গরু চোর সন্দেহে তিন যুবককে পিটিয়ে হত্যা, বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি টিপিপি এবং ডিআরপিওটি- র

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/খোয়াই, ২২ জুন৷৷ খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া মহকুমার উত্তর মহারান্ত্রপুরে গরু চোর সন্দেহে তিন যুবককে পিটিয়ে হত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে ত্রিপুরা পিপলস পার্টি (টিপিপি)৷ কল্যাণপুর ও মুঙ্গিয়াকামি থানা এলাকায় তিন যুবককে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা, ত্রিপুরা’ (ডেমোক্র্যাটিক রাইটস প্রটেকশন অর্গানাইজেশন, ত্রিপুরা সংক্ষেপে ডিআরপিওটি) সহ বিভিন্ন সংগঠন৷


প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা পিপলস পার্টির এক প্রতিনিধি দল নিহত তিন যুবকের সোনামুড়ায় অবস্থিত বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷ সেখান থেকে ফিরে এসে ত্রিপুরা পিপলস পার্টির প্রতিনিধি দল রাজ্য পুলিশের সদর কার্যালয়ে গিয়ে রাজ্যের পুলিশ-প্রধানের কাছে ডেপুটেশন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন৷ সংগঠনের দাবি, যাঁদেরকে গরু চোর আখ্যা দিয়ে গণপ্রহারে হত্যা করা হয়েছে তাঁরা গরু চুরির সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নন৷ তাঁরা পেশায় শ্রমিক৷ তাঁদেরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, সাফ বলেন প্রতিনিধিরা৷


এদিকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা, ত্রিপুরা’র সভাপতি তথা প্রাক্তন জেলা ও দায়রা বিচারপতি দিলীপকুমার দাসচৌধুরী ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা জেনে অবাক হচ্ছি যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিনজন ব্যক্তিকে গ্রামবাসী পিটিয়ে হত্যা করেছে গরু চুরির অপরাধে৷ ভারতের সংবিধানের আর্টিকল ২১ ধারা প্রয়োগকৃত জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা মৌলিক অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ছাড়া কোনও ব্যক্তি তাঁর জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হবেন না৷ যদি আদৌ কোনও সন্দেহ থাকতো তা-হলে ভুক্তভোগীদের পুলিশের কাছে প্রসিকিউশনের জন্য হস্তান্তর করা উচিত ছিল৷ সুতরাং তিনজনের মৃত্যুর জন্য গ্রামবাসীরা খুনের অপরাধে দোষী৷ তাই গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা, ত্রিপুরা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারকে পারপিট্রেটরদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছে৷ এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারবর্গকে রাজ্য সরকার কর্তৃক পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতেও দাবি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা, ত্রিপুরার সভাপতি দাসচৌধুরী৷


অন্যদিকে ত্রিপুরা পিপলস পার্টির এক প্রতিনিধি দলের বক্তব্য, যদি তাঁদের গরুচোর বলেই সন্দেহ হয়ে থাকত, তা-হলে স্থানীয় জনগণ তাঁদেরকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারতেন৷ কিন্তু পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা আইন হাতে তুলে নেওয়ার শামিল৷ আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারোর নেই৷ আইন হাতে তুলে নিয়ে তিন যুবককে যারা হত্যা করেছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে ত্রিপুরা পিপলস পার্টি৷

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আরও জানান, ওই তিন জনের সাথে আরও এক যুবক ছিল৷ তাঁর নাম সেলিম হোসেন৷ সে এখনও নিখোঁজ৷ তাঁর কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল৷ ফোন করলে রিং হচ্ছে৷ অপর প্রান্ত থেকে একটা উপজাতি মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে৷ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পরিবারের তরফ থেকে সোনামুড়া থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন৷ কিন্তু পুলিশ নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা৷ এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ত্রিপুরা পিপলস পার্টি৷
তাই, সমস্ত ঘটনা রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷ অবিলম্বে নিখোঁজ যুবককে উদ্ধারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্যও দাবি জানানো হয়েছে৷ সোনামুড়ার তিন যুবককে পিটিয়ে হত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে ত্রিপুরা পিপলস পার্টি৷ পাশপাশি নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা করে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনের কাছে সংগঠনের তরফ থেকে দাবি জানানো হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল৷ ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্য জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷