নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ জুন৷৷ ত্রিপুরায় করোনার সংক্রমণ উঠা-নামা করছে৷ তবে, নিম্নমুখী প্রবণতা কমই লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে পশ্চিম জেলা ও আগরতলা পুর নিগম এলাকায় সংক্রমণ এখনও দুশ্চিন্তায় রেখেছে ত্রিপুরা সরকারকে৷
তাই, করোনা কারফিউয়ের সময়সীমা বাড়িয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ জুন করা হয়েছে৷ তবে, সামান্য শিথিল করা হয়েছে বিধি নিষেধ৷ জরুরি পরিষেবার দোকান, বাজার দুপুর ১২ টার বদলে ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷ তেমনি, গ্রামীণ এলাকায় কিছু শিথিলতা আনবে ত্রিপুরা সরকার৷ আজ সচিবালয়ে একথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷প্রসঙ্গত, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই অতিমারি নিয়ন্ত্রণে আগরতলা পুর এলাকা, অন্যান্য শহর এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলে চলতি করোনা কার্ফু করোনা নাইট কার্ফুর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ সেজন্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন- ২০০৫ অনুসারে ত্রিপুরা স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির স্টেট এগজেকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মুখ্যসচিব মনোজ কুমার গতকাল নতুন নির্দেশিকা জারি করেছেন৷
এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে করোনা ডে কার্ফু ৬ জুন সকাল ৫টা থেকে শুরু করে ১০ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে আগরতলা পুর এলাকা ও অন্যান্য শহর ও নগর এলাকায়৷ বাকি সমস্ত এলাকায় করোনা ডে কার্ফু ৬ জুন সকাল ৫টা থেকে শুরু করে ১০ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে৷ সারা রাজ্যে করোনা নাইট কার্ফু ৬ জুন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১ জুন সকাল ৫টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে৷ বিভিন্ন জেলার মধ্যে যাতায়াত যথারীতি বন্ধ থাকবে ১০ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত৷ একমাত্র ১৯ মে জারি করা আদেশে উল্লেখিত ক্ষেত্রে ছাড় থাকবে৷ করোনা ডে কার্ফু চলাকালীন সময়ে (সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা) কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে৷
তাতে বলা হয়েছে, সমস্ত এককভাবে পরিচালিত দোকানপাট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (গ্রোসারি সামগ্রী, সব্জি, দুধ, মাংস/মাছ, প্রাণী খাদ্য ইত্যাদি কার্যকলাপের সাথে জড়িত) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷ এর বাইরে বাকি সমস্ত দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে৷ ক্রেতারা যাতে মাস্ক ব্যবহার করেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন দোকানের মালিক সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন৷ শপিং মল ও মার্কেট কমপ্লেক্সগুলি সবসময়ই বন্ধ থাকবে৷ সরকারি যানবাহন ছাড়া বাকি যানবাহন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজে চলাচল করতে পারবে৷ তবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে দুপুর ১২টার পরেও তা ব্যবহার করা যাবে৷ দুপুর ২টার পর তার পরদিন সকাল ৫টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত (নির্দিষ্ট ছাড় ব্যতিরেকে) চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে৷ জরুরী পরিষেবার সাথে যুক্ত নয় এমন সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে৷ তবে গেজেটেড অফিসার ও বেসরকারি সিনিয়র কর্মকর্তারা ন্যূনতম সহকারী কর্মী নিয়ে প্রয়োজনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন৷
সামাজিক, রাজনৈতিক, খেলাধূলা সংক্রান্ত বিনোদনমূলক, ধর্মীয় শিক্ষামূলক, সাংসৃকতিক, মেলা, উৎসব ইত্যাদি সংক্রমণকারক সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে৷ সরকারি প্রয়োজনীয় বৈঠক ছাড়া (২০ জন পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী) অন্য কোন বৈঠক জমায়েত খোলা বা বন্ধ ঘরে করা যাবে না৷ সিনেমা হল, মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল, কমপ্লেক্স, জিমন্যাসিয়াম, সুইমিংপুল, বিউটি পার্লার, স্যালুন, স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও স্টেডিয়াম, এসেম্বলি হল ও অনুরূপ স্থান বন্ধ থাকবে৷ রেস্টুরেন্ট, ধাবাগুলি দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷ হোটেলের ভিতরের রেস্টুরেন্ট বাইরের অতিথির জন্য শুধু দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷ কিন্তু হোটেলে থাকা অতিথিরা সবসময়ই পরিষেবা নিতে পারবেন৷
অবশ্য বিধিনিষেধে কিছু ছাড়ও রয়েছে৷ আইন শৃঙ্খলা, পুর পরিষেবা, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ও জেলা প্রশাসন, পুলিশ, মিলিটারি, সি এ পি এফ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অগ্ণি, পানীয় জল, সংবাদ মাধ্যম, জেল, আদালত, সমাজ কল্যাণ দপ্তর পরিচালিত হোম, খাদ্য ও জনসংভরণ, বন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নিয়োজিত সরকারি কর্মী ইত্যাদি জরুরী পরিষেবার সাথে জড়িত কর্মী ও যানবাহন চলাচল করতে পারবে৷ পেট্রোলিয়াম সহ বিভিন্ন মাল পরিবাহী ও খালি যান, লোডিং আনলোডিং এর সাথে যুক্ত যান চলাচল করতে পারবে৷ বাস, ট্রেন, বিমান থেকে নেমে যাত্রীরা টিকিট দেখিয়ে যার যার গন্তব্যস্থলে যেতে পারবেন৷ টেলি যোগাযোগ, ইন্টারনেট পরিষেবা, সম্প্রচার ও ক্যাবল পরিষেবা, আই টি ও আই টি নির্ভর পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মী ও যান চলাচল করতে পারবে৷ খাদ্য, ঔষধপত্র, মেডিক্যাল সরঞ্জাম, ই-কমার্সের মাল ডেলিভারির সাথে জড়িত কর্মী ও যানগুলি চলাচল করতে পারবে৷ পেট্রোল পাম্প, এল পি জি, সি এন জি, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস-এর খুচরো বিক্রয় ও স্টোরেজ এর কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি ও যান চলাচল করতে পারবে৷ একাধিক শিফট ও দিনরাত চলমান শিল্প/ কোম্পানীতে কর্মরত কর্মীরা তাদের সংস্থার পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচল করতে পারবেন৷
ব্যাঙ্ক, এ টি এম, আর বি আই, বীমা, এন আই সি, কাস্টম ও স্থল বন্দর এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এবং তাদের যানবাহন চলাচল করতে পারবে৷ রেলওয়ে, বিমান বন্দর ও কাগর্ো পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মীরা চলাচল করতে পারবেন৷ ডাক ও ক্যুরিয়ার পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মীরা চলাচল করতে পারবেন৷ বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ও মেরামত সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা চলাচল করতে পারবেন৷ এফ সি আই এবং খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের মাল পরিবহণে নিযুক্ত কর্মী ও যান চলাচল করতে পারবে৷ ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সরকারি মিডিয়ার কর্মীরা উপযুক্ত দলিল দেখিয়ে গাড়িও চলতে পারবে৷
কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা বাগানের কাজকর্ম চলবে এবং চা পাতা পরিবহনকারী চলাচল করতে পারবেন৷ হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য খাবারের দোকান থেকে হোম ডেলিভারি জারি থাকবে৷ কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাল ডেলিভারি জারি থাকবে৷ ৫০ জন পর্যন্ত লোকের জমায়েত করা যাবে বিবাহ অনুষ্ঠানে রাত ১০ টা পর্যন্ত৷ দাহক্রিয়া, অন্তেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে ২০ জন পর্যন্ত লোকের জমায়েত হতে পারবে৷ সমস্ত ধর্মীয় স্থান বন্ধ থাকবে তবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের হেড বা প্রতিনিধি ন্যূনতম ধর্মীয় আচরণবিধি পালন করতে পারবেন৷ গ্যাস উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, কোল্ড স্টোরেজ ও ওয়্যারহাউসের কাজকর্ম জারি থাকবে৷ বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবা জারি থাকবে৷ হোটেল খোলা থাকবে, বাড়িতে নিয়ে খাওয়ার জন্য এবং হোম ডেলিভারি পরিষেবা সহ৷ যারা কোভিড ভ্যাকসিন নিতে চান তারা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন৷ প্লাম্বিং এর কাজে যুক্ত ব্যক্তি, ইলেকট্রিসিয়ান ও বিভিন্ন ঘরোয়া যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা পরিষেবা দিতে পারবেন৷ জেলাশাসক দ্বারা অন্য কোন কার্যকলাপে ছাড় দিয়ে থাকলে সেইসব কার্যকলাপ চালু থাকবে৷
এদিকে, করোনা নাইট কার্ফু (বিকাল ৪টা থেকে পরদিন সকাল ৫টা পর্যন্ত) চলাকালীন সময়ে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে৷ সমস্ত দোকানপাট ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপ, একমাত্র ঔষধের দোকান ছাড়া সব বন্ধ থাকবে৷ জরুরী পরিষেবায় নিয়োজিত সরকারি যানবাহন এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যবহৃত যান ছাড়া বাকি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে৷ উল্লেখিত ব্যতিক্রমী ছাড় বাদে ব্যক্তিগত সমস্ত চলাচল বন্ধ থাকবে৷ জরুরী পরিষেবার বাইরে থাকা সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে৷ ৬) সিনেমা হল, মাল্টিপ্লেক্স, শপিং কমপ্লেক্স, মল, জিমন্যাসিয়াম, সুইমিংপুল, বিউটি পার্লার, স্যালুন ও সমপর্যায়ের স্থান বন্ধ থাকবে৷ সামাজিক, রাজনৈতিক, খেলাধূলার আসর, বিনোদনমূলক, শিক্ষামূলক, সাংসৃকতিক, ধর্মীয়, মেলা, উৎসব ইত্যাদি সংক্রমণকারক জমায়েত বন্ধ থাকবে৷
কিছু দফতর ও পরিসেবা করোনা নাইট কার্ফুর আওতার বাইরে থাকবে৷ আইন শৃঙ্খলা, পুর পরিষেবা, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ও জেলা প্রশাসন, পুলিশ, মিলিটারি, সি এ পি এফ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অগ্ণি, পানীয় জল, সংবাদ মাধ্যম, জেল, আদালত, সমাজ কল্যাণ দফতর পরিচালিত হোম, খাদ্য ও জনসংভরণ, বন সংরক্ষণ এবং কোভিড- ১৯ মোকাবিলায় নিয়োজিত সরকারি কর্মী ইত্যাদি জরুরী পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মী ও যানবাহন চলাচল করতে পারবে৷ পেট্রোলিয়াম সহ বিভিন্ন মাল পরিবাহী ও খালি যান, লোডিং আনলোডিং এর সাথে যুক্ত যানবাহন চলাচল করতে পারবে৷ বাস, ট্রেন ও বিমান থেকে নেমে যাত্রীরা টিকিট দেখিয়ে যার যার গন্তব্যস্থলে যেতে পারবেন৷ টেলি যোগাযোগ, ইন্টারনেট পরিষেবা, সম্প্রচার ও ক্যাবল পরিষেবা, আই টি ও আই টি নির্ভর পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মী ও যান চালচল করতে পারবে৷ এ টি এম, কাস্টম এবং স্থল বন্দরের কর্মী ও যান চলাচল করতে পারবে৷ বিমানবন্দর রেলওয়ে ও কাগর্ো পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মীরা চলাচল করতে পারবেন৷
এফ সি আই এবং স্বাস্থ্য ও জনসংভরণ দফতরের মালবাহী গাড়ি ও কর্মী চলাচল করতে পারবেন৷ রোগীরা স্বাস্থ্য পরিষেবা লাভের জন্য চলাচল করতে পারবেন৷ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মী এবং সরকারি মিডিয়ার কর্মী উপযুক্ত প্রমাণ দেখিয়ে চলাচল করতে পারবেন৷ হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য খাবারের দোকান থেকে হোম ডেলিভারি দেওয়া যাবে৷ সবর্োচ্চ ৫০ জনের জমায়েত সম্বলিত বিবাহ অনুষ্ঠান রাত ১০ টা পর্যন্ত চলতে পারবে৷ দাহক্রিয়া, অন্তেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান সবর্োচ্চ ২০ জনের জমায়েত হতে পারবে৷ সমস্ত ধর্মীয় স্থান বন্ধ থাকবে কিন্তু পুরোহিত বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ন্যূনতম প্রার্থনা, আচরণবিধি পালন করতে পারবেন৷

