আগরতলা, ২৪ মার্চ (হি. স.) : বিধানসভায় ১০৩২৩ চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের নিয়ে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে উল্টে বিরোধীরাই কোনঠাসা হয়েছেন। বামফ্রন্ট সরকারের একগুয়েমির জন্য আদালত ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল করে দিয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে বিরোধীদের বিধেছেন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা। আইন মন্ত্রী তথা শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ বিরোধীদের তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করে বলেন, ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিলের পাপের দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। তবে, মন্ত্রিসভায় যতদিন থাকব, তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা জারি থাকবে। আজ বিধানসভায় মৃত্যু মিছিলে আরও এক ১০৩২৩ শিক্ষিকা শীর্ষক রাজ্যের প্রভাতি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে সিপিএম বিধায়ক সুধন দাস এবং যশবীর ত্রিপুরার উল্লেখ পর্বে আনা নোটিশের জবাবে এভাবেই বিরোধীদের কোনঠাসা হয়েছেন।
এদিন আইন মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ত্রিপুরায় বাম আমলে অস্নাতক ও স্নাতক শিক্ষক পদে ১৯৯৭ সালে নিয়োগ করা হয়েছিল। এরপর ১৪ বছর বাদে ২০১৩ সালে নিয়োগ হয়েছে। তিনি জানান, ২০০২, ২০০৬ এবং ২০০৯ সালে বিজ্ঞাপন করেই শিক্ষক নিয়োগ করেনি বামফ্রন্ট সরকার। ফলে, দেশের শিক্ষার অধিকার আইন লাগু হওয়ার পর আদালতে মামলায় সমস্ত চাকুরী বাতিল হয়ে যায়।তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে ১০৩২৩ জন চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে। কিন্ত, বেআইনিভাবে কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, বর্তমান সরকার চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরীর মেয়াদ আদালতে দরবার করে দুই বছর বাড়িয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁদের সকলকে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তাঁদের বয়স ছাড় আদায় করা হয়েছে। তাছাড়াও, বিজ্ঞাপন ছাড়া তাঁদের নিযুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। ফলে, গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপ-সি পদে ৬০৯৬ জন এবং গ্রুপ-ডি পদে ২৫৪৯ জন আবেদন করেছে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই চাকুরী পাবেন বলে আইনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন।
এদিন বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য দীবা চন্দ্র রাঙ্খল বিরোধীদের নিশানা করে বলেন, শিক্ষার অধিকার আইন দেশে চালু হওয়ার আগে ওই চাকুরীগুলি দেওয়া হলে আজ তাঁদের সর্বনাশ হতো না। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিলের জন্য বামফ্রন্ট সরকারই দায়ী। অথচ, এখন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছেন, কটাক্ষের সুরে বলেন তিনি। উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনও বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেন উচ্চ আদালতের সিঙ্গল বেঞ্চে বিচারপতি বি কে শর্মার রায় মেনে মামলাকারীদের চাকুরী প্রদান করা হলে আজ এতগুলি মানুষের জীবন বিপন্ন হতো না।এ-বিষয়ে আইন মন্ত্রী বলেন, আজ চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য মায়াকান্না করছেন। অথচ, ৪০-৪৫ জন মামলাকারীদের চাকুরী দেওয়ার সময় মানবিকতা দেখাতে পারেননি। তাঁর কটাক্ষ, তখন অহংকারে এতটাই বুঁদ ছিলেন সাধারণ মানুষ এবং আদালতের কথা মানেননি। তিনি তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করে বলেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের একগুয়েমি মানসিকতার কারণে ১০৩২৩ জন শিক্ষকদের জীবন বিপন্ন হয়েছে। ওই পাপের দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। তিনি জানান, ওই চাকুরী কেলেঙ্কারির তদন্তে কমিশনের রিপোর্ট শীঘ্রই ত্রিপুরা সরকারের কাছে জমা পরবে।