কলকাতা, ৮ এপ্রিল (হি. স.) : “পাকিস্তানপ্রেমী আতঙ্কবাদীরা বাংলাদেশের মতো একটা সম্ভাবনাময় দেশকে আজ ৪৪ বছরে পাকিস্তানের চেয়েও বিদঘুটে আর ভয়ংকর দেশ বানিয়েছে।“ শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্য করে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “দেশ ভরে ফেলেছে হায়েনায়, হিংসুকে, খুনীতে। খুনীদের বিলুপ্ত করে দেশকে সভ্য করতে আমাদের আরও কতগুলো ৪৪ বছর লাগবে কে জানে।“
সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “আমি চিরকালই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। শাহবাগ আন্দোলনেও যখন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাওয়া হচ্ছিল, আমি ফাঁসির বিরুদ্ধে ছিলাম। চোখের বদলে চোখে, দাঁতের বদলে দাঁতে, জানের বদলে জানে বিশ্বাসী নই। ওরাই তো আমার সবচেয়ে বড় শত্রু, আমার সম্ভাব্য আততায়ী, তারপরও ওদের ফাঁসি চাইনি আমি। রাজিব হায়দারকে খুন করার পরও আমি সংশোধানাগারের কথা বলেছি। অপরাধীদের সংশোধানাগারে ঢোকাও, মনোবিজ্ঞানীরা জানুক কেন অপরাধ করেছে, শিক্ষিত করুক ওদের, যেন অপরাধ আর না করে, যেন ভালোমানুষ হয়ে ওঠে। ফ্রিথট ব্লগস-এ অনেকগুলো ব্লগ লিখেছিলাম মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। ফাঁসি টাসির চিন্তা বাদ দিয়ে জামাতে ইসলামী যেহেতু একটি সন্ত্রাসী দল, বরং একে নিষিদ্ধ করার জন্য আন্দোলন চলুক চেয়েছিলাম।
কিন্তু বোকো হারাম, আইসিস, আল শাবাবের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ দেখে, শত শত নিরপরাধ মানুষকে ওরা কীভাবে হাসতে হাসতে জবাই করছে, দেখে, আমার মনে হয়েছে, ওই বর্বর খুনীগুলোকে মেরে ফেলা হলে আমি অখুশী হবো না। অভিজিৎ রায় আর ওয়াশিকুর বাবুকে যেভাবে কুপিয়ে মেরেছে খুনীরা, তা দেখার পর ওই ঘৃণ্য খুনীদের মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনও শাস্তির কথা আপাতত আমি ভাবতে পারছি না।
আমি মনে করি না সন্ত্রাসীদের ফাঁসি হলে সমাজে সন্ত্রাস সম্পূর্ণ বন্ধ হবে। আমি এখনও মনে করি, ধর্ম, মৌলবাদ, সন্ত্রাস ইত্যাদি দিয়ে অল্প বয়সীদের মগজধোলাই না করলে, ওদের সুস্থ, সুন্দর মুক্তচিন্তার পরিবেশ দিলে, ওরা ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। রক্তের বদলে রক্ত – কখনও ভালো কোনও সমাধান নয়। কিন্তু রক্তের বদলে আজ রক্ত চাইছি বলে এই নয় যে মানুষকে সত্যিকারের শিক্ষিত করার বিষয়টিকে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আর মনে করছি না। যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে এই প্রথম আমি দাঁড়ালাম।“