নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ অগাস্ট।। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে পাখীর চোখ এখন ত্রিপুরা। এ-কথা সাফ বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে হুশিয়ারী দিয়ে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন ফেরি করলেন তিনি। ত্রিপুরা সফরে এসে বিজেপি বিরোধী শক্তির মনোবল বৃদ্ধির সাথে বাম-কংগ্রেস উভয়ের সমর্থন চেয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার ডাক দিয়েছেন অভিষেক। সাথে তিনি স্বীকার করেছেন, আগের তৃণমূল এখন অনেক পরিবর্তীত। তাই, ত্রিপুরায় ২০২৩ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বক্ষণের নেতা সর্বদাই হাজির থাকবেন। এদিন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, পায়ের তলায় জমি রক্ষা করুন। আজ আপনার বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিলাম। এদিকে, কনভয়ে হামলার অভিযোগ এনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
এদিন তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ টেনে এনে বলেন, বাংলায় দুয়ারে সরকার, কিন্ত ত্রিপুরায় দুয়ারে সন্ত্রাস। তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিজেপি, তাই ত্রিপুরা সফরে ভয় পেয়ে মাতা ত্রিপুরেশ্বরীর দর্শনে হামলা করেছেন শাসক দলের সমর্থকরা। তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ভূলুন্ঠিত। কারণ, বিরোধীরা এ-রাজ্যে আক্রান্ত। তিনি বলেন, আমার গাড়িতে বিজেপি সমর্থকরা হামলা করেছেন। তাতে, আমার তিনজন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন। কিন্ত, আজ ত্রিপুরাবাসীর ভালবাসা ও আশীর্বাদ পেয়ে আমি আপ্লুত। সাথে নিশ্চিত, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার মানুষের সমর্থন নিয়ে তৃণমূল সরকার গঠন করবেই।
এদিন তিনি জানতে চান, ত্রিপুরায় তৃণমূলের অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে বিজেপি ভয় পাচ্ছে কেন। তাঁর দাবি, অত্যাচার যত মারাত্মক হবে আন্দোলন ততই দৃঢ় হবে। সাথে অভিষেক বোঝাতে চেয়েছেন, ত্রিপুরায় সরকার বাঁচাতে কেন্দ্রীয় নেতারা যতবার আসবেন, তিনি নিজে তার পাঁচগুণ রাজ্য সফর করবেন। মূলত, প্রদেশ বিজেপির তৃণমূলকে পরিযায়ী কটাক্ষের জবাবেই ত্রিপুরায় সমর্থকদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস এখন অনেক পরিবর্তীত। ত্রিপুরায় কর্মীদের সর্বক্ষণ পাশে থাকার জন্য সর্বদা একজন দলের শীর্ষ নেতা রাজ্যে অবস্থান করবেন। তাঁর হুশিয়ারী, ত্রিপুরায় তৃণমূলের একজনের কর্মীর উপর হামলা হলে তার মাশুল গুনতে হবে। তাঁর দাবি, তৃণমূলকে যত আঘাত করবেন ত্রিপুরায় দলের শ্রীবৃদ্ধি ততই ঘটবে।
আজ অভিষেক দাবি করেন, শাসক দল বিজেপির অনেক বিধায়ক তৃণমূলের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছেন। কিন্ত, তৃণমূল বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখেনা। তাঁর সাফ কথা, কারোর ঘর ভাঙব না। মানুষের জন্য কাজ করে তাঁদের বিশ্বাস ও ভালবাসার জোরে ক্ষমতার মসনদে বসবে তৃণমূল। তিনি বলেন, এ-রাজ্যকে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি খুবই প্রয়োজন। তাই তিনি, বিরোধীদের একত্রিত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তাঁর আবেদন, বাম-কংগ্রেস উভয়ে মিলে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি করুন। তিনি তাঁদের এগিয়ে এসে বিজেপি বিরোধী শক্তি বৃদ্ধির ডাক দিয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, বিজেপি-কে ভোট দেওয়া খাল কেটে কুমির আনার সমান। তাই পশ্চিমবঙ্গের মতো দুয়ারে সরকার পেতে হলে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনুন।
এদিন তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ জেলায় ৫৮টি ব্লকে ৩৩২৪টি বুথে সমস্ত কমিটি গঠন হয়ে যাবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তিনি ত্রিপুরায় তৃণমূলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দেবেন।
তবে, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস নিয়ে তিনি মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিলেন। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে দিনের পর দিন কাটিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে পারেননি। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই তৃণমূলের জন্য পাখির চোখ এখন ২০২৩ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন।