কলকাতা, ২১ ডিসেম্বর (হি.স.): চতুর্থ ভারতীয় গণিতজ্ঞ হিসেবে এবার রামানুজন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কলকাতার মেয়ে অধ্যাপিকা নীনা গুপ্ত। উন্নয়নশীল দেশের তরুণ গণিতজ্ঞদের জন্য প্রতি বছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। গণিতের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত নীনা জানিয়েছেন, “গণিতের এখনও এমন অনেক সমস্যা রয়েছে, যা সমাধান করা বাকি।” উন্নয়নশীল দেশ থেকে তরুণ গণিতজ্ঞ হিসেবে নীনা ২০২১ সালের রামানুজন পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর ‘অ্যাফাইন অ্যালজেব্রিক জিওমেট্রি’ এবং ‘কমিউটেটিভ অ্যালজেব্রা’য় দৃষ্টান্তমূলক কাজের জন্য। রামানুজন পুরস্কার পাওয়া তিনি তৃতীয় ভারতীয় মহিলা। গাণিতিক গবেষণায় নব দিগন্ত উন্মোচনের জন্য ৪৫ বছরের কম বয়সীদের রামানুজন পুরস্কার দেওয়া হয়।
বহুভাষী সংবাদ সংস্থা ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় নীনা বলেছেন, “এই পুরস্কার পেয়ে আমি অবশ্যই ভীষণ খুশি। ভালো কথা হল ভারতে গণিতের ক্ষেত্রে যে চমৎকার গবেষণার কাজ হচ্ছে তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাচ্ছে। তবে, অনেক কাজ করতে হবে। গণিতের ক্ষেত্রে এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে, যার সমাধান আবশ্যিক এবং লাগাতার কাজ করতে হবে।” নীনা বলেছেন, এই পুরস্কার তাঁকে গণিতের ক্ষেত্রে আরও প্রচুর গবেষণা এবং কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর কথায়, “গণিতের একজন গবেষক হিসাবে, আমি মনে করি সমগ্র বিশ্বে গণিতবিদদের দ্বারা সমাধান করা অনেক গাণিতিক সমস্যা রয়েছে। রামানুজন পুরস্কারের নামকরণ করা হয়েছে ভারতের মহান গণিতবিদ “শ্রীনিবাস রামানুজন আয়েঙ্গার”-এর নামে, এ জন্য সমস্যার দ্রুত সমাধানের ক্ষেত্রে ভারতের গণিতবিদদের দায়িত্বও বেশি।” নীনা গুপ্ত জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যে চার জন রামানুজন পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের তিন জনই আইএসআই-এর অধ্যাপক।
অতীতেও অনেক পুরস্কার জিতেছেন নীনা গুপ্ত
২০১৯ সালে শান্তি স্বরূপ ভাটনগর প্রাইজ ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন নীনা গুপ্ত। বীজগণিত জ্যামিতির ক্ষেত্রে “জারিস্কি বাতিল সমস্যা” সমাধানের জন্য জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি কর্তৃক তিনি তরুণ বিজ্ঞানী পুরস্কারে ভূষিত হন। অ্যাকাডেমি তাঁর দ্বারা সমাধান করা প্রশ্নটিকে “সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বীজগণিত জ্যামিতির সেরা কাজ” হিসাবে বর্ণনা করেছে। এই কঠিন প্রশ্নটি ১৯৪৯ সালে অস্কার জারিস্কি প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি আধুনিক বীজগণিত জ্যামিতির অন্যতম বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবেচিত হন।
কলকাতায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা নীনার
নীনা গুপ্ত জানিয়েছেন, তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এখানেই বড় হয়ে ওঠেন। ডানলপের খালসা হাইস্কুলের প্রাক্তনী নীনা ছেলেবেলা থেকেই অঙ্কের পোকা। বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তাঁর গন্থব্য ছিল বরাহনগর আইএসআই। স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি করার পর আইএসআই-তেই অধ্যাপনা শুরু। এখন তিনি এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপিকা। নীনা গুপ্ত বলেছেন, গণিতকে মানুষ কঠিন মনে করেন, কিন্তু ততটাও কঠিন নয়।
নীনা জানান, তাঁর বাবা মূলত রাজস্থান থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি ভারতীয় জীবন বীমা নিগমে বিকাশকারী হিসাবে কাজ করতেন। এখন অবসর নিয়েছেন। নীনা কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করেছেন। গণিতের ক্ষেত্রে গবেষণায় মেয়েদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে নীনা বলেন, মেয়েদের মেধার কোনও অভাব নেই। তাঁর এই প্রাপ্তিতে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশই গর্বিত।