BRAKING NEWS

নগর ভারতের সবুজায়ন

হরদীপ সিং পুরি

প্রকৃতির সঙ্গেঁ শান্তি স্থাপন ২১ শতকের আবশ্যিক কর্তব্য, এটা অবস্যই সবার শীর্ষে থাকবে, প্রত্যেকের জন্য, যে কোনো স্থানে একে দিতে হবে অগ্রাধিকার”।

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব, আন্তোনিও গ্যুতরেস ১৯৭৪-এর পর থেকে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব জুড়ে নানা দেশ, নানা সম্প্রদায় এবং ব্যক্তিবর্গ আমাদের গ্রহের প্রতি ও ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের দায়িত্বকে স্মরন করতে ও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে সমবেত হই। এই বছর এই দশকের লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে বাস্তুতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধার কল্পে রাষ্ট্রসংঘের দশক’-এর সূচনা করা হল।

যেহেতু উন্নয়নের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই একটা সবুজ ও স্বাস্থ্যকর ভবিষতের জন্য আমাদের সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তা প্রয়োগ করার ক্ষমতাও বেড়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের কর্মসূচি ২০৩০-এর মর্মস্থলের অন্যতম লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত সুরক্ষার মধ্যে এক স্পর্শকাতর ভারসাম্য আনয়ন। মোদী সরকারের বিগত সাত বছরে ভারতের নীতি ও রাজনৈতিক প্রকরনের এইসব টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এস ডি জ়ি) অর্জনের একটি সুবিন্যস্ত আবেদন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

২০৩০ কর্মসূচির আদর্শবাক্যঃ টেকসই উন্নয়নের স্বচ্ছতা (স্বচ্ছ ভারত) আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। এটা ছিল, কার্যত আমাদের শহরাঞ্চলের পটভূমির সার্বিক রূপান্তরের অগ্রদূত। ২০১৫-র জুনে বিশ্বের সর্বকালের সর্বৃহৎ নগরায়ন বিষয়ক মন্ত্রকের একগুচ্ছ কল্যানমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে তার সূচনা করা হয়; এই কর্মসূচিগুলি হল-প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (নগর), পুনরুজ্জীবন ও নগর পরিবহনের জন্য অটল মিশন (আমরুত) এবং স্মার্ট সিটি মিশন (এস সি এম) ।

আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের কল্যানমূলক মিশন সমূহের সূচনা করা হয়েছিল প্রায় একই বছরে ২০১৬-য় এবং তা করা হয়েছিল টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা(এস ডি জি)-এর রূপায়নের সঙ্গেঁ সঙ্গঁতি রেখে। তথাপি, যে বিষয়টি খুবই  চিত্তাকর্ষক তা হল এইসব এস ডি জ়ি-র মধ্যে সংশ্লিষ্ট কল্যানমূলক মিশন সমূহের মর্মস্থলের অভিষ্ট কর্মগুলি প্রতিফলিত হয়েছে। এইসব জাতীয় মিশনগুলি তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার ক্ষেত্রে আবহওয়া পরিবর্তন  সংক্রান্ত সমস্যাগুলির মোকাবিলা করতে টেকসই উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করা হয়েছে  যা মূলত কর্মসূচিগুলির অপরিহার্য অংশ।

স্বচ্ছ ভারত মিশন(নগর)-এ ভারতকে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ মুক্ত করা বা ও ডি এফ অর্জনের উপর জোড় দেওয়া হয়েছে এছাড়াও এই মিশনে কঠিন বর্জ্র ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা গঠন এবং সমাজে আচরনগত পরিবর্তন আনয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক ‘স্বচ্ছসর্বেক্ষন’ সমবায় ও প্রতিযোগিতামূলক মৈত্রীতন্ত্র এই নাগরিকগন কর্তৃক নেতৃত্ব প্রদত্ত ‘জন-আন্দোলন’-এর পশ্চাতে চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। অনুমান করা হচ্ছে  ২০২২ সাল নাগাদ এস বি এস ইউ-এর আওতায় যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে তার ফলে জি এইচ জি নির্গমনের কার্বন ডাই অক্সাইডের ১৭.৪২ মিলিয়ন টন হ্রাস করা সম্ভব হবে।

স্মার্ট সিটি মিশন আমাদের শহরগুলির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ প্রশাসনকে উন্নত করতে দায়িত্ব নিচ্ছে। এছাড়াও শহরগুলির ব্যবস্থাপনার স্থীতিশীলতা ও দুর্যোগ মোকাবিলারও দায়িত্ব নিচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের নগর কেন্দ্রগুলিতে শক্তি ক্ষমতা ও মোটর-বিহীন পরিবহন ক্ষমতাকে উন্নত করতে স্মার্ট সুমাধান ব্যবস্থা রূপায়ন করছে। উপরন্তু আমাদের শহরগুলির আবহওয়া বিষয়ক স্পর্শকাতর দিকগুলির বিকাশ, ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাসেসমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই অত্যাধুনিক কর্মকাঠামো শহরাঞ্চলের অধিবাসিদের জন্য সবুজ ও স্থিতিশীল ব্যবস্থার প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানের জীবনযাত্রার মান গড়ে তুলেছে।

এ পর্যন্ত ৪১৭.৫ কিলোমিটার স্মার্ট সড়কের জন্য পরিকাঠামো, ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল এবং ২৫৩.৫ এম এল ডি ক্ষমতাযুক্ত জল পরিশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবছে ২০২২ সাল নাগাদ এ সি এম-এর আওতায় জি এইচ জি নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ৪.৯৩ মিলিয়ন টনে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

আমরুত-এর ক্ষেত্রে জল সরবরাহ ও ব্যবস্থপনা, শক্তি সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং আরো সবুজ বাতায়ন বৃদ্ধির জন্য ৫০০ মহানগরীকে লক্ষ্য হিসেবে ধার্য করা হয়েছে। বর্তমানে ৩,৭০০ একর জায়গার উপর ১,৮৩১-টি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে, ৮৫ লক্ষ স্ট্রিট লাইটকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং এর ফলে ১৮৫.৩০ কোটি ইউনিট (কে ডব্লু এইচ) শক্তির সাশ্রয় হচ্ছে, এবং ১০৬-টি জলাভূমি পুনরুজ্জীবন করা হয়েছে। এই মিশন ২০২২ সাল নাগাদ ৪৮.৫২ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের পরিমান হ্রাস করতে সক্ষম হবে।

আজ ভারতে পরিবেশগত সচেতনতার রূপান্তরধর্মী ঢেউ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সার্বিক উন্নয়ন স্থিতিশীল কর্মসূচির চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। মোদী সরকারের সাত বছরে এ ধরনের নগর উন্নয়নমূলক অগ্রগতি এবং পাশাপাহি স্থিতিশীলতা, দুর্যোগের ঝুঁকি স্থিতিশীলতা, সামাজিক সম্প্রদায় গঠন সরকারের পথ নির্দেশিকার মর্মবাণি হয়ে উঠেছে। এতা আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে সহায়তা করবে, উপরন্তু আসন্ন দশকে আস্তুতন্ত্র পুরুদ্ধার ও আবহওয়া পরিবর্তনের কারনে যে ঝুঁকি রয়েছে তার সমাধান কল্পে সাহায্য করবে।

(লেখক কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *