Abhishek Banerjee : গুয়াহাটিতে অভিষেক, দেহরক্ষীর হাতে নিগৃহীত সাংবাদিক, কার্যক্রম বয়কট গণমাধ্যমের, তীব্ৰ নিন্দা দল-সংগঠনের, চাপে পড়ে ক্ষমা-ভিক্ষা‘অপেক্ষা করুন, তিন বছর পর দেখে নেবো’, হুমকি নিরাপত্তাকর্মীর

গুয়াহাটি, ১১ মে (হি.স.) : অসমে সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে প্রথমবারের মতো আজ গুয়াহাটি এসেছেন তৃণমূল কংগ্ৰেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয় মাছখোয়ায় প্রাগজ্যোতি আইটিএ কালচারাল কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাৰ্যসূচিতে এসেছেন তিনি। প্রথম পদর্পণে দলীয় নেতার এক নিরাপত্তাকর্মীর অভব্য আচরণে বিস্মিত গোটা অসম। আজকের কাৰ্যক্ৰমে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অসম প্রদেশ সভাপতি রিপুন বরা, সাংসদ সুস্মিতা দেব সহ দলীয় কয়েকজন নেতা ও কৰ্মী। কিন্তু কাৰ্যক্ৰমের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অভিষেকের দেহরক্ষীর হাতে লাঞ্ছিত, শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে কৰ্তব্যরত সাংবাদিকদের। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসকে বয়কট করেছে রাজ্যের সংবাদজগত। তবে চাপে পড়ে এক সময় ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্যে হয়েছেন খোদ অভিষেক।

ঘটনাবলি সংগঠিত হয়েছে স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্ৰেসের অসম প্ৰদেশ সভাপতি রিপুণ বরা, সাংসদ সুস্মিতা দেবের সামনেই। কৰ্তব্যরত সাংবাদিককের সঙ্গে অভব্য আরচণই কেবল নয়, তাঁকে নিরাপত্তাকর্মীর হুমকি ‘অপেক্ষা করুন, তিন বছর পর দেখে নেবো’। এভাবে হুমকি ও গালিগলাজ দিয়েও ক্ষান্ত হননি দেহরক্ষী, ধাক্কা দিয়ে ধরাশায়ী করার চেষ্টাও করেছেন তিনি। অসমে এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার কোনও দিন সম্মুখিন হননি রাজ্যের কোনও সাংবাদিক। তাই দলের একজন সর্বভারতীয়, প্রদেশ নেতাদের সামনে সংগঠিত ঘটনায় রাজ্যের সাংবাদিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমন-কি, এ ঘটনার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের খবর করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকরা আজকের কার্যক্রম বয়কট করেছেন।

সাংসদ অভিষেকের দেহরক্ষীর এহেন দুষ্কর্মের তীব্ৰ ভাষায় ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছে অসমের সংবাদমহল, বিভিন্ন সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল। সংশ্লিষ্ট সব দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে যথাশীঘ্র তৃণমূল নেতৃত্বকে শান্তিপ্রিয় অসমবাসী তথা অসমের সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন।

এদিকে গুয়াহাটি প্ৰেস ক্লাবও এই ঘটনার তীব্ৰ নিন্দা জানিয়েছে। এক প্ৰেস বিবৃতিতে গুয়াহাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনোজকুমার নাথ এবং সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় রায় ঘটনার তীব্ৰ নিন্দা করে বলেছেন, সাংবাদিকের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে। এ ঘটনা ধিক্কার ও নিন্দার যোগ্য।

তাঁরা বলেন, এটা গণতন্ত্ৰের চতুৰ্থ স্তম্ভের ওপর হামলা। সাংবাদিকদের সঙ্গে দুৰ্ব্যবহার করার ঘটনা গণতান্ত্ৰিক ব্যবস্থার পরিপন্থী। গুয়াহাটি প্ৰেস ক্লাব সংগঠিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অনুষ্ঠান বৰ্জনকারী সাংবাদিকরা নিজের দেহরক্ষী কর্তৃক দুৰ্ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা অভিষেককে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার ওপর গুরুত্ব দিতে দাবি জানিয়েছে গুয়াহাটি প্ৰেস ক্লাব। এদিকে এ ঘটনার তীব্ৰ নিন্দা করেছে কংগ্রেসও। কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব তৃণমূলের তুলোধোনা করেছেন।

উল্লেখ্য, অসমে দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। এমতাবস্থায় রাজ্যে প্ৰথমদিন পদর্পণ করেই যে অনৈতিক ভুল করেছে দলের সেকেন্ড-ইন কমান্ডের দেহরক্ষী তা সহজভাবে নিতে পারছেন না অসমবাসী। ইতিমধ্যে ঘটনাটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেলে রাজ্যজুড়ে নিন্দা ঝড় বইছে। অনেকে এমনও বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে যে কালচার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন, অসমে তা হতে দেওয়া যাবে না, কড়া হাতে রোখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *