নয়াদিল্লি, ২৯ মে (হি.স.) : জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে মনোবলকে শক্ত করে এগলে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা যায়, তার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নীতিকা কল। এককথায় বলা যেতে পারে এটাই হল নারী শক্তির উদাহরণ।ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে শহিদ স্বামীর প্রতি সম্মান দিলেন তিনি। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় অন্যতম শহিদ মেজর বিভূতিশঙ্কর ধোন্দিয়ালের স্ত্রী নীতিকা কল। ২০১৯ সালে দেশের প্রতি তাঁর আত্মত্যাগের জন্য শৌর্য চক্র পুরস্কার দেওয়া হয় মেজরকে। স্বামীর প্রয়াণের ৬ মাসের মধ্যেই নীতিকা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনিও সেনাবাহিনীতেই যোগ দেবেন। সেই স্বপ্ন শনিবার পূরণ হল।
২০২০ সালে শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন নীতিকা। এরপর ইন্টারভিউ পর্ব পেরিয়ে গত ২৬ মে চেন্নাইয়ে অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে পাশ করার পর শনিবার তিনি যোগ দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। লেফটেন্যান্ট নীতিকা এখন ভারতীয় সেনার নর্দার্ন কম্যান্ডের সদস্য। প্রয়াত স্বামীকে শ্রদ্ধা জানাতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন নীতিকা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা হয়, সেই সময় নীতিকা ও মেজর বিভূতিশঙ্করের বিয়ের বয়স মাত্র ৯ মাস। স্বামীর মৃত্যুর পরে নীতিকা তাঁর উদ্দেশে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, ‘তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে ভালবাসো। কিন্তু সত্যিটা হল, দেশকে তুমি তার চেয়েও বেশি ভালবাসো। আমি সত্যিই গর্বিত। আমরা সবাই তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে আমার স্বামী হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত। আমার জীবন তোমাকেই উত্সর্গ করেছি।’ স্বামীর উদ্দেশে জীবন উত্সর্গ করতে সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্নকেই বেছে নিয়েছিলেন নীতিকা। কারণ তিনি চেয়েছিলেন সেনায় যোগ দিয়েই স্বামীর অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করতে। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল নীতিকার।
নীতিকার স্বামী যখন মারা যান, তখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতেন নীতিকা। তাঁর সঙ্গে বিভূতির পরিচয় এমবিএ করার সময় থেকে। বন্ধুত্ব, প্রেম এবং তারপর বিয়ে। কিন্তু বেশিদিন তাঁরা একসঙ্গে বিবাহিত জীবন কাটাতে পারেননি। ২৮ বছরের তরুণীকে ইন্টারভিউয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কতদিনের বিবাহিত জীবন তাঁর? নীতিকার উত্তর ছিল, ‘২ বছর।’ তাঁর কথা শুনে অবাক হন সকলে। এরপর নীতিকা বলেন, ‘বিভূ শারীরিকভাবে নেই ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের বিয়ে আর নেই। বিভূ সবসময়ই আমার সঙ্গে রয়েছে।’