গুয়াহাটি, ১২ আগস্ট (হি.স.) : টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী অসম-কন্যা লাভলিনাকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই গুয়াহাটির গোপীনাথ বরদলৈ বিমানবন্দরে বাঁধভাঙা জনতার ভিড়। ছিলেন বহু ভিভিআইপি। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ৯:১৫। অসম-তনয়া লাভলিনা বড়গোহাঁইকে নিয়ে রানওয়ে স্পর্শ করে উড়ান। রানওয়ের পাশেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী বিমল বরা, সংসদীয় পরিক্রমা মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা, বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকন প্রমুখ কয়েকজন ভিভিআইপি। উড়ান থেকে নীচে নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের তোড়া দিয়ে মাথায় ঝাঁপি পরিয়ে উষ্ণ স্বাগত-অভ্যর্থনা জানান মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। রানওয়ে থেকে তাঁকে লাউঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে দেন তাঁরা।
লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিলেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি ভবেশ কলিতা, সাংগঠিনক সাধারণ সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ শর্মা, প্রদেশ বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অপরাজিতা ভুইয়াঁরা। সেখানে সকলের আদরের লাভলিনাকে একে একে সংবর্ধনা জানান।
বাইরে ছোট একটি সুসজ্জিত মঞ্চ তৈরি করে রাখা ছিল। বিহু-চুচরি, ঢোল, পেঁপা বাজিয়ে মঞ্চে লাভলিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান তাঁর অনুগামী এবং ক্রীড়াপ্রেমীরা। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পঞ্চতারকা হোটেল তাজ ভিভিন্তায়। এখানেও বহুজন তাঁকে সংবৰ্ধনা জানান। জনতার উচ্ছ্বাসে এক সময় আবেগিক হয়ে ওঠেন ব্রোঞ্জকন্যা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দু-চোখ বেয়ে জল বেরিয়ে আসে ২৪ বছরের লাভলিনা বড়গোহাঁইয়ের। আবেগের সঙ্গে বলেন, তাঁর জন্য রাজ্যের আপামর জনতা পূজা–হোম–যজ্ঞ ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তা তিনি সংবাদ মাধ্যমের বদান্যতায় জানতে পেরেছেন। অসমবাসীর অকুণ্ঠ আশীর্বাদেই তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এই পদক পেয়েছেন। তাঁকে রাজ্যবাসী এত স্নেহ করেন তা তিনি ভাবতেই পারেননি। তবে অলিম্পিকে স্বর্ণজয় করতে পারলে আরও সুখি হতেন। অবশ্য পরের বার প্যারিস অলিম্পিকে সোনা জয় করতে অক্লান্ত কসরত করবেন, অঙ্গীকার করেছেন লাভলিনা।
অলিম্পিকে পদক বিজয়ী অসম-কন্যা লাভলিনাকে স্বাগত জানাতে দু-দিন আগে থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। গুয়াহাটি মহানগরের প্রধান প্রধান সড়কে লাভলিনার ছবি সংবলিত বিশাল বিশাল ব্যানার, হোর্ডিং ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে আজ বিকেল তিনটায় গুয়াহাটিতে শংকরদেব কলাক্ষেত্ৰের আন্তর্জাতিক মিলনায়তনে এক বিপুল সংবৰ্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। সেখানে প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, সম্মানিত অতিথি ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী বিমল বরা সহ বহুজন তাঁকে সংবর্ধনা জানাবেন। এর পর সন্ধ্যা ছয়টায় রাজভবনে রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি অভ্যর্থনা ও সংবর্ধনা জানাবেন লাভলিনাকে। সেখান থেকে যাবেন পঞ্চতারকা হোটল রেডিসন ব্লুতে। রেডিসনে বহু আমন্ত্রিত ভিভিআইপির সঙ্গে নৈশ আহার করবেন লাভলিনা বড়গোহাঁই।
আগামীকালই তাঁকে ফের দিল্লিতে চলে যেতে হবে। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদীর আমন্ত্রণে লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে। তবে ১৭ তারিখ প্রায় মাসখানেকের জন্য ফের আসবেন তিনি।
অন্যদিকে, তাঁদের মেয়ে লাভলিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য ব্যাপক প্ৰস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁর জন্মভিটে গোলাঘাট জেলার বড়পথারের বারমুখিয়া গ্রামের জনতা। কিন্তু সময় না থাকায় এ যাত্রায় তিনি স্বগৃহে যেতে পারবেন না। তাই তাঁর বাড়ি সহ গ্রামে বিষাদের ছায়া পড়েছে। গ্রামের মানুষ বলেন, তাঁরা বহু আয়োজন করেছিলেন। ১৭ তারিখ আসবেন। তখন প্রাণভরে তাঁদের মেয়েকে আদর-যত্ন করবেন তাঁরা, বলেছেন গ্রামে মানুষ। প্রসঙ্গত, গোলাঘাটের জেলাশাসকের তত্বাবধানে নিরাপত্তা বলয়ে বাড়িতে থাকবেন লাভলিনা।

