TTAADC : নতুন নিয়োগ নীতি আনবে এডিসি প্রশাসন, প্রশাসনিক জটিলতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ নভেম্বর৷৷ নতুন নিয়োগ নীতি আনতে চলেছে ত্রিপুরা জনজাতি এলাকা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ(টিটিএএডিসি)৷ জনজাতিদের জন্য ১০০ শতাংশ নিয়োগ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই নতুন নিয়োগ নীতি আনবে এডিসি প্রশাসন, এমনটাই জানালেন মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়া৷ সাথে তিনি জানিয়েছেন, এডিসি-র মহিলা কর্মচারীদের জন্য ১ বছর সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, নতুন নিয়োগ নীতি এবং মহিলা কর্মচারীদের ১ বছর মাতৃত্বকালীন ছুটির সিদ্ধান্ত কার্যকরে প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এডিসির চেয়ারম্যান জগদীশ দেববর্মার কথায়, সাংবিধানিক অধিকার মেনেই নতুন নীতি আনা হচ্ছে এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রেও সংবিধানের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এডিসির প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য রাধাচরণ দেববর্মার কথায়, সংবিধানে ১০০ শতাংশ সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে, এমনটা জানা নেই৷


আজ পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়া বলেন, এডিসি গঠনে ৩৭ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে৷ অথচ, সুষ্ঠ নিয়োগ নীতি এখনো প্রণয়ন হয়নি৷ তাঁর দাবি, এডিসি প্রশাসনে জনজাতিদের চাকুরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত৷ কিন্ত, রাজ্যের জনসংখ্যার গড় হিসেবে ৬৯ শতাংশ অ-জনজাতি কর্মচারী এডিসি প্রশাসনে কর্মরত রয়েছেন৷ তাঁর সাফ কথা, আমরা চাই আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক৷ সেক্ষেত্রে সংবিধান আমাদের সুযোগ দিয়েছে৷ তাঁর দাবি, সাংবিধানিক নিয়ম মেনেই নতুন নিয়োগ নীতি প্রণয়নে সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ সে মোতাবেক খসড়া তৈরী করেছে প্রশাসন৷ আগামী এডিসি অধিবেশনেই নতুন নিয়োগ নীতির বিল পেশ করা হবে৷ সেখানে ওই বিল পাশ হওয়ার পর ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা এবং রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে৷


এদিন তিনি আরও দাবি করেন, এডিসি প্রশাসনে কর্মরত মহিলা কর্মচারীদের ১ বছর সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এ-বিষয়েও পরিষদীয় অনুমোদনের ভিত্তিতেই ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে৷ তবে, ওই সিদ্ধান্তও নতুন নিয়োগ নীতির অন্তর্গত থাকবে৷ ফলে, পরোক্ষে ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণেও ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা এবং রাজ্যপালের অনুমোদন প্রয়োজন হবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে৷
এডিসি প্রশাসনিক সুত্রে দাবি, স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ গঠন হওয়ার পর থেকে নিজস্ব নিয়োগ নীতি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মোটামুটি অনুসরণ করা হয়েছে৷ কিন্ত, এরপর থেকে ত্রিপুরা সরকারের নিয়োগ নীতি অনুসারেই কর্মচারী নিয়োগ এবং তাঁদের ডেপুটেশনে পাঠানো সহ যাবতীয় সমস্ত কিছুই কার্যকর হয়েছে৷ ১৯৯৩ সালে এমনই নিয়োগ নীতি তৈরী করে ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা এবং রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্ত, সেই ফাইল এখনো হিমঘরেই পড়ে রয়েছে৷ সূত্রের কথায়, এডিসি ত্রিপুরা সরকারের অর্থানুকুল্যে পরিচালিত হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ হলেই অধিকারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷


নতুন নিয়োগ নীতি প্রসঙ্গে এডিসির প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য রাধাচরণ দেববর্মা বলেন, সংবিধান মেনে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই৷ তবে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনে সংরক্ষণে ৫০ শতাংশের অধিক দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শুধু মাত্র জনজাতিদের জন্য চাকুরী সুনিশ্চিত আদৌ সম্ভব হবে, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ১০০ শতাংশ সংরক্ষণের সংবিধানে কোন অধিকার রয়েছে বলে জানা নেই৷ তবে, বাঁকা পথে নিয়োগে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, নিয়োগ নীতিতে ককবরক ভাষা এবং জনজাতি কৃষ্টি, সংসৃকতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক হলে সাধারণ শ্রেনীর প্রত্যাশীরা চাকুরিতে আবেদনে সমস্যা হবে৷ এক্ষেত্রে, ককবরক ভাষা জানা এবং জনজাতি সংসৃকতি সম্পর্কে ধারণা রয়েছে, সাধারণ শ্রেনীর ওই সকল প্রত্যাসীরাই চাকুরী পাবেন৷


স্বাভাবিকভাবে, জটিলতার মধ্যেই এডিসি প্রশাসন নতুন নিয়োগ নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ নিয়োগ নীতিতে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সাংবিধানিক অধিকার কিভাবে রক্ষিত হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি৷ ফলে, আগামী এডিসি অধিবেশনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে৷ এডিসির চেয়ারম্যান জগদীশ দেববর্মা জানিয়েছেন, আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে অধিবেশন শুরু হবে৷ ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর মোট তিনদিনের জন্য অধিবেশন বসবে৷ সম্ভবত অধিবেশনের প্রথম দিনেই ওই বিল আনবে এডিসি প্রশাসন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে৷