নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ নভেম্বর৷৷ পুর ও নগর সংস্থায় ভোটে ব্যাপক হারে বুথ দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলি৷ সেই সাথে হামলা, বুথ জ্যাম, প্রাার্থীদের মারধর, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ বেশীরভাগ ঘটনাই ঘটেছে আগরতলা পুর নিগম এলাকায়৷ সিপিএম এবং তৃণমূল এই সমস্ত অভিযোগ এনে আগরতলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে৷ সিপিএমের তরফ থেকে পশ্চিম আগরতলা থানায় ধরণা দেয়া হয়েছে৷ অন্যদিকে তৃণমূলের তরফে পূর্ব আগরতলা থানার সামনে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে৷
আগরতলা পুরো নিগাম নির্বাচনকে পরিকল্পিতভাবে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ বিভিন্ন স্থানে তৃণমূলের ভোট প্রার্থী নেতা কর্মী-সমর্থকদের ভোটদানে বাধা দেওয়া হয় এবং শাসক দলের দুর্বৃত্তরা বুথ দখল করে তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ৷ পুরো ভোটকে প্রহসনে পরিণত করেছে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি৷ আগরতলা পুর নিগমের সহ বিভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, কর্মী সমর্থকদের মারধর, বুথ দখল সহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে শাসকদলের দুর্বৃত্তরা৷ পুলিশ প্রিসাইডিং অফিসার এবং অবজারভার রা সবকিছু দেখেশুনেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি৷ রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ রাজ্যে স্বৈরাচারী রাজত্ব চলেছে৷ কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজ্যকে সেই প্রশ্ণ তুলেছেন সুবল বাবু৷ তিনি বলেন সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে৷ রাজ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন৷
আগরতলা পুর পরিষদের ৫১-নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তপন বিশ্বাসকে বিজেপির দুষৃকতীরা নৃশংস ভাবে মারধর করেছে৷ ভোট দিতে যাওয়ার সময় তাকে আক্রমণ করা হয়৷ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটির কনভেনার সুবল ভৌমিক ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ সেখান থেকে দলীয় প্রার্থীকে উদ্ধার করে তিনি নিজে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যান৷ শাসক দলের দুর্বৃত্ত বাহিনীর এ ধরনের কাজকর্মের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির কনভেনার সুবল ভৌমিক৷ তিনি বলেন, ’গতকাল রাত থেকে বিজেপি প্রচন্ড তান্ডব শুরু করেছে৷ ভোটের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যেখানেই তৃণমূলের কর্মী দেখছে সেখানেই তাদের আক্রমণ করছে৷ পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশন কেউ কোনো রকম সহযোগিতা করছেন না৷ ’
ভোটারদের ভোট দিতে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি৷জনগণ কিভাবে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন সেই প্রশ্ণ তোলেন সুবল বাবু৷
আগরতলা পুর নিগমের এলাকায় পুণরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দলসিপিআইএম৷ ভোট সন্ত্রাস ও পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার আগরতলা পশ্চিম থানার সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সিপিএম৷
অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট পর্ব সম্পন্ন করার নাম করে ত্রিপুরায় বিশেষ করে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে শাসক দল বিজেপি৷ ভোট ডাকাতির প্রতিবাদ জানিয়ে সিপিআইএম পশ্চিম থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে৷ বিক্ষোভ প্রদর্শন কালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সারা ভারত কৃষক সভা রাজ্য কমিটির সম্পাদক পবিত্র কর বলেন বিরোধী দলের সমর্থক ভোটারদের রাজ্যের শাসক দল বিজেপি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দিচ্ছে না৷ ভোটকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে৷ মোহনপুর বিশালগড় ও জিরানিয়া থেকে বহিরাগতদের এনে ভোট সন্ত্রাস চালানো হয়েছে৷ রেশম বাগান সুকলে গতকাল রাতে দুই শতাধিক বহিরাগতকে এনে রাখা হয়৷ বিষয়টি রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে অবগত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি৷ ভোট চলাকালে রেশম্বাগান সুকলে ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের তারা তাড়া করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন৷ গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করা পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি৷ পবিত্র বাবু বলেন বিজেপির সাহস থাকলে কোন দলের এজেন্ট না রেখে শুধুমাত্র অফিসারদের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হোক৷ পবিত্র বাবু বলেন আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি শাসক দল বিজেপির পক্ষে কোনো জনসমর্থন নেই৷ সিপিএমের তরফ থেকে পানিসাগর নগর পঞ্চায়েতের ৪, ৮ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডে পুনরায় নির্বাচন দাবী করা হয়েছে৷ সেই সাথে পুনরায় নির্বাচন দাবী করা হয়েছে, সাব্রুম নগর পঞ্চায়েতের ২ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ড ও সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের ৫ নম্বর ওয়ার্ড৷
ত্রিপুরা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাহিনীর সদস্য তথা গণমুক্তি পরিষদের বর্ষিয়ান নেতা বলেন রাজ্যে বিজেপির শাসনকালে গণতন্ত্র নেই৷ আগরতলা পুরনিগম, রাজ্যের অন্যান্য পুর পরিষদ এবং নগর পঞ্চায়েত এলাকায় নির্বাচনে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই৷ বিজেপি আইপিএফটি জোট সরকারের আমলে গণতন্ত্র প্রত্যাশা করা যায় না৷ তিনি বলেন নিজেদের অধিকার নিজেদের কেড়ে নিতে হবে৷ অভিজ্ঞতার নীতিকেই রাজ্যের মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷৷
সিপিআইএম পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার সম্পাদক রতন দাস বলেন আগরতলা পুর পরিষদ নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে বিজেপি দুর্বৃত্তরা সন্ত্রাস শুরু করেছে৷ সিপিআইএমের ৫ জন প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে৷ এইসব বিষয় নির্বাচন কমিশনকে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল৷ কমিশন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ শাসক দল বিজেপি বহিরাগতদের এনে রাজ্যে ভোট ডাকাতি করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন৷ জেলা সম্পাদক বলেন প্রার্থীদের নির্বাচন ক্ষেত্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ বিরোধীদলের পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ পাড়ায় পাড়ায় সন্ত্রাস ছড়িয়েছে৷ সব কিছু জানানোর পরও নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি৷ নির্বাচনকে প্রহসনের পরিণত করার জন্যই এ ধরনের চক্রান্ত করা হয়েছে৷ এ ধরনের প্রহসন অর্থ কি নির্বাচনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি৷৷ আগরতলা পুরো নিগমের এলাকায় সুষ্ঠু পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে সিপিআইএম৷৷ তিনি বলেন পুলিশ ঠুঠো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করেছে৷ দুষৃকতিকারীদের সামনে দাঁড়িয়ে থেকো পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন৷
নির্বাচনের নামে নগ্ণ উলঙ্গ সন্ত্রাস চালিয়েছে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি৷ আগরতলা পুর নিগমের নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায়৷ আগরতলা পুর পরিষদ এলাকায় নির্বাচনের নামে নগ্ণ উলঙ্গ সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায়৷ পুলিশ নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি দল যৌথভাবে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে৷ রাজ্যের জনগণ এর যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷ গোপালবাবু বলেন, এ ধরনের নগ্ণ উলঙ্গ সন্ত্রাস জীবনে তিনি কখনো দেখেননি৷সকালে ভোটদান প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ৫০ শতাংশ ভোট বিজেপি কর্মীরা ছাপ্পা মেরেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন৷ বিরোধী দল কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মী নির্বাচন প্রার্থী এবং ভোটদাতাদের ওপর নগ্ণ সন্ত্রাস চালালেও পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশন কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি৷ নির্বাচন দপ্তর ও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে৷এবারের নির্বাচনে বিপ্লব এন্ড কোম্পানি পুলিশ ও কমিশন একত্রিত হয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন গোপাল বাবু৷বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা দলীয় প্রার্থী পোলিং এজেন্ট সহ ভোটদাতাদের বুথ কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ বিজেপি যে নোংরা উলঙ্গ নির্বাচন করেছে, বুথ দখল করেছে এর খেসারত ২০১৩ সালের নির্বাচনে দিতে হবে৷গোপাল রায়ে আরও অভিযোগ করেন ভিতরেও বিজেপি ,বাইরেও বিজেপি৷ এটা কোনোভাবেই নির্বাচন হতে পারে না৷ এ ধরনের নির্বাচনকে উলঙ্গ রেগিং এবং কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায়৷ এধরনের নগ্ণ, উলঙ্গ কলঙ্কজনক নির্বাচন রাজ্যের শান্তিকামী গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷