ডা. আশিস বিশ্বাস কাণ্ডের তদন্ত করতে করিমগঞ্জে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ আধিকারিক

করিমগঞ্জ (অসম), ১৩ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : অন্তঃসত্ত্বা মহিলা‌ই হোন কিংবা অন্য যে কোনও রোগী, চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ কাজ। মানবদেহে অস্ত্রোপচারের আগে সবকিছু ভালো করে পরীক্ষা করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সিজারের ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসককে সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারণ এক্ষেত্রে মা এবং নবজাতক, দু-জনের প্রাণই চিকিৎসকের সঠিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসকের সামান্য ভুলের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোনও অঘটন ঘটে যেতে পারে। করিমগঞ্জ অসামরিক হাসপাতালে স্ত্রী–রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আশিসকুমার বিশ্বাস কর্তৃক সংগঠিত বহুচর্চিত একটি ঘটনার তদন্তে এসে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কথাগুলো বলেন অসম রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জয়েন্ট ডিরেক্টর (কেমোলোজি) তথা নিম্ন অসম ডিভিশনের অ্যডিশনাল ডিরেক্টর ডা. ভানু শ‌ইকিয়া।

ডা. আশিসকুমার বিশ্বাস সন্তান প্ৰসবের নিৰ্দিষ্ট সময়ের আগে একজন অন্তঃসত্ত্বার শরীরে অস্ত্রোপচার করে আইন বিরুদ্ধ কাজ করেছেন বলেও অকপটে স্বীকার করেছেন বিভাগীয় শীর্ষ আধিকারিক। জনৈক অন্তঃসত্ত্বার অসময়ে অস্ত্রোপচার করা সহ প্রি-মেচিওরড বেবিকে পুনরায় গর্ভে রেখে সেলাই করে দিয়েছিলেন ডা. আশিসকুমার বিশ্বাস। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতমাসের ৩১ তারিখ করিমগঞ্জ অসামরিক হাসপাতালে হুলস্থুলের সৃষ্টি হয়েছিল। অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পরিবারের সদস্য সহ হিন্দুরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা ডা. আশিসকুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে হাসপাতাল চত্বরে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

অমানবিক ওই কাণ্ডের জন্য ডা. আশিসকুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে উচ্চস্তরীয় তদন্তের দাবি তুলে হিন্দুরক্ষী বাহিনী ধরনায় বসেছিল। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের ইনচার্জ সুপার ডা. লিপি দেব তদন্তের আশ্বাস দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পরিবারের সদস্য সহ হিন্দুরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের শান্ত করেছিলেন। এর‌ই পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ও মিশন ডিরেক্টরের নির্দেশে মঙ্গলবার এক সদস্যের তদন্তকারী দল করিমগঞ্জ অসামরিক হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়। তদন্তকারী দলের একমাত্র সদস্যা বিভাগীয় শীর্ষ আধিকারিক ডা. ভানু শ‌ইকিয়া প্রথমে ঘটনার তদন্তে নেমে হাসপাতালের অ্যনাস্থেশিয়া সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

অভিযুক্ত চিকিৎসক আশিসকুমার বিশ্বাসের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তিনি। অস্ত্রোপচারের আগে প্রি-অপারেটিভ প্রিপারেশন হিসাবে গর্ভবতী মহিলার হার্টের পজিশন কী ছিল, লাঞ্চের কন্ডিশন কী ছিল, শরীরে পরিমাণ মতো রক্ত ছিল কি না, অস্ত্রোপচারের আগে এ সব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করা হয়নি কেন? বিস্তারিত জানতে চান ডা. ভানু শ‌ইকিয়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সব বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলার প্রসবের সঠিক সময় হয়েছে কি না, আশাকর্মীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে জানান তিনি। কিন্তু আশাকর্মীর সঙ্গে কোনও ধরনের আলোচনা হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডা. শ‌ইকিয়া। সিজারের ক্ষেত্রে একজন অন্তঃসত্ত্বার শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে সঠিকভাবে অবগত হয়ে অস্ত্র ধরতে হয়।

কিন্তু ডা. আশিসকুমার বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কীভাবে এড়িয়ে গেলেন তা তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না বলেও আক্ষেপ করেন তিনি। প্রয়োজনে হাসপাতালের অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে শলা পরামর্শ‌ও করতে পারতেন ডা. বিশ্বাস। এ সব কিছুই না করে তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমের সামনে অকপটে স্বীকার করেন তদন্তকারী দলের একমাত্র সদস্যা তথা বিভাগীয় শীর্ষ আধিকারিক ডা. ভানু শ‌ইকিয়া।

দীর্ঘ প্রায় পঁচিশ বছরের কর্মজীবন থেকে কোনও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেননি বলেই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডা. বিশ্বাস। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানান ডা. বিশ্বাস জনৈক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার শুধুমাত্র পেটে চামড়ার একটি স্তর কেটেছেন। গর্ভস্থ শিশুর শরীরে হাত লাগাননি। আকারে অত্যন্ত ছোট থাকায় তিনি ঘাবড়ে যান এবং পুনরায় চামড়া সেলাই করে দেন। তবে আজকের দিনে খুশির খবর এটাই যে, মা ও নবজাতক শিশু উভয়েই পরমেশ্বরের কৃপায় সুস্থ রয়েছেন। সংঘটিত অবাঞ্ছিত ওই ঘটনার একটি তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেছেন। গুয়াহাটি গিয়ে বিভাগীয় প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ও মিশন ডিরেক্টরের হাতে তাঁর তদন্ত রিপোর্ট তুলে দেবেন বলে জানান রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর (কেমোলোজি) তথা নিম্ন অসম ডিভিশনের অ্যাডিশনেল ডিরেক্টর ডা. ভানু শ‌ইকিয়া।