আগরতলা, ১৩ জুলাই : আগরতলা শহর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে জলমগ্ন হলেও এখন আর আগের মত জল আটকে থাকেনা। খুবই দ্রুততার সঙ্গে জল নিষ্কাশন করা হয়। সরকারের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। শহরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার কাজ দ্রুতগতিতে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা আজ সচিবালয়ে ২নং কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত আগরতলা বন্যা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হলে জল জমা স্বাভাবিক। কিছুদিন আগে আগরতলা শহর এবং শহর সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার এটাই অন্যতম কারণ।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলা শহরে বন্যা ব্যবস্থাপনায় নেওয়া দীর্ঘমেয়াদী কর্ম পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে স্থানীয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারলেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে। তাছাড়া শহরের নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। ড্রেইনগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার এবং আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলতে হবে। ড্রেইনগুলি যেন আবদ্ধ না থাকে সেই দিকে নজর দিতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেন হাতে নেওয়া কর্মপরিকল্পনাগুলির ডি পি আর তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার জন্য।
সভার শুরুতে নগরউন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরন গিত্যে আগরতলা শহরে বৃষ্টির জল জমা প্রতিরোধ ও জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার কর্মসূচি সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি আগরতলা শহর সম্পর্কিত তথ্য এবং শহরের বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান, ড্রেন সংক্রান্ত তথ্য, ড্রেন পরিষ্কার পদ্ধতি, শহরের পাম্পগুলির বর্তমান অবস্থা এবং জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সচিব বলেন, বর্তমানে আগরতলা শহরে ৫১৪.৫৮ কিমি কাঁচা ড্রেন, ১৮৪৬৪ কিমি পাকা ড্রেন এবং কভার ড্রেন রয়েছে ২০.০৮ কিমি। তিনি বলেন, আগরতলা পুরনিগমে এখন ৮টি ডাম্প ট্যাঙ্ক সহ ৪টি ডি-সিল্টিং সুপার সাকার রয়েছে। ডাম্প ট্যাঙ্ক সহ ২টি আবর্জনা সংগ্রহকারি মেশিন দ্বারা ড্রেন পরিষ্কার রাখার কাজ চলছে শহরে। আরও কিছু মেশিন কেনা প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি জানান বর্তমানে আগরতলা শহরে জল নিষ্কাশনের জন্য ১৬টি পাম্প স্টেশন সক্রিয় রয়েছে। এই পাম্প স্টেশনগুলির কার্যকারিতা এবং স্টেশনগুলির ক্ষমতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি জানান, চলতি বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে শহরে আরও দুটি পাম্প স্টেশন চালু করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
সভায় সচিব কিরণ গিত্যে জানান, ৬টি পাম্প স্টেশনে ডাবল ফিডার ইলেকট্রিক সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে। ৬টি মোবাইল ডিজেল চালিত পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। সভায় তিনি ইন্দ্রনগরস্থিত ইন্ট্রিগ্রেটেড কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে সি সি টিভি-র মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তথ্যও তুলে ধরেন। গনরাজ চৌমুহনী থেকে কাঁটাখাল পর্যন্ত ড্রেইনটি উন্নতিকরণের বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। সচিব শ্রীগিত্যে হাওড়া নদী, কাঁটাখালের বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ও বাঁধের ভূমিক্ষয় রোধেও বিস্তারিত আলোচনা এবং পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আলোকপাত করেন।
সভায় নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরন গিত্যে সরকারের নেওয়া স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা যেমন শকুন্তলা রোড, সৎসঙ্গ আশ্রম এবং রামনগর রোড নং ৪-এ মোট তিনটি ড্রেইনে পাম্প বসানো, আগরতলা শহরের পাম্প স্টেশনগুলির রিডিজানিং, ৯টি পাম্প হাউসে ডি জি সেট বসানো, মাটির নিচের পাইপ লাইনগুলির রি-মডেলিং, ৮টি ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার বসানো, রণজিত্নগরের ফ্লুইচ গেইটটির সংস্কার এবং হাওড়া নদীর বাঁধের তিনটি স্থানের সংস্কার ইত্যাদি পরিকল্পনাগুলির তথ্যও তুলে ধরেন। এই কর্মসূচিগুলি দ্রুত শুরু করা হবে বলে সচিব জানান। এছাড়াও আগরতলা শহরের জল নিষ্কাশন সম্পর্কিত সরকারের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সভায় নগরউন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, অর্থ দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক, নগর উন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা তমাল মজুমদার সহ আরক্ষা দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ, বি এস এফ-এর আধিকারিক ও শহরের বরিষ্ঠ নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন।