BRAKING NEWS

Simple answer to thousands of questions : ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ক্ষেত্র : হাজারো প্রশ্ণের সরল জবাব বিপ্র ঘোষ

আগরতলা, ২৯ জুলাই (হিঃ সঃ)৷৷ সেবা-ই ধর্ম৷ হয়তো ত্রিপুরায় অনেকেই মনে করেন এই আদর্শ, নীতি, জ্ঞান কবেই গিলে খেয়ে ফেলেছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীরা৷ তা-হলে আজ চিৎকার করে বলতেই হয়, আজও তাঁরা ভগবানের দূত হিসেবে প্রতি পদে মহীরুহ হয়ে আমাদের আগলে রেখেছেন৷ হয়তো এমনটা দৃঢ়তার সাথে বলার সুযোগ হতো না, যদি না-আমরা বিপ্র ঘোষের কাহিনি পরদার আড়ালে অথবা খামবন্দি হয়ে থেকে যেত৷ আজ ত্রিপুরার এক চিকিৎসকের চোখে বিপ্রের জীবনী তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো৷


বিপ্র ঘোষ৷ বয়স মাত্র ১৪ বছর৷ ধর্মনগর থেকে যখন সে আগরতলার জিবি হাসপাতালে এলো, তখন প্রায় রাত নয়টা৷ তারিখ ছিল সেদিন ৬ জুলাই৷ গায়ে অল্প জ্বর৷ প্রায় প্রলাপ বকা একটা পাতলা ছেলে৷ শরীরের যে কোনও জায়গায় ব্যাথা৷ ঘাড়ে খুব যন্ত্রণা৷ ধরলেই কুঁকিয়ে ওঠে৷ মুখে খাবার তুলে না৷ একটু পর পর বমি ভাব৷ আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে সেই রাতের সবচেয়ে মুমূর্ষু রোগী বিপ্র-ই৷


মেডিসিন আইসিইউতে বিছানা খালি নেই৷ কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: নিতীশ দাস খোঁজখবর করেও একটা আইসিইউ বেড জোগাড় করতে পারলেন না৷ নিরুপায় হয়ে চিকিৎসকরা এনেস্থিশিয়া বিভাগের আইসিইউর দিকে তাকালেন৷ ভাগ্য সদয় ছিল৷ এই বিভাগের চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে ধর্মনগরের বিপ্রকে কোলে তুলে নিলেন৷ দিনমজুর বিপুল ও গৃহবধূ লিপিকা ঘোষের ছেলে বিপ্র, টিউবারকুলার মেনেঞ্জাইটিস নামক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল৷ মানুষ মারার জন্য বিশেষজ্ঞ রোগ হিসেবে খ্যাতি অনেক৷ ন্যূনতম বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ মস্তিষ্ক হয়ে যায় শ্লথ৷


এই উপমহাদেশের আফ্রিকায় বেশি দেখা যায় এই রোগ৷ মূলত মাথায় টিবি রোগের জীবাণুর বাসা৷ সে কী যন্ত্রণা৷ হায় ভগবান! চলতে পারে না বিপ্র৷ মুখে খেতে পারে না৷ কথা বলতে পারে না৷ শুধু কাঁদে, মা মরা বাচ্চাদের মতো৷ এনেস্থিশিয়া বিভাগের চিকিৎসকরা অনেক যত্নে তাকে ধারণ করেছেন৷ মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা রোজ দেখেছেন রুটিন মেনে৷ নার্সিং স্টাফদের অক্লান্ত সহায়তা পেয়েছে বিপ্র৷ চিকিৎসকরা যতবার গিয়েছেন বিপ্রের কাছে, মনে হয়েছে, সে জিতে যাবে৷


ওষুধ, ফিজিওথেরাপি বিভাগের সাহায্য, বেরিয়ার নার্সিং-চিকিৎসকদের হাতে যা ছিল তা দিয়েই তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করা হয়েছে৷ মাত্র তো একটা ১৪ বছরের ফুটফুটে বাচ্চা শিশু৷ বুধবার সকালে এআইসিইউ-তে ঢুকেই চিকিৎসকের মনে হলো, ঈশ্বর তুমি মহান! অনেক ধন্যবাদ সকলকে৷ চিৎকার করে বললেন, ওই দেখো, বিপ্র হাঁটছে! মনে এতটুকু সন্দেহ না রেখে নিশ্চিত, আরও সময় লাগবে ওর সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে৷ কিন্তু, বিপ্রের এই যুদ্ধে জয়ী হওয়াটা চিকিৎসকদের জন্য অসাধারণ প্রাপ্তি৷ এত সাধারণ একটি পরিবারের সন্তানের পক্ষে এই মারাত্মক রোগের হাত থেকে সুস্থ হয়ে ওঠাটা কিন্তু আপামর জনসাধারণের জন্য বেশ সুখের৷ খুব প্রতীকী৷


অবাক করার মতো ঘটনা, কোনও সুপারিশ ফোন আসেনি৷ কেউ হম্বিতম্বি করেননি৷ শুধু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা, আন্তঃবিভাগীয় তালমিল ও নার্সিঙের মরমীয়া স্পর্শই ফিরিয়ে দিয়েছে বিপ্রের জীবন৷ আজ সারাদিনে কিছু নেতিবাচক ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটেছে আপনার জীবনে? ডা. কনক চৌধুরীর এই গল্পটা পড়ুন৷ আর দেখুন বিপ্রের হাসি!


গল্পের অন্তিম পর্যায়ে সরলতা মাখানো এক প্রশ্ণ করলেন ডা. চৌধুরী৷ আশ্চর্যবোধক প্রতীক কেন দিলাম আগের বাক্যের শেষে? বেঠিক প্রয়োগ? না, বিপ্রের হাসি এখনও মনে হয় যেনো কান্না, তাই৷ তার তীব্র কষ্টের বিরুদ্ধে গোটা যুদ্ধ মনে করিয়ে দেয় আমাদের সবাইকে, যারা ওর পাশে ছিলাম এই ২২ দিন৷ আশা করি শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে আপনার মনটা কি এই গল্প পড়ে এতক্ষণে অনেকটা ভালো হয়ে যায়নি?


এই প্রশ্ণের মধ্য দিয়েই হাজার হাজার চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের উত্তর খোঁজার চেষ্টায় রয়েছি৷ কারণ, কোভিড মোকাবিলায় যখন যমে-মানুষে টানাটানি চলছে, তখন ওই সকল চিকিৎসকরাই প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছেন৷ স্বাস্থ্য কর্মীরা সেই প্রাচীর শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন৷ তাই, কুর্নিশ জানাই তাঁদের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *