গুয়াহাটি, ১০ মে (হি.স.) : আজ অন্য এক মাইল ফলক স্পৰ্শ করেছে অসম পুলিশ। অপরাধ দমন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল, উগ্রপন্থী-বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই, জনগণ ও সম্পত্তির নিরাপত্তা রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় একতার জন্য অসম পুলিশ সাহসের সঙ্গে লড়ে নজির গড়েছে। এজন্য অসম পুলিশ আজ লাভ করেছে বিরল সম্মান ‘রাষ্ট্রপতির নিশান’, বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শান্তি ফিরেছে, তাই তাঁর বিশ্বাস, শীঘ্রই সমগ্র অসম থেকে প্রত্যাহার হবে আফসপা, রাজ্য পুলিশের হাতে ‘রাষ্ট্রপতির নিশান’ তুলে দিয়ে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজ মঙ্গলবার গুয়াহাটির নেহরু স্টেডিয়ামে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিগত ২৫ বছরে তাদের অসামান্য পরিষেবা প্রদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অসম পুলিশকে ‘রাষ্ট্রপতির নিশান’ সম্মানে ভূষিত করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজ্যের গৃহমন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে ‘রাষ্ট্রপতির নিশান’ অসমের ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্তের হাতে তুলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রদত্ত ভাষণে তিনি অসম পুলিশের কর্মদক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেন, রাষ্ট্রপতির নিশান লাভ করার ঘটনা অসম পুলিশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে অসমের ২৩টি জেলা এবং আংশিকভাবে একটি জেলা থেকে আফসপা (সশস্ত্র বাহিনী-বিশেষ ক্ষমতা আইন) প্ৰত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর বিশ্বাস, খুব শীঘ্রই সমগ্র অসম থেকে প্রত্যাহার করা হবে আফসপা। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, উন্নত আইন-শৃঙ্খলা এবং জঙ্গি সংগঠনগুলির সাথে শান্তি চুক্তি ইতিমধ্যেই রাজ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। আলফা, এনএসসিএন, এনডিএফবির প্রভৃতি উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সাফল্য লাভ করেছে অসম পুলিশ। অসম এখন উগ্রবাদ অশান্তজৰ্জর অঞ্চল থেকে মুক্ত হয়েছে। এর জন্য তিনি অসমের পুলিশ-প্রধান থেকে পুলিশের কনস্টেবল স্তরের পাশাপাশি অসমের জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের শীৰ্ষ ১০ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে অসম পুলিশও স্থান লাভ করেছে। দেশের সফল পুলিশের মধ্যে অসম পুলিশ অন্যতম। এর জন্য অসমের গোটা পুলিশ বাহিনী কৃতিত্বের দাবিদার। বলেন, গত ছয় বছর কোনও অনুপ্রবেশকারী সীমান্ত টপকে অসমে প্রবেশ করতে পারেনি। এটাও অসম পুলিশের কাছে গৌরবের বিষয়।
অমিত শাহ বলেন, হিমন্তবিশ্ব শৰ্মার নেতৃত্বে অসম পুলিশ নতুন গতি লাভ করেছে। ড্রাগস, সুপারি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে সাফল্য লাভ করেছে হিমন্তবিশ্বের পুলিশবাহিনী।
প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করে মূল স্রোতে ফিরে এসেছে তাদের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় সরকার পুনর্বাসন করছে। বলেন, অসম পুলিশের এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। তাছাড়া সফলভাবে বিদ্রোহ, সীমান্ত সমস্যা, অস্ত্র, মাদক ও গবাদি পশুর চোরাচালান, গণ্ডার শিকার এবং জাদুবিদ্যার মতো সামাজিক সমস্যাগুলি দেশের অন্যতম প্রধান, যা পুলিশ বাহিনী শক্ত হাতে মোকাবিলা করেছে এবং করছে, বলেন শাহ। তিনি যোগ করেন, এ সব বিষয় রাষ্ট্রপতির নিশানে সম্মানিত হওয়ার যোগ্য।
অসমে বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় কার্যকালে হিমন্তবিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথমবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে এখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন শাহ।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৯.১৫ মিনিট থেকে নেহরু স্টেডিয়ামে শুরু হয় ‘রাষ্ট্রপতির নিশান’ প্ৰদান উপলক্ষ্যে বৰ্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। অসম পুলিশের সুসজ্জিত জওয়ানরা ব্যান্ডের তালে তালে ‘অলঙ্করণ প্যারেড’ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এর পর খোলা জিপসিতে দাঁড়িয়ে গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ করে পুলিশের অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি। অসম পুলিশের বেশ কয়েকটি বাহিনী ‘অলঙ্করণ প্যারেড’–এ অংশগ্ৰহণ করেছে।
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ৯.৫৫ মিনিট। মাঝমাঠে অধিষ্ঠিত সুসজ্জিত নিশানকে মাঙ্গলিক ক্ৰিয়ার মাধ্যমে রাজ্য পুলিশ তথা রাজ্যবাসীর নামে সংকল্প করেন তিন সত্রের সত্রাধিকার। তাঁদের মধ্যে গড়মূল সত্রের সত্রাধিকার হরিদেব গোস্বামী শ্লোক পাঠ করে রাষ্ট্ৰপতির নিশানে শান্তি জল ছড়িয়েছেন। বরদোয়া (বটদ্ৰবা) সত্ৰের সত্ৰাধিকার দেবানন্দ গোস্বামী ঘোষা পাঠ করেন এবং মায়ামরা সত্ৰের সত্ৰাধিকার মুকুন্দচন্দ্ৰ গোস্বামী আশীৰ্বাদ প্ৰদান করেছেন। এর পর রাজ্যের গৃহমন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্ৰপতি নিশান অসমের ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্তের হাতে তুলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অনুষ্ঠানে অসমের স্পেশাল ডিজিপি (আইন-শৃঙ্খলা), ডিরেক্টর ভিজিল্যান্স অ্যান্ড অ্যান্টি-করাপশন, চিফ অ্যান্টি-রাইনো পোচিং টাস্কফোর্স জ্ঞানেন্দ্ৰপ্ৰতাপ সিং সহ ছিলেন রাজ্য পুলিশের বহু উচ্চপদস্থ, পদস্থ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার এবং বহু কনস্টেবল ছিলেন।
‘রাষ্ট্রপতির নিশান’ সূচক পতাকায় অসম পুলিশের লোগো, অসমের মানচিত্র, এক শৃঙ্গের গণ্ডারের ছবি, ৩৬টি স্টারের ছবি এবং কিছু নীতিবাক্য লেখা রয়েছে। ৩৬ স্টারের মাধ্যমে রাজ্যের ৩৬ জেলাকে প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে। নিশানটি তৈরি করেছেন আইআইটি গুয়হাটির নকশাবিদরা।
উল্লেখ্য, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্ৰাসবাদ নিৰ্মূল ইত্যাদি সহ বেশ কয়েকটি দিক পৰ্যালোচনা করে বিরল এই সম্মান প্রদান করেন রাষ্ট্ৰপতি। ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, জম্মু ও কাশ্মীর, ত্রিপুরা এবং হরিয়ানা ‘রাষ্ট্রপতির নিশান’ পেয়েছে। দিল্লি যখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছিল তখন এই সম্মান লাভ করেছিল।