আগরতলা, ২৪ এপ্রিল (হি. স.)৷৷ কেবলই প্রাণের খোঁজ ! ৪৮ ঘন্টা শুধু এম্বুলেন্সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটাছুটি করেও মিলল না কোন হাসপাতালে ঠাঁই৷ ফলে, করোনা আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় বহিঃরাজ্যে কর্মরত ত্রিপুরার এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে৷ হরিয়ানার রেওয়ারি জেলায় কর্মরত ত্রিপুরার যোগেন্দ্র নগরের নিবাসী মিঠুন চক্রবর্তীর মর্মান্তিক পরিণতি গোটা দেশের বিভীষিকাময় চিত্রই তুলে ধরেছে৷ করোনা এতটাই নিষ্ঠুর, তাঁর সহ কর্মীরাও তাঁকে কোন রকম সহায়তা করেননি৷ তবে, কঠিন পরিস্থিতিতে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এম্বুলেন্স চালক৷ তাঁকে বাঁচানোর জন্য ৪৮ ঘন্টা এম্বুলেন্স নিয়ে ছুটেছেন হরিয়ানা থেকে দিল্লি৷ মিঠুনে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের কাছ থেকে তাঁর মর্মান্তিক পরিণতির বিষয়ে জেনে শিউরে উঠেছে মন৷
মিঠুন চক্রবর্তী ত্রিপুরায় যোগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা ছিলেন৷ আগরতলায় টিআইটি থেকে ডিপ্লোমা করে বহিঃরাজ্যে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চ শিক্ষা নেন৷ পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর বহিঃরাজ্যেই কর্মজীবন শুরু করেন৷ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র কর্ম জীবনেও সাফল্য অর্জন করেন৷ তাঁর পরিবারে মা, স্ত্রী ও দেড় বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে৷ বর্তমানে তাঁরা কলকাতায় রাজারহাট-এ বসবাস করছেন৷ কর্মসূত্রে তিনি হরিয়ানার রেওয়ারি জেলায় থাকতেন৷
মিঠুনে নিকটাত্মীয় জানিয়েছেন, আজ থেকে তিন দিন আগে তিনি করোনা আক্রান্ত হন৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে কোন সাহায্য করেননি৷ বরং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়ে দায় এড়িয়ে যান৷ ওই আত্মীয়ের কথায়, রেওয়ারি জেলায় কোন হাসপাতালে করোনা আক্রান্তকে ভর্তি করার মত শয্যা ছিল না৷ ফলে মিঠুন একটি এম্বুলেন্স ভাড়া নেন এবং হাসপাতাল খুজতে শুরু করেন৷ কিন্ত কোথাও ঠাঁই মিলছিল না৷ ফলে, বাধ্য হয়ে হরিয়ানা থেকে দিল্লি যান মিঠুন৷ কিন্ত, দিল্লি-তে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ, তাই বাধ্য হয়ে ফের হরিয়ানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন৷
ওই আত্মীয় বলেন, গুরগাঁওতে গিয়ে এম্বুলেন্সের চালক মিঠুনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং শীঘ্রই হাসপাতাল ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান৷ এরই মধ্যে তাঁর এক আত্মীয় রেওয়ারি জেলায় একটি হাসপাতালে শয্যা খালি রয়েছে খোঁজ পান এবং তাঁকে সেখানে ভর্তি হতে বলেন৷ গতকাল রাত আনুমানিক দেড়টা নাগাদ রেওয়ারি জেলায় অরবিন্দ যাদব হাসপাতালে যখন তাঁকে ভর্তি করা হয় ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে৷ ওই আত্মীয় বিষাদের সুরে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে একটি ইনজেকশন দেন৷ কিন্ত, তাঁর বাঁচার কোন আশা নেই সেকথাও সোজা বলে দেন৷ আজ সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷
৪৮ ঘন্টা এম্বুলেন্সে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত শুধু প্রাণের খুঁজে ছুটলেন মিঠুন চক্রবর্তী৷ অথচ, একটি হাসপাতালেও তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা হল না৷ করোনার ভয়াবহতায় সারা দেশে মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে, সেই মিছিলে আরো একজন সামিল হলেন৷ তবে, বিনা চিকিৎসায় করুন পরিনতি মেনে নেওয়া খুবই কঠিন, মিঠুনের মৃত্যুতে শোকে পাথর ওই আত্মীয় এভাবেই বিলাপ করে গেলেন৷

