BRAKING NEWS

রাজ্যে আত্মনির্ভরতার নতুন অধ্যায়, কাশ্মীরি আপেল কুল ফলনে সাফল্য বিক্রমজিতের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুন৷৷ রাষ্ট্র নির্মাণে আত্মনির্ভরতার এক উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পার্বতী রাজ্যের পেঁচারথলের বাসিন্দা বিক্রমজিৎ চাকমা৷ কাশ্মীরি আপেল কুলের ফলন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ মাত্র আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগে এক বছরে ছয় লক্ষ টাকা আয় সম্ভব হয়েছে তাঁর৷ আগামী বছর সেই আয় বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷


ত্রিপুরায় কাশ্মীরি আপেল কুলের ফলন অতীতে দেখা যায়নি৷ একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই কাকা ও দুই ভাইকে সাথে রেখে ফসল উৎপাদনে নেমেছিলেন পেশায় ওবিসি কপর্োরেশনের ফিল্ড অফিসার বিক্রমজিৎ চাকমা৷ ইউটিইউব এবং গুগল থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ত্রিপুরায় কাশ্মীরি আপেল কুল ফলনের উদ্যোগী হন তিনি৷ তাঁর কথায়, বাংলাদেশের মাটিতে ওই ফলের ফলন সম্ভব হলে, ত্রিপুরায় অসম্ভব নয়৷ তাঁর মতে, ত্রিপুরার মাটি ও আবহাওয়া যে কোনও ফলনে দারুণ উপকারি৷


ওই ফল চাষ করার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিক্রমজিৎবাবু বলেন, আজকের এই সাফল্যের জন্য কাকা চঞ্চল কুমার চাকমা এবং দুই ভাই রঞ্জিত চাকমা ও বিশ্বজিৎ চাকমার অসীম অবদান৷ তাঁদের জন্যই কাশ্মীরি আপেল কুলের ফলন সম্ভব হয়েছে৷ তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ আমরা অধিক মুনাফার মুখ দেখতে পেরেছি৷ তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আমার কাকা ও দুই ভাই তাদের জমিতে আলু, মূলা ইত্যাদির চাষ করতেন৷ তাতে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে বছরে সাকুল্যে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় সম্ভব হত৷ তাই তাঁদের কাশ্মীরি আপেল কুল ফলনের পরামর্শ দেই এবং গত বছর চাষ শুরু করি৷


তিনি বলেন, চারা আনার সমস্ত দায়িত্ব আমি নিয়েছিলাম৷ সেই মোতাবেক ২০২০ সালের ১৭ মার্চ আমরা প্রথম চারা রোপণ করেছিলাম৷ প্রায় ৭ কানি জমিতে ১,৩০০ চারা রোপণ করা হয়েছিল৷ সঠিক পরিচর্যায় এ-বছর জানুয়ারিতে ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সমস্ত ফসল কেটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল৷ তিনি অনুমান করে বলেন, প্রায় ৪০ কুইন্টাল কাশ্মীরি আপেল কুল ফলন হয়েছে৷ তার মধ্যে ১২ কুইন্টাল ফল পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছি৷ বাকি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়েছে৷
বিক্রমজিৎবাবু জানান, জৈব পদ্ধতিতে কাশ্মীরি আপেল কুল ফলনে দারুণ উপকারি প্রমাণিত হয়েছে৷ তবে, সামান্য ডিএফই ব্যবহার করা হয়েছে৷ কিন্তু সঠিক মাত্রায় জল দেওয়ায় চারা থেকে গাছ হতে বিশেষ সময় লাগেনি৷ তিনি বিস্ময়ের সুরে বলেন, যে চারা এনেছিলাম তা থেকে ওই গাছ এবং কাশ্মীরি আপেল কুল মিলবে তা আমরা কল্পনাও করিনি৷ তবে এখন শুধু সঠিক পরিচর্যায় বছর বছর প্রচুর ফল পাওয়া যাবে৷ এমন-কি, আগামী বছর দ্বিগুণ ফল মিলবে বলে দৃঢ় প্রত্যয়ের সুরে দাবি করেন৷


তিনি বলেন, এই ফল ত্রিপুরায় আগে অনেকেই দেখেননি৷ তাই প্রথমে প্রায় ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে৷ পরবর্তীতে পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে একদিনে ১২ কুইন্টাল ফল ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে৷ বাকি ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছি৷ তাঁর দাবি, গড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে এই ফল বিক্রি হয়েছে৷ তাতে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা আমাদের আয় হয়েছে৷ যা আগামী বছর দ্বিগুণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷
আয় দ্বিগুণ হওয়া সম্পর্কে তাঁর যুক্তি, এ-বছর একটি ব্রাঞ্চ থেকে সবর্োচ্চ ২৫ কেজি এবং সর্বনিম্ন ৮ কেজি ফল পাওয়া গেছে৷ আগামী বছর সেই ফলন অনেক বাড়বে৷ তাতে অনায়াসে ৭০ থেকে ৮০ কুইন্টাল ফল পাওয়া যাবে৷ তিনি জানান, আগামী জানুয়ারিতে ফসল কাটার কাজ শুরু হবে৷
এই অভিনব উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, পেঁচারথলের বাসিন্দা বিক্রমজিৎ চাকমা আত্মনির্ভরতার এক নজির সৃষ্টি করেছেন৷ তাঁর কাকাদের সঙ্গে চাষের কাজে এক অভিনব ভাবনা প্রয়োগ করে সাফল্য অর্জন করেছেন এই তরুণ৷ ৬ কানি জায়গায় কাশ্মীরি আপেল কুল গাছের চাষ করেন তিনি৷ তাতে প্রথম বার ফলন হয়েছে প্রায় ৪০ কুইন্টাল ফল৷ আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা লাভ করেছেন এই তরুণ৷ বিক্রমজিৎ আশাবাদী, আগামী বছর এর দ্বিগুণ ফল ফলবে গাছগুলিতে৷ তাঁর এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই৷ আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার তাঁর এই আকাঙ্ক্ষা এবং সাফল্য অর্জন রাজ্যের অন্যান্যদেরও উৎসাহ প্রদান করবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *