আগরতলা, ১৬ ডিসেম্বর (হি. স.) : গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের ডাক দিয়ে জনজাতিদের মধ্যে ঐক্য চাইছিলেন তিপরা মথার সুপ্রিমো তথা এমডিসি প্রদ্যুত কিশোর দেব্বর্মন। সেই স্বপ্নে বিভোর এডিসি এলাকার ভোটাররা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দু-হাত উজাড় করে সমর্থন দিয়েছেন তাঁকে। কিন্ত, মোহ হয়তো কাটতে শুরু করেছে। ফলে, সংঘাত চরমে গিয়ে ঠেকেছে। আজ এডিসি সদর খুমুলুঙ-এ অনৈক্যের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিপরা মথা এবং টিপিএফ-র মধ্যে সংঘাতে বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হয়েছেন। দুইটি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ, টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, জনরোষ থামাতে গিয়ে ক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন প্রদ্যুত কিশোর দেব্বর্মন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল, তাঁকে কেঁদে ভাসাতে হয়েছে। আজকের ঘটনা স্বাভাবিকভাবে গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের স্বপ্নকে চুড়মার করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, দলের উপর প্রদ্যুতের নিয়ন্ত্রণ নেই তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্রের খবর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপনের জন্য খুমুলুঙ-এ অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়েছিল ত্রিপুরা পিপলস ফ্রন্ট(টিপিএফ)। কিন্ত, পুলিশ তাঁদের অনুমতি দেয়নি। ফলে, পরবর্তী সময়ে এডিসি প্রশাসনের কাছে খুমুলুঙের খুম্পুই ময়দানে অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়েছিল। সেই অনুমতি টিপিএফ পেয়েছিল। কিন্ত, গতকাল রাতে সেই অনুমতি বাতিল করে দেয়। তাই তারা আজ খুম্পুই ময়দানে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেই। তখন তিপরা মথার কর্মীরা গিয়ে টিপিএফ-র কর্মীদের মারধর করেছে। তাতেই, পরিস্থিতি রনংদেহী রূপ নিয়ে নেয়। কারণ, টিপিএফ কর্মীরা পাল্টা মারধর করেছে বলে অভিযোগ।
ওই ঘটনার রেশ মুহুর্তের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। টিপিএফ সমর্থকরা বিশাল সংখ্যায় রেলি নিয়ে খুম্পুই ময়দানে হাজির হন। তাঁরা সকলেই প্রদ্যুত কিশোর দেব্বর্মনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছেন। তাতে, তিপরা মথার কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং সংঘর্ষ বেঁধে যায়। উত্তেজিত টিপিএফ কর্মীরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দুইটি গাড়ি ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশাল পুলিশ, টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্ত, পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে যখন প্রদ্যুত কিশোর ঘটনাস্থলে এসে পৌছান। তাঁকে দেখে টিপিএফ কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং শ্লোগান দিতে থাকেন। একজন কর্মী উত্তেজিত হয়ে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন। তখন প্রদ্যুত কিশোরও তার দিকে তেড়ে যান। তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কারণ, পরিস্থিতি দেখে প্রদ্যুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
কিছুটা সময় যাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলে প্রদ্যুত সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তাতেই, ফুটে উঠেছে তিপরা মথা দল পরিচালনায় তাঁর ব্যর্থতার চিত্র। শুধু তাই নয়, জনজাতিদের মধ্যে ঐক্যের ডাক কার্যত ফানুসে পরিণত হচ্ছে, নিজের চোখে দেখে হয়ত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। রাজনীতির কঠিন অভিজ্ঞতা আজ প্রদ্যুতকে আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল। ফলে, তাঁকে ভাষণ দেওয়ার সময় কেঁদে ভাসাতে দেখা গিয়েছিল।
তাঁর সাফ কথা, শান্তি রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে একজোট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অশান্তি ছড়ানোর দায়ে প্রয়োজনে তিপরা মথার কর্মীর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ প্রদ্যুত টের পেয়েছেন, গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যাওয়ার দিকেই এগিয়ে চলেছে। কারণ, জনজাতিদের রোষের মুখে পড়ে প্রদ্যুতকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে বলেই মনে হচ্ছে। এডিসি নির্বাচনে সাফল্যে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর প্রদ্যুত কিশোর এখন জনজাতিদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চিন্তায় পরবেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।