নিজস্ব প্রতিনিধি, কল্যাণপুর, ১২ ডিসেম্বর৷৷ রাজ্যে দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম জমানায় অনেক তরতাজা প্রাণ বলিদানের পর আমরা রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি-কল্যাণপুরের সোনার তরী মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত ২৫ তম বর্ষের শহীদান দিবসের স্মরণ সভায় উপস্থিত হয়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন ত্রিপুরা সরকারের তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী৷ উল্লেখ্য, বিগত ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে ঘটে যাওয়া সেই বিভীষিকা’’ময় গভীর রাতের কথা মনে পড়লে আজও কেঁপে উঠে কল্যাণপুর বাসীর বুক৷ যেন পা’’ চলা অনেকটাই থমকে যায়৷ তৎকালীন সময়ে রাজ্য সিংহাসনের মসনদে আসীন সিপিএমের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের অতর্কিত হানা সংগঠিত হয় কল্যানপুর বাজার কলোনী গ্রামে গভীর রাতে৷
আর এই বাম মদতপুষ্ট জঙ্গি হানায় বন্দুকের গুলির আওয়াজে স্তব্ধ হয়ে উঠে আকাশ বাতাস৷ নিমেষের মধ্যেই থমকে যায় গোটা কল্যাণপুর এলাকা৷ জঙ্গিদের বন্দুকের নৃশংস গুলির আঘাতে নব-জাতক শিশু থেকে মহিলা সহ মোট ২৪ টি নিরীহ তরতাজা প্রাণ’’কে নৃশংস ভাবে গণহত্যা করা হয়৷ রক্তে লাল হয়ে যায় কল্যানপুর বাজার কলোনি এলাকার অলি গলি পথ৷ ভারী হয়ে উঠে প্রকৃতির বাতাস৷ শুধু তাই নয়, ঘর বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়৷ যার ফলে অনেক গৃহ পালিত পশু পাখির মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে৷ আর এই নারকীয় ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছেন, যার কোন হিসেব করা খাতায়-কলমে সম্ভবপর হবে না৷
সেই বিভীষিকাময় কালো দিনটির ২৫ তম বর্ষে আজ রবিবার ১২ ডিসেম্বর কল্যাণপুর বিজেপি মন্ডলের উদ্যোগে এক শহীদান দিবস ও স্মরণ সভার সমাবেশের আয়োজন করা হয় বিকাল ৩ টা নাগাদ কল্যাণপুরের সোনার-তরী মুক্ত মঞ্চে৷ উক্ত এই এই শহীদান স্মরণ সভার সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা সরকারের তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, ২৭-কল্যাণপুর প্রমোদনগরের বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী, কল্যাণপুর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন সৌমেন গোপ, সমাবেশের সভাপতি বিষ্ণু দেব, বিজেপি’’র রাজ্য কমিটির সদস্য হরি শংকর পাল এবং বিজেপি’’র খোয়াই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহ আরও অন্যান্য নেতৃত্বরা৷
প্রথমেই মঞ্চে উপবিষ্ট সকলকে পুষ্পস্তবক ও রিশাপড়িয়ে বরণ করে নেওয়া হয়৷ পরবর্তীতে তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সহ আরও অন্যান্য নেতৃত্বরা একে একে শহীদান স্মরণ সভার সন্নিকটে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে শহীদদের প্রতি ফুল ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন৷ তৎসঙ্গে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি শীতবস্ত্র চাঁদর দিয়ে শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা জ্ঞাপন করেন৷ এইদিকে কল্যাণপুরের মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত ২৫ তম বর্ষের শহীদান দিবসের স্মরণ সভার সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরা সরকারের তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন–
’আমাদের ভারতীয় জনতা পার্টি একটি গণতান্ত্রিক সরকার৷ মানুষের সরকার৷আমরা রাজ্যে আইনের সঠিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি৷ এছাড়াও তিনি আরো বলেন, তৎকালীন বাম আমলে গোটা রাজ্যেই সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ কায়েম করে রেখেছিল ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি’’র সরকার৷ আর যদি বিগত ২০১৮ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে পালা বদল না হতো, যদি ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ত্রিপুরা রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত না হতো তাহলে আজ গোটা রাজ্যেই রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিতো ’ঙ্খঞ্ঝজ্জঞ্চ’ দল৷ এছাড়াও তিনি আজ এই শহীদান দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বর্তমান মহামারী করোণা’’র জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে বিনা মূল্যে সকল সাধারণের জন্য টিকাকরণের প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন’৷
এই দিকে কল্যাণপুরের মুক্ত মঞ্চে আজকের এই শহীদান স্মরণ সভার সমাবেশে সাধারণ জনগণ কল্যাণপুর-বাসীর উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষণীয়ঃ যা অনেকটাই চোখে পড়ার মতো৷ মূলতঃ বলা চলে, আজ রবিবার জন-শ্রুতের জোয়ারে ভেসে চলেছে কল্যাণপুরের সোনার-তরী মুক্ত মঞ্চ সহ গোটা এলাকা৷ তবে এই নাটকীয় ঘটনায় স্বজন-হারাদের আর্তনাদে আজও কেঁপে উঠেছিল গোটা কল্যাণপুর বাসীর মন৷ যা মূলতঃ আজ পর্যন্ত কেউ ভুলতে পারে নি সেই অভিশপ্ত দিনের কথা৷
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশে আটক দুই ভারতীয় যুবককে রবিবার কৈলাশহর মনু কাস্টম ল্যান্ড ইমিগ্রেশন ও মহকুমা প্রশাসকের উপস্থিতিতে বিএসএফ এর হাতে অর্পণ করল বাংলাদেশ৷ দেশ ফেরত দুই যুবকের নাম রাজীব দেববর্মা ও গুরুপদ্ম দেববর্মা৷ বাড়ি খোয়াই জেলায়৷ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, কৈলাশহর মহকুমা শাসক শান্তি রঞ্জন চাকমা, এসডিপিও ডক্টর চন্দন সাহা, খোয়াই এস ডিপিও রাজীব সূত্রধর সহ প্রচুর সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে এদিন সেখানে৷ দেশে ফেরত আসার পর তাদের দেখে আত্মীয়-স্বজন ও তাদের সহধর্মিণীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ উল্লেখ্য এই দুই যুবক বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কারাগারে দীর্ঘদিন আটক ছিল৷

