বজালি / মরিগাঁও (অসম), ২ জুলাই (হি.স.) : মণিপুরের ননে জেলার টুপুলে বুধবার গভীর রাতে সংঘটিত ভূমিধসে কৰ্তব্যরত অবস্থায় শহিদ হয়েছেন বীর সেনা জিয়ারুল হক (২৯)। জিয়ারুলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেকস্তব্ধ করে তুলেছে তাঁর জন্মভূমি বজালির ভবানীপুরের রৌমারি গ্রামকে। এদিকে ওই ভূমিধসে নিখোঁজ মরিগাঁওয়ের আরও এক শ্ৰমিকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বুধবার গভীর রাতে মণিপুরের ননে জেলার অন্তর্গত টুপুলে নির্মীয়মাণ রেলওয়ে প্রকল্পের ওপর ধস নেমেছিল। সেখানে ছিল ১০৭ টেরিটরিয়াল আর্মির ক্যাম্পে অন্য জওয়ানদের সঙ্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন জিয়ারুল হক। রৌমারি গ্রামের জনৈক কায়েম উদ্দিন এবং সোহাগি খাতুনের ছেলে জিয়ারুল হক ২০১৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১০৭ টেরিটরিয়াল আর্মিতে যোগদান করেছিলেন। বাবা, মা, তিন ভাই, পত্নী আজমিনা পারভিন, তিন বছরের এক পুত্ৰসন্তান ‘জিসান’ ও একটি তিন মাসের পুত্ৰসন্তান ‘মোমাই’কে ইহসংসারে রেখে শহিদ হয়েছেন জিয়ারুল।
বুধবার রাত, যে রাতে ধস নেমেছিল, সেদিন রাত প্রায় ১১টা নাগাদ পত্নী আজমিনা পারভিনের সঙ্গে ফোনে কিছু কথাবার্তা বলেছিলেন জিয়ারুল। তখন নাকি তিনি পত্নীকে বলেছিলেন, রাত ১২টা থেকে তাঁর ‘ডিউটি’ আছে। এটাই ছিল জিয়ারুল ও পত্নী আজমিনা এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে শেষ কথা বলেছিলেন তিনি। তিন মাস আগে দ্বিতীয় সন্তান ‘মোমাই’-এর জন্মের সময় ছুটিতে রৌমারির বাড়ি এসে দেড় মাস ছুটি কাটিয়ে অৰ্থাৎ দেড় মাস আগে ফের কৰ্তব্যস্থল টুটুলে গিয়ে কাজে যোগদান করেছিলেন জিয়ারুল হক।
আজি শনিবার শহিদ জিয়ারুলের কফিনবন্দি নশ্বরদেহ নিজের জন্মভূমি ভবানীপুরের রৌমারি গ্রামে এলে মর্মান্তিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সম্পূর্ণ সামরিক মৰ্যাদায় বহু মানুষের উপস্থিতিতে রৌমারির সর্বজনীন কবরস্থানে জিয়ারুলের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শর্মার নিৰ্দেশে অসম সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন সাহায্য হিসেবে ৫ লক্ষ টাকার চেক জিয়ারুলের নিকট-আত্মীয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন মন্ত্ৰী রঞ্জিতকুমার দাস।
অন্যদিকে মণিপুরের ভূমিধসে মরিগাঁওয়ের আরও এক নিখোঁজ শ্ৰমিকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত মৃত শ্রমিক কুশতলিখুড়া গোসাঁইবাড়ি গ্রামের বুগেন্দ্ৰ ফুকন। এখন পর্যন্ত মরিগাঁওয়ের উদ্ধারকৃত মৃত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ছয়। জানা গেছে, মরিগাঁওয়ের ১৭ জন শ্রমিক ধসের কবলে পড়েছেন।