Trinamool : ২২ বছরে ভোটের হার ধরে রাখতে ব্যর্থ তৃণমূল, ত্রিপুরায় তৃতীয় স্থানে ঘাসফুল, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ নভেম্বর৷৷ ত্রিপুরায় ২২ বছরে ভোটের হার ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ এখন শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে৷ অতীতের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথের দাবি, ১৯৯৯ সালে ত্রিপুরায় তৃণমূলের আবির্ভাব হয়েছিল৷ ২২ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে প্রয়াত সুধীররঞ্জন মজুমদার ২৬.৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন৷ সেই ভোটের হার বাড়ানোর বদলে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল৷ আজ সেই ভোট নেমে এসেছে ১৬.৩৯ শতাংশে৷ অথচ, তাঁরা মাত্র তিন মাসে শূন্য থেকে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছেছে বলে দাবি করছেন৷ সাথে তিনি সন্ত্রাস ইস্যুতে বিরোধীদের একহাত নিয়েছেন৷ পুরনো তথ্য তুলে ধরে রতনলালের দাবি, ২০১৫ সালে পুর ও নগর সংস্থার নির্বাচনে ছাপ্পা ভোট, রিগিং, দাদন বিলি থেকে শুরু করে মন্ত্রী-বিধায়কদের বিরুদ্ধে ভোট সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে৷ অথচ, এবার শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পর্বকে সন্ত্রাসে জীর্ণ বলে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে৷


এদিন সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আইন ও শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পুর ও নগর সংস্থার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে৷ শুধু তা-ই নয়, এবারের ভোটে সন্ত্রাসের ভয়াবহতা অতীতে কখনও দেখা যায়নি বলেও শাসক দল ও ত্রিপুরা সরকারকে বিঁধেছেন বিরোধীরা৷ তাই, আজ পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার তাগিদ অনুভব হয়েছে৷ তিনি বলেন, ২০১৫ সালে পুর ও নগর সংস্থার নির্বাচনে খোয়াইয়ে সন্ত্রাসের প্রতিবাদে কংগ্রেস ভোট বয়কট করেছিল৷ প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিলেন৷ শুধু তা-ই নয়, সোনামুড়ায় বুথ জ্যাম, ছাপ্পা ভোটের অজস্র অভিযোগ রয়েছে৷ তিনি বলেন, এত সন্ত্রাস সত্ত্বেও অতীতে আজকের মতো পরিস্থিতি দেখেননি কেউ, ভাবতে অবাক লাগছে৷
তাঁর দাবি, এবার পুর ও নগর সংস্থা নির্বাচনের মতো শান্তিপূর্ণ ভোট অতীতে কেউ দেখেননি৷ ২০১৫ সালে ভোটের প্রাক্কালে গুলি চলেছে৷ সমাজদ্রোহীদের হাতে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন৷ শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস মানুষ ভুলে গেছেন, এমনটা মনে করার অবকাশ আছে বলে মনে হচ্ছে না৷


এদিন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোটের হার নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এক হাত নিয়েছেন তিনি৷ শিক্ষা ও আইনমন্ত্রী বলেন, তিন মাসে সদ্যোজাত দল সারা রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে বলে তৃণমূল কংগ্রেস প্রচার করছে৷ অথচ, ২২ বছর আগে ত্রিপুরায় তৃণমূলের আবির্ভাব হয়েছিল, এ কথা হয়ত আজকের প্রজন্মের অনেকেই জানেন না৷ তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনে ভোটে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রয়াত সুধীররঞ্জন মজুমদার ২৬.৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন৷ শুধু তা-ই নয়, ২০০৪ সালে অমল মল্লিক ৯.৬১ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে রতন চক্রবর্তী তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ১০.৯৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন৷ এছাড়াও বিধানসভা উপ-নির্বাচনেও ত্রিপুরায় তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে৷


মন্ত্রী নাথের কটাক্ষ, ২২ বছর আগেকার ভোটের হার তৃণমূল আজ ধরে রাখতে পারেনি৷ বরং ভোটের হার নেমে এসেছে ১৬.৩৯ শতাংশে৷ এ-বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, পুর ও নগর সংস্থার নির্বাচনে সারা রাজ্যে বিজেপি ৫৯.০১ শতাংশ, সিপিএম ১৮.১৩ শতাংশ, তৃণমূল কংগ্রেস ১৬.৩৯ শতাংশ, কংগ্রেস ২.০৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সিপিএম তৃণমূলের থেকে বেশি ভোট পেয়েছে৷ তাঁর কথায়, তৃণমূল কংগ্রেস পুর নিগম নির্বাচনে সিপিএমের থেকে বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরা কৌশলে সারা রাজ্যে যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তার সম্পূর্ণ তথ্য জানানোর বদলে সত্য গোপন করছেন৷


তিনি বলেন, ধর্মনগরে বিজেপি ৬৭.৯৮ শতাংশ, সিপিএম ২০.২৭ শতাংশ এবং তৃণমূল মাত্র ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ কৈলাসহরে বিজেপি ৫৫.৯৯ শতাংশ, সিপিএম ২৮.৮ শতাংশ এবং তৃণমূল মাত্র ০.৭২ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ কুমারঘাটে বিজেপি ৬৭.৭১ শতাংশ, সিপিএম ৩০.৫৩ শতাংশ এবং তৃণমূল মাত্র ১.৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ তবে, আমবাসা, তেলিয়ামুড়া এবং আগরতলায় তৃণমূল সিপিএমের থেকে বেশি ভোট পেয়েছে৷ তিনি জানান, আমবাসায় বিজেপি ৪৫.০২ শতাংশ, সিপিএম ২২.৭৮ শতাংশ এবং তৃণমূল কংগ্রেস ২৭.৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ তেলিয়ামুড়ায় বিজেপি ৫৩.৫৭ শতাংশ, সিপিএম ১৭.৩৭ শতাংশ এবং তৃণমূল কংগ্রেস ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ আগরতলায় বিজেপি ৫৭.৩৯ শতাংশ, সিপিএম ১৬.০৩ শতাংশ এবং তৃণমূল কংগ্রেস ২০.১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, সোনামুড়া, বিলোনিয়ায়ও সিপিএম তৃণমূল থেকে বেশি ভোট পেয়েছে৷