‘১ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও কালেই বিজেপি প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেননি’
গুয়াহাটি, ২৪ এপ্রিল (হি.স.) : প্রত্যাশা মতোই ফলাফল এসেছে। ৬০ আসন বিশিষ্ট গুয়াহাটি পুরনিগম (জিএমসি) ভোটে ৫২ ওয়ার্ডে বিজেপি এবং ছয় (৬)-টিতে জোটশরিক অসম গণ পরিষদ (অগপ)-কে নিয়ে মোট ৫৮টিতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন মিত্ৰজোটের প্রার্থীরা। বিজেপির প্রতি আস্থা রাখায় মহানগরের নাগরিককুলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলের প্রদেশ সভাপতি ভবেশ কলিতা।
ইতিমধ্যে ভোটগণনা পৰ্ব সম্পন্ন। সরকারিভাবে সব ওয়ার্ডের ফলাফল ঘোষণাও হয়ে গেছে। প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫২টি বিজেপি ও মিত্রজোট অসম গণ পরিষদ (অগপ)-এর দখলে ছয়টি এবং একটি করে ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন আম আদমি পার্টি (আপ) ও অসম জাতীয় পরিষদ (এজেপি)-এর প্রার্থী। ফলে জিএমসি-তে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
বিজেপির চমকপ্ৰদ ফলাফলে দলীয় কার্যকর্তা, অন্য নেতারা-তো বটেই, বেজায় উচ্ছ্বসিত দলের প্রদেশ সভাপতি ভবেশ কলিতা। দলীয় প্ৰাৰ্থীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের পাশাপাশি বিজেপির প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন, সেজন্য মহানগরবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন তিনি। ভোটগণনা কেন্দ্রস্থল মণিরাম দেওয়ান ট্ৰেড সেন্টারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উৎফুল্লিত ভবেশ কলিতা বলেন, মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা সৰ্বহারাদের জন্য যে কাজ করছেন, মহানগরকে সৰ্বাঙ্গসুন্দর করে তুলতে যে প্ৰয়াস করছেন, জনতা তা দেখছেন। তাই মুখ্যমন্ত্ৰী এবং বিজেপি ও জোটশরিকের প্ৰতি আস্থা রেখে গুয়াহাটি পুরনাগরিকরা উন্নয়নের তাগিদে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, মহানগরের মৌলিক তথা জ্বলন্ত সমস্যাবলি সমাধান করতে নতুন মেয়র, ডেপুটি মেয়র, প্রত্যেক কাউন্সিলার আন্তরিকতার সঙ্গে প্ৰয়াস করবেন।
এদিকে পুরনিৰ্বাচনে কংগ্ৰেসের শোচনীয় ফলাফল এবং কংগ্ৰেস দুৰ্বল হয়ে পড়েছে কিনা সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে ভবেশ কলিতা বলেন, আমি ফুটবল খেলি। বিপক্ষ (বিরোধী) দল শক্তিশালী হলে খেলে ভালো লাগে। না হলে কখনও কখনও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে খেলতে হয়। লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভার পর এবার পুরনিগমে নিঃশেষ হয়ে গেছে কংগ্ৰেস। তিনি বলেন, কংগ্ৰেসে ধস নেমেছে। এই দল এখন ক্লিন আউট। নিজেদর ভুল-ত্রুটি স্বীকার করা উচিত। বিজেপির প্রদেশ সভাপতি বলেন, কংগ্ৰেসের স্থিতি হতাশাজনক৷ সংগঠন মজবুত করতে আহ্বান জানান তিনি৷ কেননা, বিরোধীশূন্য নিৰ্বাচনে মজা নেই৷ কংগ্ৰেস সভাপতির দুৰ্বল স্থিতির জন্য শতবর্ষ পুরনো দল বিন্দুমাত্র পারদৰ্শিতা প্রদর্শন করতে পারেনি বলে তাঁর কটাক্ষ, তাই স্বাভাবিকভাবেই কংগ্ৰেস এখন অচল নোট।
অসম জাতীয় পরিষদ এবং আম আদমি পাৰ্টির একটি করে আসনে জয় সম্পর্কে তিনি বা বিজেপি মোটেও চিন্তিত নয়। কেননা, ১ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীরা কোনওকালেই বিজয়ী হতে পারেননি। ওই দুই ওয়ার্ডের ভোটার কারা তা সবাই জানেন, তাই আর খোলসা করতে চাননি ভবেশ।
এআইআউডিএফ-প্রধান বদরউদ্দিন আজমল এখন বিরোধী ভূমিকা পালন করবেন, সাংবাদিকদের এই বক্তব্য শুনে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি কলিতা। অন্য এক প্ৰশ্নের উত্তরে ভবেশ বলেন, গুয়াহাটির বাস্তবতা সম্পর্কে, গুয়াহাটির নাগরিকদের ভালো করে চেনেন, এমন অভিজ্ঞ কোনও যোগ্য ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে নিৰ্বাচিত করা হবে।
এদিকে বিজয়ী অন্য দলের প্ৰাৰ্থীরা বিজেপির প্ৰতি আকৃষ্ট হতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে ভবেশ সৃকলিতা বলেন, রাজনীতিতে সবই হয়।
গুয়াহাটির উন্নয়ন সম্পর্কে ভবেশ কলিতা বলেন, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। যেমন মহানগরের ফুট অভাপব্ৰিজ, রাস্তাঘাট, পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাদির কাজ ইতিমধ্যে সরকার হাতে নিয়ে। মহানগরের দীৰ্ঘদিনের পানীয় জল সমস্যার সমাধান এবার হবে। এ ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ। মহানগরের উন্নয়নে এ সব কাজ কেবল বিজেপি মিত্ৰজোটের দ্বারাই সম্ভব। তাই-তো মহানগরবাসী বুঝেশুনে বিজেপি ও মিত্ৰজোটের পক্ষে ভোটদান করেছেন, বলে তিনি আবারও গুয়াহাটির সর্বস্তরের নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান।
বিজেপির প্রদেশ সভাপতি বলেন, আগামী দু-একদিনের মধ্যে কে মেয়র হবেন, তা জানানো হবে। এ ব্যাপারে আজই মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা, তিনি নিজে (ভবেশ কলিতা) এবং দলের অন্য শীৰ্ষ নেতৃত্ব এক বৈঠকে বসবেন। মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্ৰশ্নের জবাবে কলিতা বিষয়টি স্বীকার বলেন, তিনিও বেশি দামে বাজার থেকে সামগ্ৰী কেনাকাটা করেন। তাই এতে মানুষের যে অসুবিধা হচ্ছে তা তিনি ভালো করেই জানেন ও বুঝেন। তবে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, মূল্যবৃদ্ধি খুব শীঘ্ৰ নিম্নগামী হবে।