অসমে কোভিড-কারফিউয়ের সময়সীমা কমল, বুধবার থেকে নয়া এসওপি, আন্তঃজেলা জনপরিবহণে আংশিক শিথিল, জারি বিজ্ঞপ্তি

গুয়াহাটি, ১৭ আগস্ট (হি.স.) : কোভিড পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হওয়ায় অসমে জারি করা হয়েছে নয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজিওর (এসওপি)। আগামীকাল বুধবার ১৮ আগস্ট ভোর পাঁচ (৫:০০)-টা থেকে বলবৎযোগ্য নয়া এসওপি আজ মঙ্গলবার জনতা ভবনে রাজ্যের গৃহ দফতরের কমিশনার-সচিব তথা অসম রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এএসডিএমএ)-এর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার জ্ঞানেন্দ্রদেও ত্রিপাঠী, স্বাস্থ্য ও এএসডিএমএ-এর অন্য শীর্ষ আধিকারিকদের পাশে বসিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত।

নয়া এসওপি অনুযায়ী বেশ কিছু বিদ্যমান নিয়মাবলির পরিবর্তন করার পাশাপাশি কয়েকটি ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল রাতে মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। গত দুসপ্তাহের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গেছে, রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরে নয়া এসওপি ঘোষণা করে তিনি জানান, গোটা রাজ্যে আরও একঘণ্টা শিথিল করা হবে কারফিউ। সে অনুযায়ী সব জেলায় পূর্ববর্তী ৬:০০টার বদলে রাত ৭:০০টা থেকে ভোর ৫:০০টা পৰ্যন্ত বলবৎ হবে কারফিউ।


তিনি জানান, নয়া এসওপি অনুযায়ী প্ৰতিদিন সন্ধ্যা ৬:০০টা পৰ্যন্ত কাৰ্যালয়-কৰ্মক্ষেত্ৰ, হোটেল-রেস্টুরেন্ট-ধাবা, ব্যবসায়িক-বাণিজ্যিক প্ৰতিষ্ঠান, বিক্ৰয় কেন্দ্ৰ, শোরুম, মুদি দোকান, ফলমূল ও শাক-সবজির দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আন্তঃজেলা যাতায়তের ক্ষেত্ৰেও চলমান নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। সে অনুয়ায়ী গুয়াহাটি সহ কামরূপ মহানগর জেলা ছাড়া অন্য সব জেলায় কেবল ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করতে পারবে। গুয়াহাটি থেকে বেসরকারি (ব্যক্তিগত) ও বাণিজ্যিক কোনও গাড়ি বের হতে পারবে না এবং প্রবেশ করতেও পারবে না। কেননা, গুয়াহাটি সহ কামরূপ মহানগর জেলায় এখনও আশানুরূপ কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তিনি জানান, গণপরিবহণ / যাত্ৰীবাহী যানবাহন চলাচলে পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।


মন্ত্রী জানান, দৈনিক জোড়-বেজোড় (অড-ইভেন) নম্বরের যানবাহন চলাচলেও পূর্ববর্তী নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া প্রকাশ্য স্থানে আয়োজিত সভা-সমিতি, সামাজিক / সর্বজনীন অনুষ্ঠানে সর্বাধিক ২০০ জন মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্ৰেক্ষাগৃহ বা সর্বজনীন সভাগৃহ ইদ্যাদি বন্ধ কক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে মোট আসনের ৫০ শতাংশ মানুষকে অংশগ্ৰহণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কোভিড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ যাঁরা নিয়েছেন তাঁরা এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্ৰহণ করতে পারবেন। বিবাহ ইত্যাদি ঘরুয়া মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন সৰ্বাধিক ২৫ জন। এছাড়া অন্তিম সৎকার ও শ্ৰাদ্ধানুষ্ঠানে সৰ্বাধিক ২৫ জনকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে নয়া এসওপিতে।


এভাবে কামাখ্যা মন্দিরে প্ৰতি ঘণ্টায় সৰ্বাধিক ২০ জন ভক্তকে মাতৃদৰ্শনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দুই ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন-প্রাপ্তরা পাবেন মন্দির চত্বরে প্রবেশের সুযোগ। অন্যান্য ধৰ্মীয় স্থানে সৰ্বাধিক ১০ জন অংশগ্ৰহণ করতে পারবেন।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহন্ত জানান, নয়া এসওপি অনুযায়ী এমবিবিএস, বিএসসি নাৰ্ছিং, ইঞ্জিনিয়ারিঙের চূড়ান্ত বৰ্ষ এবং জিএনএম-এর তৃতীয় বৰ্ষের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্ৰেণিকক্ষে পঠনপাঠন শুরু করতে পারবেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠ-গ্ৰহণের জন্য আগত ছাত্ৰছাত্ৰীদের কোভিড প্ৰতিষেধকের দুটি ডোজ অবশ্যই নিতে বলেছেন মন্ত্রী। এছাড়া অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের শ্ৰেণিকক্ষে পাঠদান পৰ্ব শুরু করতে বিশেষ অনুমতি প্ৰদান করা হয়েছে।


বিমানবন্দরে দুই ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণকারী বিমানযাত্ৰীরা পাবেন কোভিড টেস্ট থেকে রেহাই। পাশাপাশি বিমানবন্দরে কর্তব্যরত আধিকারিক-কর্মীদের দেখাতে হবে কোভিড টেস্টের সর্বশেষ নেগেটিভ রিপোৰ্ট।


তাছাড়া ভাদ্র মাস উপলক্ষ্যে রাজ্যের নামঘরগুলিতে নামকীৰ্তনের জন্য ৫০ শতাংশ ভক্ত-মহিলার সমাবেশে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কোভিড প্ৰটোকল মেনে ভাদ্র মাসের নামকীৰ্তনে অংশগ্রহণ করতে হবে ভক্তদের।


সরকারি কর্মচারীদের প্রসঙ্গে জানান, এখনও বহু কর্মচারী কোভিডের দ্বিতীয় ডোজ নেননি। যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ নেননি, তাঁদের শীঘ্র তা নিয়ে নিতে অনুরোধ জানান মন্ত্রী। আরও জানান, যে সকল আধিকারিক ও কর্মচারী কোভিড প্ৰতিষেধক নিয়েছেন, তাঁদের নিয়মিত নিজের নিজের দফতরে আসতে হবে। তাছাড়া যে সকল মহিলার ৩ বছরের নীচে শিশু রয়েছে, তাঁরা নিজেদের বাড়ি থেকে কাজ করবেন। পূর্ববর্তী নির্দেশে পাঁচ বছরের শিশুর কথা বলা হয়েছিল।


তবে রাজ্যের সর্বস্তরের জনতাকে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার এবং দূরত্ব বজায় রাখতে আবেদন জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত।