নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ চড়িলাম/ উদয়পুর/ তেলিয়ামুড়া/ খোয়াই/ বিলোনীয়া, ১০ এপ্রিল৷৷ ত্রিপুরার পাহাড়ে আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল৷ সদ্য আত্মপ্রকাশকারী প্রদ্যুতকিশোর দেববর্মণের দল তিপ্রা মথা তথা তিপ্রাল্যান্ড স্টেট পার্টি (টিএসপি) জোট, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এমন-কি শাসক জোট শরিক আইপিএফটি-কে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছে৷ গত ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ২৮ আসনের এডিসি নির্বাচনে তিপ্রা মথা একাই ১৮টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে কাউন্সিল গঠন করবে৷ স্বাভাবিকভাবে তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মণ এডিসির মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য (সিইএম) হবেন৷
এদিকে শাসক দল বিজেপি-ও যথেষ্ঠ ভালো ফলাফল করেছে৷ বিজেপি নয়টি আসনে জয়লাভ করেছে৷ নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছে একটি আসনে৷ দীর্ঘ ১৫ বছর পর এডিসি বামেদের হাতছাড়া হয়েছে আজ৷ তারা আজ খাতা খুলতেই পারেনি৷ এক্ষেত্রে প্রদ্যুত আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করবেন, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল৷
অনেকটাই অপ্রত্যাশিতভাবে তিপ্রা মথা আজ এডিসি নির্বাচনে ভালো ফলাফল করেছে৷ নির্বাচনের আগে শাসক জোট শরিক আইপিএফটি-র সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছিল তিপ্রা মথা৷ কিন্তু স্বল্পদিনের মধ্যেই মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে যায়৷ অন্যদিকে জোট ধর্ম বজায় রেখে আইপিএফটি বিজেপি-র সাথে মিলে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়৷ কিন্তু বিজেপি অধিকাংশ আসনে আইপিএফটি-কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা-র সুযোগ করে দেয়৷ ফলে, ১৪টি আসনে আইপিএফটি প্রার্থী এবং ১১টি আসনে বিজেপি প্রার্থী দেয়৷ তিনটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে বলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷
আজকের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আইপিএফটি-র সাথে জোট না বেঁধে বিজেপি একা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ফলাফল আরও ভালও হতো৷ কারণ, এককভাবে লড়াইয়ে নেমে ১১টি আসনে বিজেপি নয়টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি৷ এডিসি নির্বাচনে তিপ্রা মথা ঝড়ে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে আইপিএফটি৷ অবশ্য তিপ্রা মথা এবং বিজেপি-র কাছে এডিসি নির্বাচনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস ধরাশায়ী হয়েছে৷
দুটি মহাকুমার তিনটি আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হলো আইএনপিটি, তিপরা মথা জোট৷ দুই-তৃতীয়াংশ মার্জিনে জয় ছিনিয়ে নিয়ে তিপরা মথা এবং আইএনপিটি জোট৷নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক শনিবার সকাল আটটায় দুটি মহকুমার তিনটি আসনের ভোট গণনা শুরু হয়৷ পোস্টাল ব্যালট থেকে ইভিএম সব বিভাগে প্রায় সব রাউন্ডে গননা শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল জোট৷ তবে গণনা শুরুর অনেক আগে থেকেই গণনা কেন্দ্র তথা বিশালগড় মহকুমাশাসক কার্যালয় চত্বরে খানিকটা দূরে বিজিপি আইপিএফটি জোটের কর্মীরা দা লাঠি এবং ইটপাটকেল নিয়ে জড়ো হয়েছিল৷
বিপরীত দলের কাউন্টিং এজেন্টদের গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ পথ আটকানো হয় , অবাচ্য গালিগালাজ ওকরা হয় এ খবর শুনে তিপরা মথা এবং আইএনপিটি আড়াই হাজার কর্মী গণনা কেন্দ্রের সামনে জরো হয় তখনোই ধীরে ধীরে সরে যায় বিজেপির কর্মীরা পরে ঘটনাস্থলে নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে শুরু হয়েছিল ভোট গণনা৷ ১৯ আমতলী গোলাঘাটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আইএনপিটি দলের উমা শংকর দেববর্মা এবং বিজিপি আইপিএফটি বিশু দেববর্মা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল সিপিএমের মায়ারানি দেববর্মাএবং কংগ্রেসের রাজিব দেববর্মা আইএনপিটি দলের প্রার্থী উমা শংকর দেববর্মা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপির প্রার্থী বিশু দেববর্মার থেকে ১৪০৮৪টি ভোট বেশি পেয়ে জয়লাভ করেন তার প্রাপ্ত ভোট ২২ হাজার ৭৮ টি বিশু দেববর্মার প্রাপ্ত ভোট ৭৩৬৩ সিপিএম দলের প্রার্থী মায়ারানি দেববর্মা পেয়েছেন ১১৫৬টিএবং কংগ্রেস প্রার্থী রাজিব দেববমা পেয়েছেন ৪৫০টি এবং নির্দল প্রার্থী পেয়েছেন ৩২৭অপরদিকে নোটায় পড়েছে ৩২৭ টি ভোট৷
অপরদিকে জাম্পুইজলা মহাকুমার ১৭ পেকুয়ার জলা জন্মেজয়নগর প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ নিয়েছিল সিপিএম আইপিএফটি কংগ্রেস এবং তিপরামথা এই আসনে তিপরামথার প্রার্থী গণেশ দেববর্মা ১৯৯০৫ টি ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আইপিএফটি প্রার্থী প্রকাশ ভোট পায় ৫২২২ টি নোটায় পড়েছে ১৭৬ টি ভোট নির্বাচনের সবচেয়ে হেভিওয়েট আসন সংশ্লিষ্ট মহাকুমার ১৮ টাকারজলা জম্পুই জলা আসন৷ এ কেন্দ্রে অংশ নিয়েছিল টিএসপি কংগ্রেস সিপিএম এবং আইপিএফটি৷ পাহাড়ে নজরকাড়া আসনের নির্বাচনে টিএসপির সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মন ১৩৪৬১ টি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আইপিএফটি প্রার্থী ব্রজলাল দেববর্মা থেকে ১০৬৯৪ টি ভোট বেশি পান মহারাজা৷ ব্রজলাল দেববর্মা এর প্রাপ্ত ভোট ২৭৬৮ টি৷
গত ৬ এপ্রিল এ ডি সি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আজ সকাল আটটা অব্দি জনগণের রায় ই ভি এম বন্দি ছিলো৷ ত্রিপুরার ষোলোটি গণনা কেন্দ্রে এই আঠাশটি কেন্দ্রের ভোট গননার আয়োজন করা হয়েছে৷ ২০ কিল্লা -বাগমা এ ডি সি নির্বাচনী কেন্দ্র ও ২২ মির্জা-কাঠালিয়া- রাজাপুর এ ডি সি নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোট গণনা সাল আটটায় উদয়পুর রমেশ সুকলের বিচিত্রা হলে শুরু হয়৷ দুটি কাউন্টিং হলের একটিতে ২০ কিল্লা বাগমা ও অপরটিতে ২২ মির্জা-কাঠালিয়া-রাজাপুর কেন্দ্রের ভোট গণনা শুরু হয়৷ প্রতিটি কাউন্টিং হলের একদিকে পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনারার কাজ চলতে থাকে অন্য দিকে প্রতি কাউন্টিং হলে সাতটি টেবিলে সাতটি বুথের ই ভি এমের ভোট গণনা চলতে থাকে৷ ২০ কিল্লা-বাগমা কেন্দ্রে ৪৬টি বুথে ছয় রাউন্ড ফুল এবং সপ্তম রাউন্ডে ৪টি(চার)টি টেবিলে গণনার কাজ চলে ২২মির্জা- কাঁঠালিয়া -রাজাপুর ২নং কাউন্টিং হলে আট রাউন্ড ফুল এবং নবম রাউন্ডে ৬টি টেবিলে গণনা করা হয়৷ ২০ কিল্লা বাগমা কেন্দ্রের ফলাফলে প্রথম থেকেই রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি দলে মনোনীত প্রার্থী জয় কিশোর জমাতিয়া ত্রিপ্রা মথা প্রার্থী পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়ার কাছে হেরে যেতে থাকেন৷ রাউন্ড যত বাড়ছে পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়ার প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান তত বেশি হচ্ছে৷ শেষ পর্যন্ত সপ্তম রাউন্ড শেষে ত্রিপ্রা মথার প্রার্থী পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়া ৭৭০৩ভোটে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি দলে মনোনীত প্রার্থী জয় কিশোর জমাতিয়াকে পরাজিত করে৷ পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়ার প্রাপ্ত ভোট ১৪৮৮০,এর মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের ভোট আছে ২৮০টি, অপরদিকে জয় কিশোর জমাতিয়া মোট ভোট পেয়েছেন ৭১৭৭টি ভোট-যার মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের ভোট পেয়েছেন ৪০টি৷ এই কেন্দ্রে সি পি এমের অমৃত সাধন জমাতিয়া মোট ভোট পেয়েছেন- ২৪৮৮,রত্ন সাধন জমাতিয়া পেয়েছেন-২৮৪টি ভোট, অনিক্য সাধন জমাতিয়া পেয়েছেন শুধু ৯২ টি ভোট, গোল্ডেন জমাতিয়া পেয়েছেন ১৪৪টি ভোট এবং পোটায় ভোট পড়েছে ১১৮টি ভোট এবং টেন্ডার ভোট হয়েছে ৪টি(চার) ভোট৷ কিল্লা -বাগমা কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলো ২৯৫২২টি , বৈধ ভোট হয়েছে ২৫০৬৫টি ভোট৷এই কেন্দ্রে মোট প্রার্থী ছিলেন ছয় জন৷
অপরদিকে ২২ মির্জা- কাঁঠালিয়া- রাজাপুর এ ডি সি নির্বাচনী কেন্দ্রের বুথ সংখ্যা ছিলো ৬২টি৷মোট ভোটার ছিলো৪১১৪৭টি, বৈধ ভোট ৩৫৯২৯টি, টেন্ডার ভোট ১টি, নোটা ভোট পড়েছে ৩৪৬টি ভোট৷এই কেন্দ্রে মোট প্রার্থী ছিলেন আট জন৷প্রথম তিন রাউন্ড পর্যন্ত ত্রিপ্রা মথা প্রার্থী ডেভিড মোড়াসিং ২০৮ ভোটে এগিয়ে থাকলেও চতুর্থ রাউন্ড থেকে বি জে পি প্রার্থী পদ্ম লোচন ত্রিপুরার জয়ের ব্যবধান ক্রমশঃ বাড়তে থাকে৷ নবম রাউন্ড শেষে ৩৫২ ভোটে বিজেপি প্রার্থী পদ্ম লোচন ত্রিপুরা জয়লাভ করেন৷ ফলে উদয়পুর মহকুমা দুটি আসনের একটি বিজেপি প্রার্থী অপরটি নব গঠিত ত্রিপ্রা মথা৷ এই মহকুমায় ফলাফল এক এক৷ এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পদ্ম লোচন ত্রিপুরা ভোট পেয়েছেন-১৩৯২০ টি ,যার মধ্যে পোস্টাল ভোট আছে ৪৭টি৷ত্রিপ্রা মথা প্রার্থী ডেভিড মোড়াসিং মোট ভোট পেয়েছেন ১৩৫৬৮টি ভোট-যার মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের ভোট আছে ২২৩টি,সি পি এম প্রার্থী পরীক্ষিত মোড়াসিং মোট ভোট পেয়েছেন ৪৯৮৯টি , প্রনব রিয়াং মোট ভোট পেয়েছেন ৬৩৯টি ,শুক্লা চরনে নোয়াতিয়া মোট ভোট পেয়েছেন ২০১৮টি,মিলনপর্ব মোড়াসিং মোট ভোট পেয়েছেন ১৯২টি, মন হরি জমাতিয়া মোট ভোট পেয়েছেন ১৭১টি, সুনীল দেববর্মা মোট ভোট পেয়েছেন ৪৩২টি৷ এই কেন্দ্রে ত্রিপ্রা মথা প্রার্থী ডেভিড মোড়াসিং ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ করেন এবং সি পি এমের মতো ২২টি বুথে পুন:নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ছিলেন ৷

