ওয়েব ডেস্ক, আগরতলা, ১৬ জুলাই ।। করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ত্রিপুরা। তাই, আবারও সাপ্তাহান্তে সারা রাজ্যে সম্পুর্ন কারফিউর পথেই হাটল ত্রিপুরা সরকার। শনি ও রবিবার সারা রাজ্যে সম্পুর্ন কারফিউ জারি হয়েছে। তবে, সময় অনেকটা এগিয়ে এবার শনিবার ভোর ৫টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। এরপর থেকে যথারীতি দিবারাত্রি কারফিউ ১৯ জুলাই দুপুর ২টা থেকে ২৪ জুলাই ভোর ৫টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যাতায়াতের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ একইভাবে আরোপ করা হয়েছে। তবে, সাপ্তাহান্তে কারফিউতে এবার কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবারে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, করোনার ১৫১টি নমুনায় ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে ১৩৮টি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, সারা ত্রিপুরায় সমস্ত জেলায় ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিম জেলায় সবচেয়ে বেশি ১১৫টি নমুনা ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্টের বলে আজ জি বি হাসপাতালের প্রধান মাইক্রো বায়োলজিস্ট ডা: তপন মজুমদার জানিয়েছেন। তাই, ত্রিপুরা সরকার সপ্তাহান্তে সম্পুর্ন কারফিউর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজস্ব দফতরের সচিব তনুশ্রী দেববর্মা। তিনি জানিয়েছিলেন, ১০ জুলাই শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ১২ জুলাই সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা রাজ্যে সম্পুর্ন কারফিউ বলবৎ থাকবে। এরপর যথারীতি দিবা-রাত্রি করোনা কারফিউ বলবৎ হবে। সাথে তিনি যোগ করেছিলেন, আগামী সপ্তাহে পুণরায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ-বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওইদিন ডা: তপন মজুমদার বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে পশ্চিমবঙ্গের কল্যানী ল্যাবে করোনার ১৫১টি নমুনা পাঠানো হয়েছিল। আজ তার রিপোর্ট এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্ট ১৩৮টি, ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ১০টি এবং আলফা ভেরিয়েন্ট রয়েছে ৩টি। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি জানান, ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্ট পশ্চিম জেলায় ১১৫টি, সিপাহীজলা জেলায় ৮টি, দক্ষিণ জেলায় ২টি, খোয়াই জেলায়১টি, ধলাই জেলায় ১টি, ঊনকোটি জেলায় ৪টি, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ২টি এবং গোমতি জেলায় ৫টি পাওয়া গিয়েছে। তাঁর কথায়, আজকের পরিপ্রেক্ষিতে পুণরায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা প্রয়োজন রয়েছে। সে মোতাবেক স্বাস্থ্য দফতর ত্রিপুরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ত্রিপুরায় ডেল্টা প্লাসের কোন নমুনা পাওয়া যায়নি। তবে, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের নমুনা রয়েছে ত্রিপুরায়।
আজ রাজস্ব দফতরের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুসারে জানা গিয়েছে, এখন নতুন করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৭ জুলাই ভোর ৫টা থেকে ১৯ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা ত্রিপুরায় সম্পুর্ন কারফিউ বলবৎ হবে। ওই সময় জরুরি পরিসেবা ব্যতীত সমস্ত কিছু বন্ধ থাকবে। যাতায়াতের ক্ষেত্রেও কেবলমাত্র জরুরি পরিসেবার সাথে যুক্তদের অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া, ১৯ জুলাই দুপুর ২ টা থেকে আগরতলা পুর নিগম এলাকা, রানিরবাজার পুর পরিষদ, জিরানিয়া পুর পরিষদ, কৈলাসহর পুর পরিষদ, ধর্মনগর পুর পরিষদ, খোয়াই পুর পরিষদ, বিলোনিয়া পুর পরিষদ, কুমারঘাট পুর পরিষদ, তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদ, অমরপুর নগর পঞ্চায়েত, পানিসাগর নগর পঞ্চায়েত এবং কমলপুর নগর পঞ্চায়েত এলাকায় ২৪ জুলাই ভোর ৫টা পর্যন্ত দিবা-রাত্রি কারফিউ বলবৎ হবে। গত শুক্রবারই রাজস্ব সচিব জানিয়েছিলেন পরিস্থিতি বিবেচনা পুণরায় সাপ্তাহান্তে সারা রাজ্যে কারফিউ নিয়ে বিবেচনা করা হবে। তাতে, স্পষ্ট করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের তান্ডব থামেনি। করোনাও প্রকোপ বাড়িয়ে চলেছে।

