ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের নারকীয় হত্যালীলায় ক্ষোভে ফুঁসছে সমগ্র দেশ। দেশবাসীর ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক। মাওবাদীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে দেশের সুরক্ষা বাহিনীর ২২ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। এনকাউন্টারস্থলে মৃত জওয়ানদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে প্রত্যেকটি ভারতবাসীর কান্নায় বুক ফেটেছে। ছত্তিশগড়ে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এই মাওবাদী হামলা সবথেকে বড় ও ভয়ানক। মাওবাদীদের এই হামলাকে পাশবিক আখ্যা দিলেও কম বলা হবে। গত কয়েক দশকে পঞ্জাব, অসম, উত্তর-পূর্ব ভারতে হিংসাত্মক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার সাক্ষী থেকেছে দেশ, হিংসাত্মক হামলাকে পদদলিত করেছে দেশ। কিন্তু, মাওবাদীদের কেন সমূলে বিনাশ করা সম্ভব হচ্ছে না? দেশ শাসনের সঙ্কল্পে কোথাও কী কোনও খামতি রয়েছে? আগে এই কথা সঠিক হলেও, বর্তমানে তা মোটেও সঠিক নয়। যাইহোক সুরক্ষা সংস্থাগুলিকে পুনরায় নিজেদের রণনীতি বিচার করতে হবে। এমন রণনীতি তৈরি করতে হবে যাতে মাওবাদকে সমূলে বিনাশ করা যায়। রণনীতি এমন হওয়া দরকার যাতে যত দ্রুত সম্ভব মাওবাদীদের খতম করে দিতে হবে। এখন তো মনে হচ্ছে ছত্তিশগড় অথবা অন্য কোনও রাজ্যে মাওবাদীরা আর বাঁচতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, শহিদ জওয়ানদের মৃত্যু বিফলে যাবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এই একই কথা বলেছেন। মাওবাদীরাই বলুক, তাঁদের কোন বইতে লেখা রয়েছে নিরপরাধ জওয়ানদের হত্যা করতে হবে? এটাই যদি মাকর্সবাদের ভাষা হয়, তাহলে আমাদের সেনা ও আধা সেনা তাদের নাস্তানাবুদ করতে সক্ষম। নিজেদের মৃত্যুর জন্য তাহলে প্রস্তুত হয়ে যাও।
প্রাপ্য তথ্য অনুযায়ী, বিজাপুরের মাওবাদী হামলা সামান্য মোটেও নয়। সুরক্ষা বাহিনীর কাছে ২০ দিন আগেই কুখ্যাত মাওবাদী নেতা হিডমা ও তার দলের সম্পর্কে খবর ছিল। মনে করুন, ২০১০ সালে বিস্তারে ৭৬ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত ডিজি রামমোহনের দ্বারা তদন্তে জানা গিয়েছে, সুরক্ষা বাহিনীর একটি ওয়ারলেস সেট মাওবাদীদের কাছে ছিল এবং সেই সেটের মাধ্যমেই সুরক্ষা বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে জানতে পেরেছিল মাওবাদীরা। ওই সময় বাহিনীর নেতৃত্বে যে ডিআইজি, সিআরপিএফ-এর কাছে ছিল, তিনিই বর্তমানে ওই এলাকার আইজি বলা হচ্ছে। এত বড় ভুল সত্ত্বেও সিআরপিএফ-এর ওই অফিসারের পদোন্নতি হয়েছিল এবং পুনরায় ওই এলাকায় ভাল করা হয়। ফেরার সময় বাহিনীর সর্বশেষ দলে হামলা চালানো হয়, ওই অভিযানের পরিকল্পনা কে করেছিল? কেন ক্যাম্পে ব্যাকআপ ফোর্স প্রস্তুত ছিল না? কেন আমরা ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত আমাদের শহিদদের মৃতদেহ এবং আটকে পড়া জওয়ানদের উদ্ধার করতে পারিনি? অথচ মাওবাদীদের আগে থেকেই ট্রাক্টর প্রস্তুত রেখেছিল। তাদের সঙ্গে ১২০০ জন মানুষ উপস্থিত ছিল। কিন্তু, অভিযানের নেতৃত্বে যে রয়েছে,তাঁর কাছে আগে থেকে কেন খবর পৌঁছয়নি? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।
কে এই হিডমা
২২ জওয়ানের প্রাণ কেড়েছে তার দল, কে এই মাওবাদী নেতা হিডমা, তার সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক। কমান্ডার হিডমা নিজেকে আদিবাসীদের মহীরুহ মনে করে। পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির ১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের প্রধান এই হিডমা। তার বয়স ৪০ বছর মতো। ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলার জনজাতি অধ্যুষিত পুবর্তী গ্রামের বাসিন্দা সে। নয়ের দশকে সে যোগ দেয় মাওবাদীদের সঙ্গে। মাওবাদী ব্যাটেলিয়নের প্রধান হিসাবে মহিলা-সহ প্রায় ১৮০ থেকে ২৫০ জনের দলকে নেতৃত্ব দেয় সে। মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য বিশেষ আঞ্চলিক কমিটিরও সদস্য সে। ২০১৭ সালে সুকমা হামলার ষড়যন্ত্রকারী ছিল সে। এই হিডমা ও তার ৪০ ক্যাডার সুকমা-বিজাপুর সীমানার জোনাগুড়া পাহাড়ের জঙ্গলে সিআরপিএফ জওয়ানদের তিন-দিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল। এখন প্রশ্ন হল, এখনও পর্যন্ত হিডমার নাগাল কেন পেল না সুরক্ষা বাহিনী। ছত্তিশগড় পুলিশের একজন সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, “হিডমা ভীষণ চালাক। সে নিজের আশেপাশে অনেক ঘর বানিয়েছে। ২০০ ক্যাডার তার আশেপাশে থাকে। অধিকাংশই তার ছোটবেলার বন্ধু।
অহিংসা আন্দোলন করুক মাওবাদীরা
মাওবাদীরা যদি মনে করেন তাঁদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, তাহলে গণতান্ত্রিক উপায়ে অহিংসা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি রাখতেই পারেন। কিন্তু, মাওবাদীরা যদি গণতান্ত্রিক পথে চলতে না চায়, তাহলে তাদের তো বিনাশ করতেই হবে। মাওবাদীরা কী ক্ষমতার লোভে এই কাজ করছে? তাহলে সর্বাগ্রে নিজেদের পেন্টের বেল্ট বাঁধা তো শিখুক। ভারতের রাজসত্তার অর্থ ভালোভাবে তাদের বুঝতে হবে। মাওবাদীরা এটা জানে না তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামা কয়েক দশক ধরে ভারতে রয়েছেন এবং মাওবাদীদের আকা চিন রাগে ফুঁসছে। এই রাজসত্তার সঙ্গে মাওবাদীরা কী টক্কর নেবে। তারা প্রকাশ্যে লুট, দাদাগিরি, জুলুমবাজি করে। এটাই তাদের মাওবাদ।
মাওবাদীদের সম্পর্কে গোটা দেশের একটাই মানসিকতা, এবার মাওবাদকে সমূলে বিনাশ করতে হবে। এরা দেশের শত্রু। যত দ্রুত সম্ভব মাওবাদীদের খতম করলে দেশেরই ভালো হবে। সবশেষে একটি প্রশ্ন করতে চাইছি, চিন, রাশিয়া অথবা পুঁজিবাদী আমেরিকা কিংবা জাপানের মতো পুঁজিবাদী গণতন্ত্রগুলিতেও কি কমিউনিস্ট মাওবাদীরা তাদের রক্তাক্ত খেলা খেলতে পারবে? না তো? তাহলে ভারতে কেন এমনটা করতে পারছে? তবে মোদীজির শাসনে এটা কখনও সম্ভব নয়।
(লেখক রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ)