হাফলং (অসম), ৭ ডিসেম্বর (হি.স.) : তিন ব্যক্তিকে খুনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (ডিএনএলএ) নামের উগ্রপন্থী সংগঠনের স্বঘোষিত ডেপুটি সিএনসি প্রীতমজিৎ জিডুং সহ মোট পাঁচ ডিএনএলএ সদস্যকে। ডিমা হাসাও জেলার মহকুমা সদর মাইবাঙে অবস্থিত ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের ডেজিগনেটেড ক্যাম্পে এই পাঁচ সদস্য দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার পর ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের ৪৬ জন সদস্যের আস্তানা ছিল মাইবাঙের মানিগিপুর ডেজিগনেটেড ক্যাম্প। কিন্তু অস্ত্রবিরতিতে এসে গ্রাউন্ডরুল ভঙ্গ করে খুনের মামলায় জড়িয়ে এবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে জঙ্গি সংগঠনটি। রবিবার রাতে লাংটিং থেকে ছয় গ্রামবাসীকে তুলে এনে তাদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালায় ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা।
ডিমা হাসাও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রনীল বরুয়া ঘটনা সম্পর্কে জানান, রবিবার রাত প্রায় ১২টা নাগাদ ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের ডেপুটি সিএনসি সহ মোট পাঁচ জনের একটি দল তাদের ডেজিগনেটেড ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে লাংটিং থেকে ছয় ব্যক্তিকে গাড়িতে করে তুলে এন অমানবিক অত্যাচার চালায়। লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড মারপিট করে তারা। মারের চোটে দুই নিরীহ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটার পাশাপাশি বাকি চার ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রনীল বরুয়া বলেন, খবর পেয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি মাইবাং মানিগিপুর ডেজিগনেটেড ক্যাম্পে গিয়ে মৃত দুই ব্যক্তির মৃতদেহ বাথরুম থেকে উদ্ধার করার পাশাপাশি গুরুতরভাবে জখম চারজনকে উদ্ধার করেন। তবে সে সময় ডিএনএলএ ডেজিগনেটেড ক্যাম্পের অন্য আরেকটি রুম থেকে গুরুতরভাবে আহত আরও পাঁচ ডিএনএলএ সদস্যকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য তাদের হাফলং সিভিল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, জখম পাঁচ ডিএনএলএ সদস্যের মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে হাফলং সিভিল হাসপাতালে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের ডেপুটি সিএনসি সহ মোট পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এরা ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের ডেপুটি সিএনসি প্রীতমজিৎ জিডুং ওরফে গালাও এবং চার সদস্য যথাক্রমে জুদিনান হাফলংবার ওরফে আমেরিকা, ডিফলজিং লাংথাসা ওরফে দাওরাজা, নবজিৎ ফংলো ওরফে নাগাহোজা এবং নতুনজয় নুনিসাকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশি জেরায় এই পাঁচ অভিযুক্ত হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আজ বিকেলে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ ডিএনএলএ সদস্যকে হাফলং সিজেএম কোর্টে তোলা হয়েছে।
এদিকে অন্য একসূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাইবাং মানিগিপুর ডেজিগনেটেড ক্যাম্প থেকে পাঁচ ডিএনএলএ সদস্য পালিয়ে গিয়েছিল। তার পর এদের ধরে ক্যাম্পে আনা হয়। অমানবিক অত্যাচার চালিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ক্যাম্পের একটি কোঠায় বন্ধ করে রেখে দিয়েছিল। তবে সোমবার গুরুতর জখম সদস্যদের উদ্ধার করে পুলিশ।
ডিএনএলএ জঙ্গিদের প্রচণ্ড মারপিটে গতকাল যে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে তাদের রামসেন লাংথাসা, বিমল গোস্বামী এবং আজ মঙ্গলবার সকালে হাফলং সরকারি হাসপাতালে নিহতকে ডিএনএল সদস্য অপরাথ লাংথাসা বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর ভাবে আহত হয়ে হাফলং সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মন্দেশ লাংথাসা (৩৪), রমেশ হাগজার (৪২) রাজু আরদাও (১৮) অবিনাশ থাওসেন (১৮), নিরিংদাও বাটারি (১৯), জমুনাসিং হাসনু (২৬), জয়প্রজিত নুনিসা (২২) এবং দেপোলাল ডিব্রাগেডে।
এদিকে ডিমাসাদের সর্বোচ্চ সংগঠন জাদিখে নাইশো হসম ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের আমানবিক এই কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। নিরীহ গ্রামবাসীকে তুলে এনে এভাবে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনা দুঃখজনক এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছে জাদিখে নাইশো হসম। তথাকথিত ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠন যাতে গ্রাউন্ডরুল মেনে চলে তার জন্য সরকার তথা জেলার সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসনকে তীক্ষ্ণ নজর রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠন।
অন্যদিকে লাংটিং থেকে যে ছয় নিরীহ গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে এসে ডিএনএলএ জঙ্গিরা অমানবিক অত্যাচার চালিয়ে দুজনকে হত্যা করেছে, এর প্রতিবাদে লাংটিং এলাকার সাধারণ মানুষ এক প্রতিবাদী মিছিল বের করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছে।