নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা ১০ জুলাই৷৷ একাংশের অসচেতন মানুষ স্বভাব সুলভ আচরণ যেন বদলাতে পারছে না৷ ক্ষুদ্র সংখ্যক মানুষের অসচেতনতার কারণেই ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পিছু ছাড়ছে না৷ এই প্রবণতা গ্রাম পাহাড়ের তূলনায় শহর এলাকার শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থাতে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ সরকার ও প্রশাসন যেখানে করোণা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য করোণা বিধি প্রণয়ন করে জনগণকে এসব বিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য পরামর্শ দিয়েছে সে ক্ষেত্রে তথাকথিত একাংশের শিক্ষিত মানুষজন সরকারি এই নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে চলাফেরা করে চলছেন৷
আর এরই খেসারত ভোগ করতে হচ্ছে সব অংশের মানুষজনকে৷ ত্রিপুরা সহ কয়েকটি রাজ্যে করোণা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে না আসায় কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে ত্রিপুরা সফরে পাঠিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্য সফরকালে রাজ্য সরকারকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে লকডাউন জরুরী৷ শুধু লকডাউন ঘোষণা করলেই চলবে না জনগণকে করোণা বিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার শনিবার দুপুর ১২ টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত আগরতলা শহর সহ ১৩ টি শহর এলাকায় উইকেন্ড কারফিউ অর্থাৎ এসব এলাকায় সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷
এছাড়া সংশ্লিষ্ট শহর এলাকাগুলিতে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত দুপুর দুইটা থেকে পরদিন ভোর ৫ টা পর্যন্ত করোনা কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ এক সপ্তাহ পর পুনরায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে৷ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসলে লকডাউন কিংবা করোণা কারফিউ আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে৷এদিকে প্রশাসনের তরফ থেকে শনিবার দুপুর থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত উইকেন্ড কারফিউ অর্থাৎ টানা লকডাউন ঘোষণা করলেও একাংশের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে দোকানপাট খোলা রেখে করোণা বিধি লংঘন করার চেষ্টা করেছে৷
তথাকথিত শিক্ষিত লোকজনরাও ভোজন রসনাতৃপ্ত করার জন্য অহেতুক করোণা বিধি অমান্য করে লকডাউন শুরু হওয়ার পরও দোকানপাটে ভিড় করেন৷ আইন রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা শেষ পর্যন্ত ওইসব নির্লজ্জ মানুষকে লাঠি নিয়ে তাড়া করতে বাধ্য হয়৷ এ ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে শিক্ষিত সচেতন সমাজ ব্যবস্থায় লজ্জাজনক৷প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং সচেতন নাগরিকরা প্রত্যেকের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের করোণা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষে করোণা বিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য৷ অন্যথায় করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে৷
রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে লকডাউন৷ ধর্মনগরেও চলছে লকডাউন৷ লকডাউন কঠোরভাবে লাভ করার জন্য পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা কোমর বেঁধেছে৷
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে৷ আপাত দৃষ্টিতে সংক্রমণের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কম মনে হলেও আতঙ্ক কিন্তু পিছু ছাড়ছে না৷ ডেন্টা প্লাস ভাইরাস সংক্রমণ বিপদজনক আকার ধারণ করতে শুরু করেছে৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়ার তথ্য পড়লে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম৷ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই রাজ্য সরকার আগরতলা পৌর নিগম সহ ১৩ টি শহর এলাকায় লকডাউন ও উইকেন্ড কারফিউ জারি করেছে৷ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে কার্যকর করতে প্রশাসন ময়দানে নেমেছে৷ লকডাউনে উত্তর ত্রিপুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চলেছে টহলদারি৷আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে চলছে আর্থিক জরিমানা আদায়৷ শহরে মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ ও টিএস আর বাহিনী৷ প্রশাসনের তরফ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যারা করোনা বিধি লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ জরুরী পরিষেবা সঙ্গে যুক্ত লোকজন ছাড়া অন্যান্যদের লকডাউন চলাকালে ঘর থেকে না বের হতে আহ্বান জানানো হয়েছে৷
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোমতী জেলার উদয়পুরে কারফিউর প্রথম দিনে মাঠে নামল পুলিশ প্রশাসন৷ এদিন পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে৷ বহু মানুষকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে৷
শনিবার দুপুর ১২ থেকে শুরু হয়েছে রাজ্যে লকডাউন৷ সেই সাথে এই লকডাউন জারি হওয়ার পর কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন৷শনিবার দুপুরে এই ধরনের একটি চিত্র দেখা গেল কাঁকড়াবনে৷ মেলাঘর এবং সোনামুড়া থেকে আসা বহু যানবাহনকে রাস্তায় ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয়েছে৷ সেইসাথে জারি হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি৷ কাঁকড়াবন থানার ওসি সুব্রত বর্মন জানিয়েছে যে সব যাত্রীদের মুখে কোন মাক্স পরিধান নেই সে সকল যাত্রীদের জরিমানা করা হচ্ছে৷ রাজ্য সরকার থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা পালন করছে কাঁকড়াবন থানার পুলিশ৷ করোনা বিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে বলেও জানানো হয়৷
করোনা কারফিউ জারি করেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলা করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে৷ একাংশের অসচেতন মানুষের দৌলতেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না৷ সে কারণে বাধ্য হয়ে সরকার ও প্রশাসন আরো কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে৷ জনগণকে করণ বিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে৷

