিল হয়। নিজেদের বঞ্চনার ক্ষোভ বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কারখানার গেটে লাঠি নিয়ে ভাঙচুর করে শ্রমিকরা।
বিক্ষোভরত শ্রমিক দীপক বাল্মিকী জানান,” তিনমাস বকেয়া মজুরী। একমাস আগে ইলেক্ট্রিক লাইন কেটে দিয়েছে। ফলে জলের পাম্প বন্ধ। ইউনিয়ান যারা করে তাদের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে। শুধু আমাদের বকেয়া মালিকপক্ষ দেয়নি। দ্বিচারতা করছে। গত কুড়িদিন একপ্রকার অর্ধাহারে দিন কাটছে। পাশের একটি কারখানায় খিচুড়ী দেয়। তাতেই দিন কাটছে।”
কারখানার সিসি ম্যানেজার বিকাশ মন্ডল জানান,” গত ৩০ আগস্ট থেকে উৎপাদন বন্ধ। মালিকপক্ষ আসে না। ফলে চরম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দিন কাটছে আবাসিক ঠিকাশ্রমিকদের।”
গত কয়েক মাস আগে রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের পে-শ্লিপ সহ শ্রম আইন মেতাবেক মজুরী প্রদানের নির্দেশ দেন। এবং গোটা বিষয়টি শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে দেখার জন্য বলেছিলেন। সেই মত বেশ কয়েকবার চেম্বার অব্ কমার্স ও কারখানা কর্তৃপক্ষদের মিটিংও হয়। প্রশ্ন, তারপরও কেন এই অমানবিকতা? কেন শ্রম আইন মেনে কাজ হয় না?
জানা গেছে, আসানসোল, দু্গাপুর, কাঁকসা ও পানাগড় শিল্পতালুকে কম মজুরীতে বিহার ঝাড়খন্ড থেকে ঠিকাশ্রমিক রাখে বেশকিছু বেসরকারী কারখানা। কম মজুরীতে বেশী সময় কাজ করানোর সুযোগে বহিরাগত শ্রমিকদের রাখার প্রবনতা বেশী। এমনকি তাদের থাকার ব্যাবস্থা কারখানা কর্তৃপক্ষ করে দেয়। আর ওইসব শ্রমিকরা রুজির তাগিদে শ্রম দফতরে নিজেদের নাম নথীভুক্ত করতেও ভুলে যায়। এমনকি কাজ খোয়ানোর ভয়ে কোন শ্রমিক সংগঠনেও যোগ দিতে ভয় পায়। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নেয় একশ্রেনীর কারখানা কর্তৃপক্ষ।
সিটু শ্রমিক নেতা পঙ্কজ রায়সরকার বলেন,” চুড়ান্ত অমানবিক ঘটনা। এসব কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম দফতরের এপআইআর করা উচিৎ। এবং তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের যেসব নেতারা খাম নিতে যায়, তাদের বেঁধে রাখা উচিত।” যদিও কাঁকসা ব্লকের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি চন্দন রায় জানান,” বিষয়টি জানা নেই। এসব শ্রমিকদের কেন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” যদিও এবিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে খবর পেয়ে কাঁকসা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।