কেন্দ্র তৃতীয় পর্বে কোভিড-১৯- প্রতিহত করতে পয়লা মে থেকে টিকাকরণ প্রক্রিয়া আরো সহজ করছে
সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যায় নাগরিক টিকা পান তা নিশ্চিত করতে সরকার গত এক বছর ধরে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে এক বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে
বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযানের তৃতীয় পর্বে টিকার মূল্য নির্ধারণ, সংগ্রহ, কারা টিকা পাবেন এবং কিভাবে টিকা দেওয়া হবে – পুরো প্রক্রিয়াটিকে সহজ করা হয়েছে
সংশ্লিষ্ট সকলকে আঞ্চলিক চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার জন্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে
কোভিড-১৯ প্রতিহত করতে ১৮ বছরের ওপর প্রত্যেকে টিকা পাওয়ার যোগ্য
টিকা প্রস্তুতকারকরা উৎপাদন বাড়ালে তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে টিকা উৎপাদনের কাজে উৎসাহিত করা হচ্ছে
টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদনের ৫০% রাজ্য সরকারকে এবং খোলা বাজারে নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করতে পারবে
টিকা প্রস্তুতকারকদের থেকে রাজ্য সরকারগুলি সরাসরি অতিরিক্ত টিকা সংগ্রহ করতে পারবে, এছাড়াও ১৮ বছর বা তার ওপরের বয়সী যে কেউ টিকা পাবেন
কেন্দ্র স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা করোনা যোদ্ধা এবং যাঁদের বয়স ৪৫-এর ওপরে, তাঁদের আগে
নয়াদিল্লি, ১৯ এপ্রিল : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে আজ এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পয়লা মে থেকে ১৮ বছর বা তার বেশী বয়সী নাগরিকরা সকলেই টিকা পাবেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নাগরিক টিকা পান, কেন্দ্র সেই লক্ষ্যে গত এক বছর ধরে কাজ করে চলেছে। তিনি বলেছেন, বিশ্বের মধ্যে ভারতে দ্রুততার সঙ্গে টিকাকরণ অভিযান চলছে এবং আমরা এই কাজে আরও গতি আনব।
পরিকল্পনামাফিক কৌশলগত পদ্ধতিতে ভারতে জাতীয় স্তরে কোভিড-১৯ টিকাকরণের কৌশল তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন, ২০২০-র এপ্রিল থেকে টিকা তৈরি এবং টিকা দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা করার কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে এই অভিযান শুরু করার পাশাপাশি, বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য সবরকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্তরে সবথেকে ভালো পদ্ধতি অবলম্বন করা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান্য আচরণবিধি মেনে চলা এবং ভারতের প্রথম সারির গবেষকদের নিয়ে ন্যাশনাল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ভ্যাক্সিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর কোভিড-১৯ (এনইজিভিএসি) তৈরি করা হয়েছে। এদের পরামর্শ অনুযায়ী ভারত বিজ্ঞানসম্মতভাবে মহামারীর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কতটা টিকা পাওয়া যাবে এবং প্রথম কাদের টিকা দেওয়া হবে এ বিষয়ে ভারতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষই এই টিকা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯-এর জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচির প্রথম পর্যায় ১৬ই জানুয়ারি শুরু হয়েছিল। সেই সময় যাঁরা আমাদের রক্ষা করছেন, আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা করোনা যোদ্ধারা – এঁদের টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতাবস্থায় আসার পর পয়লা মার্চ থেকে আমাদের যে সমস্ত নাগরিকদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি তাঁদের রক্ষা করার জন্য অর্থাৎ, ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁরা আছেন, সেইসব মানুষদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। দেখা গেছে, দেশে কোভিড সংক্রমণে মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশই এই গোষ্ঠীর। টিকাকরণের কাজে গতি আনতে বেসরকারি ক্ষেত্রকেও ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সমস্ত স্তরের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেন্দ্র সমন্বয় বজায় রেখেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টিকা উৎপাদন সংস্থা, আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ রেখে চলেছে। অভূতপূর্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের বেসরকারি টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি তাদের ক্ষমতা বাড়িয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে গবেষণা, টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ভারতে টিকাকরণের বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো কাজগুলি এর ফলে সহজেই করা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশ মেনে ভারত প্রত্যেক টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। বিভিন্ন সংস্থার চাহিদা বোঝার জন্য আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও এই সংস্থাগুলিকে সাহায্য করতে অনুদান, অগ্রিম অর্থ প্রদান, টিকা উৎপাদনের জন্য আরও জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে, দেশে টিকা তৈরির দুটি সংস্থা (সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ও ভারত বায়োটেক)-কে জরুরি ভিত্তিতে উদ্ভাবিত টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, বিদেশি একটি টিকাকেও (স্পুটনিক) এ দেশে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই টিকা ভারতে তৈরি হবে।
টিকাকরণ অভিযানের শুরু থেকে কেন্দ্র বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। এখন যেহেতু টিকা উৎপাদনের ক্ষমতা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা এসেছে ও সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, তার ফলে মানুষের মধ্যে আস্থাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
টিকাকরণের তৃতীয় পর্যায়ে জাতীয় স্তরে টিকাকরণ কর্মসূচির সুবিধার জন্য টিকার দামের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এর ফলে, টিকা আরও বেশি উৎপাদন করা যাবে। এর জন্য টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে যার ফলে দেশী-বিদেশি টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি এ দেশে টিকা উৎপাদনে উৎসাহ পাবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্থানীয় চাহিদা পূরণে সাহায্য করার জন্য টিকার মূল্য নির্ধারণ, টিকা সংগ্রহ করা এবং কাদের টিকা দেওয়া হবে, কিভাবে টিকা দেওয়া হবে – এই সমস্ত বিষয়ে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
টিকাকরণ অভিযানের তৃতীয় পর্বে এই কাজে গতি আনতে জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচির ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য পয়লা মে থেকে কার্যকর হবে।
১) টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি মাসে যত টিকা উৎপাদন করবে তার ৫০ শতাংশ কেন্দ্রের ওষুধ গবেষণাগারগুলিকে, আর বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে এই সংস্থাগুলি রাজ্য সরকারগুলিকে দেবে এবং খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবে।
২) প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি স্বচ্ছতার সঙ্গে রাজ্য সরকার ও খোলা বাজারে যে টিকা পাঠাবে তার দাম আগেই ঘোষণা করবে। পয়লা মে-র আগে ঘোষিত এই মূল্যের ওপর ভিত্তি করে রাজ্য সরকার, বেসরকারি হাসপাতাল, বিভিন্ন শিল্প সংস্থা উৎপাদকদের কাছ থেকে টিকা সংগ্রহ করতে পারবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলি এই ৫০ শতাংশ উৎপাদিত টিকা থেকেই তাদের ভাগ পাবে। বেসরকারি টিকাকরণ উদ্যোগ স্বচ্ছ হতে হবে। তারা টিকার জন্য কত দাম নেবে সে বিষয়টি আগেই ঘোষণা করতে হবে। পয়লা মে থেকে যাঁদের বয়স ১৮ বা তার ওপরে, তাঁরা সকলেই টিকা নিতে পারবেন।
৩) কেন্দ্রের টিকা দেওয়ার উদ্যোগ বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্রে অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা করোনা যোদ্ধা এবং যাঁদের বয়স ৪৫-এর ওপরে তাঁরা সকলেই এই টিকা পাবেন এবং কেন্দ্র তাঁদের বিনামূল্যে এই টিকা দেবে।
৪) কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের পাশাপাশি অন্যান্য পদ্ধতিতে যে টিকাকরণ চলবে, এই সবগুলিতকেই জাতীয় টিকাকরণ অভিযানের মতোই সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, ‘CoWin’ প্ল্যাটফর্মে তথ্য জমা দিতে হবে। টিকাকরণের পর কারোর কোনও সমস্যা হলে তা জানাতে হবে। সমস্ত টিকাকরণ কেন্দ্রে কত টিকা মজুত আছে এবং টিকাকরণের জন্য কত মূল্য নির্ধারিত হয়েছে সেসব কিছুই জানাতে হবে।
৫) উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির কাছ থেকে কেন্দ্র ৫০ শতাংশ টিকা নেবে। বাকি ৫০ শতাংশ অন্যান্য সংস্থাগুলি সংগ্রহ করবে। দেশজুড়ে সব টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এছাড়া , সম্পূর্ণ তৈরি টিকা আমদানি করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র অনুমতি দেবে। এক্ষেত্রে এই টিকা কেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য সংস্থাগুলি ব্যবহার করতে পারবে।
৬) সংক্রমিত চিকিৎসাধীনের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এবং কত দ্রুততার সঙ্গে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেটি বিবেচনা করে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কেন্দ্র টিকা পাঠাবে। এক্ষেত্রে টিকার অপচয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে। এই নিয়ম অনুসারে রাজ্যগুলিকে অনেক আগেই তাদের জন্য বরাদ্দকৃত টিকার বিষয়ে জানানো হবে।
৭) স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সাড়িতে থাকা করোনা যোদ্ধা এবং যাঁদের বয়স ৪৫-এর ওপরে তাঁদের দ্বিতীয় ডোজটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেওয়া হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের একটি নির্দিষ্ট কৌশল তৈরি করতে হবে।
৮) পয়লা মে থেকে এই নীতি কার্যকর হবে। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হবে।