পুজোর আগে আরও ৫৪ জন টেট উত্তীর্ণকে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের

কলকাতা, ৬ সেপ্টেম্বর (হি . স.) : পর্ষদের ভুলে চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তাঁরা। সেই অভিযোগ নিয়েই মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। বছরের পর বছর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে কোনও উত্তর না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন চাকরি প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে পর্ষদ ভুল স্বীকার করে নিলেও চাকরি পাননি তাঁরা। এবার সেই মামলায় দুর্গাপুজোর আগে প্রাথমিকে আরও ৫৪ জনকে নিয়োগ করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার এই একই মামলায় ২৩ জনকে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

প্রশ্ন ভুল থাকার কারণে বাড়তি নম্বর দেওয়ার ফলে ওই ৫৪ জন চাকরি পাওয়ার যোগ্য, এমনই জানাল আদালত। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই ৫৪ জন টেট (প্রাথমিকে শিক্ষক পদে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা) উত্তীর্ণকে চাকরি দিতে মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ভবিষ্যতের জন্য শূন্যপদ থেকে ওই ৫৪ জনকে নিয়োগ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বনলতা সমাদ্দার-সহ ৫৪ জন। প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল। ভুল প্রশ্নগুলিতে যেসব পরীক্ষার্থী উত্তর দিয়েছেন, তাঁদের পুরো নম্বর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ওই পরীক্ষার্থীদের নম্বর বাড়ে। কিন্তু তার পরও তাঁদের কেন নিয়োগ করা হল না, এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

বনলতাদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও সুদীপ্ত দাশগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘ওই বাড়তি নম্বর পেলে তাঁরা টেট উত্তীর্ণ হবেন। ফলে তাঁদের চাকরি দিতে হবে। কারণ, সেই সময়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, এই নিয়োগে প্রশিক্ষিতদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। আর মামলাকারীরা সবাই প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী। তখন প্রশিক্ষিত নন, এমন অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে এঁরাও চাকরি পাওয়ার যোগ্য।’’

সোমবার ২৩ জন টেট উত্তীর্ণকে ২৩ দিনের মধ্যে চাকরির নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, শূন্যপদ না থাকলে, প্রয়োজনে শূন্যপদ তৈরি করে মামলাকারী ২৩ জনকে চাকরি দিতে হবে। এমনকি, তাঁরা চাকরি পেয়েছেন কি না, পরবর্তী শুনানির দিন আদালতকে তা জানাতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা হয়। ফল প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। ফলপ্রকাশের পর দেখা যায়, ওই পরীক্ষার্থীরা অসফল হয়েছেন। ফলে চাকরি পাননি। ওই পরীক্ষার্থীরা দাবি করেন যে, ছ’টি প্রশ্ন ভুল ছিল। সে কারণেই তাঁরা অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষিত নন, এমন আরও অনেকে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। ঘটনাচক্রে, প্রশ্ন ভুলের অন্য একটি মামলায় কয়েক জন মামলাকারীকে বাড়তি নম্বর দেওয়ার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশকে হাতিয়ার করে বাড়তি নম্বরের আশায় ওই পরীক্ষার্থীরা হাই কোর্টে মামলা করেন।

২০২০ সালের নভেম্বরে টেটের ভুল প্রশ্নের কারণে এই মামলাকারীদের বাড়তি নম্বর দেওয়া যায় কি না, পর্ষদকে তা বিবেচনা করতে বলে হাই কোর্ট। পরের বছর ডিসেম্বরে ওই পরীক্ষার্থীদের ছয় নম্বর দেয় পর্ষদ। ফলে তাঁরা টেট উত্তীর্ণ হন। কিন্তু তার পরও তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন টেট উত্তীর্ণরা।

পর্ষদের তরফে জানানো হয়, ভুল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের কাছে শূন্যপদের তালিকা নেই। তাই এখনও তাঁদের নিয়োগ করা যায়নি। রাজ্য শূন্যপদ জানালে নিয়োগ করা হবে তাঁদের। এই যুক্তি সোমবারের মামলায় গ্রহণ করেনি আদালত।

উল্লেখ্য, এসএসসি থেকে প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তবে এখনও শহরের রাস্তায় নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বহু চাকরি প্রার্থী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *