BRAKING NEWS

Supreme Court : জাহাঙ্গীরপুরীর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানাল স্বরাজ ইন্ডিয়া

কলকাতা, ২১ এপ্রিল (হি. স.) : জাহাঙ্গীরপুরীর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ এবং ভাঙচুরে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি করল স্বরাজ ইন্ডিয়া।

সংগঠনের তরফে অভীক সাহা বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানান, “বিগত এক পক্ষ কাল বিভিন্ন অংশে দেশ অসাংবিধানিক এবং নির্বিচারে ধ্বংস অভিযান প্রত্যক্ষ করছে। এই ধরনের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের পিছনে একটা নির্দিষ্ট ছক রয়েছে: সংঘ পরিবারের সহযোগীরা ধর্মীয় মিছিলের নামে একটা বাদানুবাদ এবং শারীরিক আক্রমণ সংগঠিত করছে (সাধারণত পুলিশের উপস্থিতিতে লাঠি, তলোয়ার এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও দিয়ে) এবং তারপর ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদের বাইরে উস্কানি দিচ্ছে। এর ফলে সংঘর্ষ হবেই জেনে বুঝেও, প্রশাসনের যোগসাজশেই এমনটা করা হচ্ছে।

সংঘর্ষের পর একতরফা গ্রেফতার এবং সম্পত্তি বুলডোজ করার মতো বিচারবহির্ভূত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই ধরনের কাজগুলি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এবং দিল্লির মতো জায়গায় যেখানে পুলিশ বিজেপি সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেখানে আরও স্পষ্ট। দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে ১৬ এপ্রিল, ২০২২-এ ঠিক এমনই একটা ঘটনা ঘটে, যখন সংঘ পরিবার সংগঠনগুলোর দ্বারা একটি অননুমোদিত হনুমান জয়ন্তী শোভা যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। এই মিছিলের ভিডিওগুলিতে দিল্লি পুলিশের উপস্থিতিতেই শটগান, তলোয়ার এবং বেসবল ব্যাট সহ ভিড় দেখা গেছে যার মধ্যে নাবালকরাও ছিল। মিছিলটা একটি মসজিদের বাইরে থামে এবং দিল্লি পুলিশের উপস্থিতিতেই সবচেয়ে খারাপ খারাপ উস্কানিমুলক ধর্মীয় স্লোগান দেয় এবং মসজিদটিকে অপবিত্র করার চেষ্টা করে। এর ফলে স্থানীয় মুসলমান এবং মিছিলকারীদের মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়ি হয়, যাতে পুলিশ কর্মী সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এতেই সন্তুষ্ট না থেকে, দিল্লির বিজেপি সভাপতি দলের অধীনে থাকা উত্তর দিল্লি এমসিডিকে “পাথর ছুঁড়িয়েদের” বিরুদ্ধে “দখলদারী বিরোধী” অভিযান চালাতে বলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও পূর্ববর্তী সমস্ত কিছুতে মৌন থেকে শুধু শোভাযাত্রায় যারা পাথর ছুঁড়েছিলেন তাদের নিন্দা করেই ক্ষান্ত থাকার পথ বেছে নিয়েছেন। ২০শে এপ্রিল, ২০২২ -এ উত্তর দিল্লি এমসিডি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে দিল্লি পুলিশের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে, এমসিডি নিয়ম, এনসিটি আইন এবং দিল্লি পুলিশের নিয়ম কানুন সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে একটা মারাত্মক ধ্বংসলীলা চালায়। এই ধ্বংসলীলা চালাবার আগে বাসিন্দাদের কোনো নোটিশ জারি করা হয়নি, এবং অনেকের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকলেও, তাদের রেহাই দেওয়া হয়নি। এই বিধ্বংসী অভিযানের ফলে বাড়িঘর, দোকানপাট, স্থানীয়দের রেহরি এবং একটা মসজিদের প্রবেশদ্বার ধ্বংস হয়। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পরেও এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাঙচুর চলতে থাকে। পুরো বিষয়টি ছিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে “একটা শিক্ষা দেওয়া” –র জন্য এবং দেখিয়ে দেওয়া যে বিজেপি এবং তার লুম্পেন বাহিনী আইনের শাসনের ঊর্ধ্বে।

দিল্লির শাসক দল আপ-এর আচরণও কম মর্মান্তিক নয়। বিধানসভার ৭০ বিধায়কের মধ্যে ৬২ জনের শক্তির ক্ষমতাসীন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টাতো করেইনি, এমনকি দলের নেতারা এগিয়ে এসে একটা হাস্যকর, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বিপজ্জনক বিবৃতি দিয়ে শহরে সন্ত্রাসের জন্য বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের দোষী সাব্যস্ত করেন, এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে আপ বিজেপির বিকল্প তো নয়ই; বরং বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী এবং বিভাজনমূলক মতাদর্শের অন্যতম আর এক স্বর।

দ্বিধাহীনভাবে স্বরাজ ইন্ডিয়া এই বুলডোজার রাজ এবং দেশকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টার নিন্দা করছে। রাজ্য সভাপতি নবনীত তিওয়ারীর নেতৃত্বে স্বরাজ ইন্ডিয়ার দিল্লি ইউনিট গতকাল ধ্বংসস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আশ্বস্ত করেছে যে স্বরাজ ইন্ডিয়া তাদের পাশে থাকবে। নবনীত তিওয়ারি আরও বলেছেন যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শ্রী আদেশ গুপ্ত, যিনি এই ধ্বংসলীলা শুরু করেছিলেন, তার বিরুদ্ধেই প্যাটেল নগরে তাঁর অফিস তৈরি করার জন্য একটি সরকারি স্কুলের জমি দখলের অভিযোগ আছে।

জাহাঙ্গীরপুরীতে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য ধ্বংস অভিযান স্থগিত করার মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের উচিত সময়মত হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানায় স্বরাজ ইন্ডিয়া। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যে আদালত আইনের শাসন পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেছিল, তাদের শাস্তি দেবে এবং বুলডোজার রাজের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট রায় দেবে।

আমরা বুঝতেই পারছি, এটা পৌরসভা এবং আদালতের বাইরে অনেক বড় লড়াই। আমরা আমাদের সভ্যতার বুনোট ছিঁড়ে ফেলার, এই দেশকে বিভক্ত করে শাসন করার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। এটা কোন আশ্চর্যের কিছু নয় যে এমন একটা সময় এই প্রচেষ্টা জোরদার করা হচ্ছে যখন ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, সর্বোচ্চ বেকারত্বের মধ্যে দিয়ে গিয়ে এবং ক্রনি পুঁজিপতিদের অদৃষ্টপূর্ব লাভের মুখোমুখি হয়ে, সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বরাজ ইন্ডিয়ার সভানেত্রী ক্রিস্টিনা সামি বলেছেন, “বিজেপি এবং সংঘ পরিবার দেশকে অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, যারা ভারত নামক আদর্শের পাশে দাঁড়াতে চায়, প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করতে তাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে। স্বরাজ ইন্ডিয়া সমস্ত নাগরিক, জন আন্দোলন, সুশীল সমাজের সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ রক্ষার জন্য একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *