BRAKING NEWS

অসমে মাদক-বিরোধী অভিযান সন্তোষজনক নয়, এক মাস বয়সি নতুন সরকারের খতিয়ান তুলে ধরে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব

গুয়াহাটি, ১০ জুন (হি.স.) : নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যে চলমান ভয়ানক ড্ৰাগসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নিৰ্দেশ দিয়েছিলেন। বহু মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি ধরপাকড়ও হচ্ছে। গত এক মাসে মাত্র ৮ কোটি টাকার ড্ৰাগস বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু এতে তিনি সন্তুষ্ট নন৷ এই অভিযান আরও তীব্র করতে হবে৷ বক্তা মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

আজ বৃহস্পতিবার ১০ জুন, তাঁর সরকারের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। গত এক মাসে বিজেপি নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের খতিয়ান তুলে ধরতে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী রঞ্জিতকুমার দাস, পশুসম্পদ ও কৃষিমন্ত্রী অতুল বরা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত, হস্ততাঁত ও বস্ত্ৰশিল্প মন্ত্রী উর্খাওগৌরা ব্ৰহ্মদের পাশে নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা ড্রাগস-বিরোধী অভিযান সম্পর্কে এই মন্তব্য করে আরও জানান, কোভিডে স্বামীহারা মহিলাদের ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যে সকল শিশু বাবা-মাকে হারিয়ে অনাথ হয়েছে সেই সব শিশুদের জন্য ‘মুখ্যমন্ত্রী শিশু সেবা প্রকল্প’-এর আজ উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এ ধরনের অনাথ শিশুদের কাছ থেকে সরকার কয়েকটি আবেদন পেয়েছে। এদের মধ্যে আজ এগারোটি শিশুর জন্য ৭ লক্ষ ৮১ হাজার ২০০ টাকা ফিক্সড ডিপজিট করা হয়েছে। টানা ২৪ বছর প্রতি মাসে তারা ৩,৫০০ টাকা করে পেতে থাকবে৷ এ-মাসের জন্য ৩,৫০০ টাকার চেক তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্য মন্ত্রীরা৷ এই টাকা মুখ্যমন্ত্ৰীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছে, জানান হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

এক জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি জানান, এ মুহূর্তে যে সকল শিশু তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে আছে, তাদের আবসিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার কথা এখনও বিবেচনা করেনি সরকার৷ তবে ‘মুখ্যমন্ত্রী শিশু সেবা প্রকল্প’-এর বলে পিতৃ-মাতৃহারা শিশু-বালিকাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিয়েছে অসম সরকার। আবসিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে শিক্ষা গ্ৰহণের মাধ্যমে এদের সোনালি স্বপ্ন পূরণ হবে। মুখ্যমন্ত্রী আজ বাবা-মাকে হারানো শিশুদের চেক, ফিক্সড ডিপোজিট, ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রীর সঙ্গে শংসাপত্ৰ প্ৰদান করে আজীবন তাদের সহায়তা করার প্ৰতিশ্ৰুতি দিয়েছেন।

আজ যে সকল শিশুকে ‘মুখ্যমন্ত্রী শিশু সেবা প্রকল্প’-এর আওতায় আনা হয়েছে তারা যথাক্রমে – ডিব্রুগড়ের খুশি সনোয়াল, যোরহাটের অংকিতা শইকিয়া ও অৰ্পণ শইকিয়া, কামরূপ মহানগরের মধুযামিনী চৌধুরী ও চয়ন ধিমান চৌধুরী, চিরাঙের ভৈরব বসুমতারি, কোকরাঝাড়ের জেসমি নাৰ্জারি, ধুবড়ির ওয়াকিল হুসেন। বাকিদের নাম জানা যায়নি। প্রসহ্গ, প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সপ্তম বৰ্ষপূৰ্তি উপলক্ষ্য এই ‘মুখ্যমন্ত্ৰী শিশু সেবা প্রকল্প’-এর শুভারম্ভ করেছিল হিমন্তবিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন অসমের নতুন সরকার।

গত ৩০ দিনে কোনও সরকারের সাফল্য ও বিফলতার মূল্যয়ন সম্ভব নয়। মাত্র একমাস হল এই সরকারের। এর মধ্যে যে সব পদক্ষেপ এবং প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে সে-সব জানানোই আজকের সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্দেশ্য৷ মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে এতদিন ড্ৰাগস পাচার হচ্ছিল। ওই সব এলাকায় নিৰ্বাচনি প্ৰচারে যখন গিয়েছিলেন, তখন বহু অভিভাবক ও স্থানীয় নাগরিকরা ড্রাগস সম্পর্কিত বহু অভিযোগ তাঁর কাছে উত্থাপন করেছিলেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই সর্বপ্রথম ড্ৰাগসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নিৰ্দেশ দিয়েছিলেন৷ প্রশাসন অবশ্য বসে নেই, কাজ করছে। তবে এতে তিনি সন্তুষ্ট নন৷ আরও কঠোর হতে হবে৷ গত একমাসে মাত্র আট কোটি টাকার ড্ৰাগস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ এগুলো যথেষ্ট নয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিমধ্যে বহু পরিমাণের মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গুয়াহাটির জোড়াবাটে গতকাল রাতে বিপুল পরিমাণের ড্রাগস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ৫০-এর বেশি মাদক কারবারির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে ধৃত ড্ৰাগসে আসক্তদের রিহাবিলেশন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করা হবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

করোনাকালে লকডাউন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, সম্পূৰ্ণ লকডাউন না দিয়েও কোভিড-এর দ্বিতীয় ঢেউকে নিয়ন্ত্ৰণ করতে চেষ্টা করছেন। মানুষের জীবন ও জীবিকা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে তাঁর সরকার। তাছাড়া শিলচর শহরের প্ৰায় সবাই ভ্যাকসিনের প্ৰথম ডোজ পেয়েছেন৷ নগাঁও শহরেও দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, দিল্লি থেকে ইঙ্গিত পেয়েছেন, আগামী ১ জুলাই থেকে অসমকে ৩.৫০ লক্ষ ভ্যাকসিন দেবে৷ সেই হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ধারণা, ১৫ আগস্টের মধ্যে রাজ্যের সকলকে প্ৰথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান প্ৰক্ৰিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে৷

বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিরন্তর প্রচষ্টায় অসমে কোভিড নিয়ন্ত্রণে আসছে। এখনও অক্সিজেনের অভাব হয়নি। পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন রয়েছে অসমে। অসমের জন্য রেখেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর ইত্যাদি রাজ্যকে অক্সিজেন সরবরাহ করে সহায়তা করা হয়েছে৷ অক্সিজেনের পাশাপাশি দু-একটি রাজ্যকে অক্সিজেন ভরতি সিলেন্ডারও দিয়েছে অসম, বলেন মুখ্যমন্ত্ৰী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *