করোনার বিরুদ্ধে প্রধান হাতিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে এখনও দেশের বিশেষ কিছু মানুষ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ বিরাজমান। এটাও বলা যেতে পারে, ভ্যাকসিন নেওয়ার কোনও ইচ্ছাই নেই তাঁদের। এমনটা চললে দেশে করোনাকে পরাস্ত করা অসম্ভব। এখন দেখুন, করোনা-আক্রান্ত হওয়ার পর মোহালির একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মিলখা সিং। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মিলখা সিং বলেছেন, করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে তিনি চিন্তাই করেননি। নিঃসন্দেহে তিনি করোনাকে পরাস্ত করবেন। কিন্তু, ভাইরাসকে পরাজিত করার জন্য এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনই তো একমাত্র হাতিয়ার। বুঝতেই পারছি না, মিলখা সিংকে ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে তাঁর পরিবারের সদস্য অথবা বন্ধুরা কেন কিছু বলেননি! যদি তিনি করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে থাকতেন, তাহলে দু’তিন দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যেতেন, কারণ করোনাকে পরাস্ত করার জন্য অন্যতম হাতিয়ার হল ভ্যাকসিন।
আমার কাছে তো প্রতিদিনই কোনও না কোনও বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের ফোন আসে, প্রত্যেকেই বলেন তাঁরাও করোনা-আক্রান্ত হচ্ছিলেন, শুধুমাত্র ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণেই তাঁদের প্রাণ বেঁচে গিয়েছে। উত্তর প্রদেশ থেকে আরও একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার ভয়ে মেডিক্যাল টিমকে দেখেই মানুষজন সরযূ নদীতে ঝাঁপ দেন। গত শনিবার উত্তর প্রদেশের বারাবাঙ্কি জেলার রামনগর তালুকায় এমনই ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্য দফতরের দল গ্রামবাসীদের করোনার টিকা দিতে পৌঁছেছিল, টের পাওয়া মাত্রই স্থানীয় বাসিন্দারা নদীর ধারে জড়ো হতে থাকেন। অনেকেই নাকি নদীতে ঝাঁপও দেন, শুধুমাত্র টিকা নেওয়ার ভয়ে এমনটা করেছেন তাঁরা। এমনটা চললে কোনও সরকার কীভাবে করোনার মতো ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে? বিশ্বাস করুন, করোনা-মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ভারতের একটি অংশ টিকা নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টারত। তার আগে অনেকেই টিকা নেওয়া থেকে নিজেকে দূরেই রাখতেন। এখন যখন করোনার সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে, তখন ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। যুব সমাজেরও করোনার ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত, কারণ তাঁরাও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হচ্ছেন। ভ্যাকসিন নিলে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমে যায় এবং মানুষ স্বাভাবিক জীবনের দিকে অগ্রসর হতে পারেন। অনেক পশ্চিমি দেশে দেখা যাচ্ছে, মানুষ টিকা নেওয়ার পর স্বাভাবিক জীবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। আমেরিকা তো টিকা নেওয়ার পর মাস্ক ব্যবহারকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না।
যদি জনসংখ্যার বিচারে কথা বলতে হয়, তাহলে আমাদের দেশের ৩৮ শতাংশ জনসংখ্যায় ১৯ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষ রয়েছে। দেশে এখনও পর্যন্ত ২০ কোটির বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। টিকাকরণ অভিযানের মাধ্যমে ৪৫-৬০ বছর বয়সের ৫,৭৬,৫৩,৯২৪ জনকে করোনা-টিকার প্রথম ডোজ এবং ৯২,৩৯,৩৯২ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৫,৪৬,৬০,৯০০ জনকে প্রথম দফার ডোজ ও ১,৭৯,১০,০২৪ জনকে দ্বিতীয় দফার ডোজ দেওয়া হয়েছে। এখনও অনেক বড় লক্ষ্য বাকি রয়েছে। গোটা দেশে টিকাকরণ সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু, সর্বাগ্রে দেশের নাগরিকদের সতর্ক হতে হবে।
আগে অনেকের মধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। এটা তখনকার কথা, যখন সরকার, চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞরা বলতেন, নিজেদের সময় এলে ভ্যাকসিন অবশ্যই নেবেন। ভ্যাকসিন নিলেই করোনা-সংক্রমণকে রুখে দেওয়া সম্ভব। শুরুতে ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক আশঙ্কা ও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সমস্ত আশঙ্কা, গুজব দূর করতে এইমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া সর্বপ্রথম নিজেই করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। ভারতে টিকাকরণের শুরুতে অনেক বড় দিশা ছিল এই পদক্ষেপ।
আসলে এই সংক্রমণ হাওয়ার মাধ্যম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের তুলনায় ভারতে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন। ভ্যাকসিনের অভাবের কারণে কিছু কিছু রাজ্যে টিকাকরণেও বিলম্ব হচ্ছে। যদিও দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দেশে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জন্য ও টিকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যথাসম্ভব প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। করোনার আগ্রাসন থেকে দেশকে বাঁচাতে দেশবাসী নিজেদের দেশে তৈরি ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। এখন রাশিয়ার টিকাও এসে গিয়েছে। করোনাকে রুখতে ৯৭.০৬ শতাংশ কার্যকর মনে করা হচ্ছে রাশিয়ার ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি। বলা হচ্ছে ভারতে স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনের ১৮ মিলিয়ন ডোজ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া, যার মধ্যে মে মাসে ৩০ লক্ষ, জুন মাসে ৫০ লক্ষ এবং জুলাই মাস মিলিয়ে ১০ মিলিয়ন ডোজ পাঠানো হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে। সমগ্র দেশকে ত্রস্ত-ব্যস্ত করার পাশাপাশি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দেশের অনেক ক্ষতিও হয়েছে। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যেন বিলম্ব না করেন, এটা অত্যন্ত জরুরি।