আগরতলা, ৩০ এপ্রিল (হি. স.)৷৷ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস করোনাকালে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছে৷ তবে, করোনা মোকাবিলায় গত বছরের তুলনায় ত্রিপুরা অনেকটাই প্রস্তুত রয়েছে৷ আজ হিন্দুস্থান সমাচারের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে দৃঢ়তার সাথে একথা বলেন পশ্চিম ত্রিপুরা সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক৷ সাথে তিনি যোগ করেন, আগামী জুলাই-র মধ্যে আগরতলায় তিনটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে৷ তাতে, ত্রিপুরায় অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷
খোলামেলা আলোচনায় আজ তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কতটা ভয়ংকর তা ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের অসহায় অবস্থা দেখে আমরা অনুভব করতে পারছি৷ ফলে, নিজেকে সুরক্ষিত রাখাই এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে৷ তাঁর কথায়, সারা ত্রিপুরায় পশ্চিম জেলায় সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি৷ তাই, নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ কিন্ত, তাতেও শুধু অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন অনেকেই৷ তাঁর মতে, এখন সময় দোষারোপর নয়৷ বরং নিজেকে ওই মারণ ভাইরাস থেকে বাচানোই মূল লক্ষ্য স্থির করা উচিত বলে মনে করি৷ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অনেকের নৈশকালীন কারফিউ মানতে কষ্ট হচ্ছে৷ অথচ, প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিলে তাতেও দোষ হয়ে যাচ্ছে৷
তিনি মনে করিয়ে দেন, ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ একজন চিকিতক করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন৷ এখনই যদি সতর্ক না হই, তাহলে মানুষকে রক্ষা করা মুশকিল হয়ে দাড়াবে৷ তাই, জীবন সুরক্ষিত রাখতে এখন কিছুদিন ঘরে থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ৷
এদিন তিনি বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে অনেকের ওই রোগ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ছিল না৷ ফলে, চিকিতক, চিকিতা কর্মীরা ভীত সন্ত্রস্থ ছিলেন৷ কিন্ত, এখন তাঁরা সকলেই রোগর চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পর্কে অবগত হয়েছেন৷ ফলে, অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা আক্রান্তকে সুস্থ করে তুলতে তারা এখন অনেকটাই সাবলীল৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী-রা করোনা মোকাবিলায় ব্রতী রয়েছেন৷ আবারও যুদ্ধ জয়ের লক্ষ্যেই তাঁরা ঝাপিয়ে পড়েছেন৷ এদিন তিনি চিকিৎসকদের অকৃত্রিম ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়ে বলেন, করোনা মোকাবিলায় তাঁদের অবদান অসীম৷
আজ প্রতিমা ভৌমিক জানিয়েছেন, উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গর করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে চিকিতা সুবিধা নেওয়াই শ্রেয় হবে৷ তাতে, হাসপাতালের উপর চাপ কমবে এবং জটিল রোগীদের চিকিতা দেওয়া সম্ভব হবে৷ এক্ষেত্রে, প্রতিনিয়ত চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ থাকবে তাঁদের৷ এমনকি, তাঁদের প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থাও করা হবে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় প্রত্যেক মহকুমাকে ওই ধাঁচে ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে৷ কারণ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোনরকম ঝুকি নেওয়া সম্ভব নয়৷
এদিন তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, করোনা আক্রান্ত বহু শিক্ষিত সমাজের নাগরিক জেনেবুঝে ভুল করছেন৷ কারণ, তাঁরা সময়মত চিকিতা ব্যবস্থার সান্নিধ্যে যাচ্ছেন না৷ ফলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে প্রশাসনকে দোষারোপ করছেন৷ তাঁর সাফ কথা, আগামী বেশ কিছু দিন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া উচিত হবে না৷ তেমনি, দিনে অন্তত তিনবার গরম জলের ভাপ নেওয়া অভ্যাসে পরিনত করতে হবে৷ তিনি জানান, মেডিকেল ইন্টার্নশীপ করেছেন, এমন চিকিৎসকদের করোনা আক্রান্তদের চিকিতায় নিযুক্ত করা হবে৷
আজ তিনি জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় অক্সিজেনের ঘাটতি এবছর মিটিয়ে ফেলা হয়েছে৷ তেমনি, অক্সিজেন যুক্ত শয্যাও বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কোভিড কেয়ার সেন্টারে প্রস্তুত করা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় বর্তমানে ১৩৯৫টি অক্সিজেনের সুবিধাযুক্ত শয্যা রয়েছে৷ এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, পশ্চিম জেলায় জিবি হাসপাতালে ২২১টি অক্সিজেনের সুবিধাযুক্ত শয্যা সঙ্গে আইসিইউ-তে ৩৭টি শয্যা ও ১২টি ভেন্টিলেটর রয়েছে৷ তেমনি, হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গনে ৩০০ শয্যা, শালবাগান বিএসএফ-র হাসপাতালে ১০০ শয্যা, এবং আইএলএস হাসপাতালে ২০টি শয্যা রয়েছে অক্সিজেনের সুবিধা যুক্ত৷ সবমিলিয়ে শুধু আগরতলায় অক্সিজেনের সুবিধাযুক্ত ৬৪১টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, সিপাহীজলা জেলায় ১০০ শয্যা, গোমতি জেলায় ৫৫ শয্যা, দক্ষিণ জেলায় ২০০ শয্যা, ধলাই জেলায় ১৩০ শয্যা, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ১৫টি শয্যা এবং উনকোটি জেলায় ৫০টি শয্যা ইতিমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে৷
একই সঙ্গে এদিন তিনি ত্রিপুরায় মজুত অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় এই মুহুর্তে ৩৪২৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রয়েছে৷ তার মধ্যে জিবি হাসপাতালে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩৪৩টি, রিজিওনাল কেন্সার সেন্টারে ৭৫টি, আইজিএম হাসপাতালে ২৪৯টি এবং ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৫টি সিলিন্ডার মজুত রয়েছে৷ বাকি, ত্রিপুরার অন্য জেলায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মজুত রয়েছে৷ সঙ্গে তিন যোগ করেন, জিবি হাসপাতালে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে৷ তাতে প্রতি মিনিটে ১২০ লিটর অক্সিজেন প্রস্তুত করার ক্ষমতা রয়েছে৷
এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরায় পিএম কেয়ার ফান্ড থেকে তিনটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির অনুমোদন মিলেছে৷ আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ওই তিনটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরী হয়ে যাবে৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মিনিট-এ ৬০০ লিটর অক্সিজেন প্রস্তুত করার ক্ষমতা নিয়ে একটি প্ল্যান্ট শুরু হয়েছে৷ আইজিএম হাসপাতালেও অনুরোপ একটি প্ল্যান্ট শিগ্রই শুরু হবে৷ তাছাড়া, জিবি হাসপাতালে প্ল্যান্টটি জুলাই প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তৈরী হয়ে যাবে৷ ফলে, প্রশাসনিক ভাবে করোনা মোকাবিলায় ত্রিপুরা সমস্ত রকমভাবে প্রস্তুত রয়েছে৷ এখন জনগণ-র সচেতনতার খুবই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ তিনি ফের আক্ষেপ করে বলেন, করোনা বিধি পালনে অবহেলা আজ গোটা দেশ-কে এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে৷