BRAKING NEWS

লড়ছি জিতব বলেই, রাসবিহারী কেন্দ্রে আশাবাদী বিজেপির সুব্রত সাহা

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ১ এপ্রিল (হি.স.): কাশ্মীরের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোথাও যেন খুব মিল খুঁজে পাচ্ছেন কলকাতার রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা। বললেন, ‘‘ওখানে কাজটা করছে সন্ত্রাসবাদীরা। আর পশ্চিমবঙ্গে সেটা করে চলেছে সংবিধান স্বীকৃত একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল (তৃণমূল)।’’ এবার দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত কেন্দ্র রাসবিহারির বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন সুব্রত সাহা। ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে শোনালেন জীবনকাহিনী। পূর্বরুরুষরা থাকতেন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে। জন্ম কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে। ১৯৫৭ সালে। পুরুলিয়ার সৈনিক স্কুল থেকে পাশ করে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে রসায়ন নিয়ে ভর্তি হলেন। কিন্তু এনডিএ আর আইএসআই—দুটো ভাল জায়গা থেকে ভর্তির ডাক এল। এনডিএ-র পাঠ্যক্রমেই গেলেন। তার পর বিএসসি করেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে। অতঃপর ১৯৮৯ সালে ‘ইগনু’ থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা। ২০১০ সালে পেনসিলভানিয়ার আর্মি ওয়ার কলেজ থেকে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স। ২০১১ সালে ইনদওরে ডিফেন্স ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজে এম ফিল। দু’বছর পর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স ও স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে এম-এসসি। ২০২০ সালে ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে পিএইচ ডি।
দুই পুরুষের যুদ্ধের রক্ত বইছে গায়ে। বাবাও ছিলেন সেনা অফিসার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা সীমান্ত, বাটাভিয়া (ইন্দোনেশিয়া), মালয়েশিয়ায় ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির শরিক ছিলেন। বাবা অবসর নিয়েছেন ১৯৭২-এ। অবসর নেওয়ার পর বাবা আসানসোলে এসে শুরু করেন ব্যবসা। সেখানে বাড়িতে আমার ভাই থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের দূর্দশার কথা বলে গিয়ে জানালেন, “চোখের সামনেই যেন এ রাজ্যের সোনালি দিনগুলো হারিয়ে গেল। নকশাল আন্দোলন থেকে হাল আমল পর্যন্ত কেবলই অবনমন। তাই দিল্লি থেকে যখন বলল, সারা জীবন তো অনেক কাজ করলে, যাও এবার নিজের জায়গার জন্য কিছু করো। আমি আর দ্বিধা করিনি। ভাবলাম, এটা তো আরও একটা যুদ্ধই। পশ্চিমবঙ্গের মানুযকে বাঁচানোর জন্য।’’ রাসবিহারি-র তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন দেবাশিস কুমার। একদমই স্থানীয় বাসিন্দা। আপনি তো, প্রায় সারা জীবনই বাইরে বাইরে ছিলেন! আপনার ওপরেও কি বহিরাগত ছাপ পড়েছে? এই প্রতিবেদককে সুব্রতবাবুর জবাব, “কী অন্যায় বলুন! এ রাজ্যের কত জওয়ান-অফিসার আছেন। ফিরে এলে তাঁদের যদি বলে বহিরাগত, কীরকম লাগবে?”
সুব্রতবাবুর কথায়, “এ রাজ্য কোনও শিল্প আনতে পারেনি গত ১০ বছরে। ২০১১ সালে গালভরা প্রতিশ্রুতি ও তার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে শিল্পপতি ও বণিকসভাগুলিকে নিয় বহু সম্মেলন আয়োজনের পরেও। বরং বেকারত্ব বেড়েছে। গ্রামেও ন্যূনতম রোজগারের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে পারেনি তৃণমূল সরকার। সঙ্গে বেড়েছে দুর্নীতি, ঘুষ, তোলাবাজি।’’ এই সবই তাঁকে রাজনীতিতে আসার উৎসাহ জুগিয়েছে বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। ছাত্রজীবনে কখনও রাজনীতি করেননি। ফৌজির কর্মজীবনে রাজনীতি করা সম্ভবই হয়নি। প্রসঙ্গত, সুব্রতের আগে তাঁর সমান পদাধিকারী আর কোনও সেনাকর্তাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে দাঁড়াননি। জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরি সাংসদ ছিলেন বটে। কিন্তু তিনি ছিলেন রাজ্যসভায়।
কিরকম ফল হতে পারে? সুব্রতবাবুর জবাব, “ভীষণ আশাবাদি আমি।“ কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থী দক্ষ সংগঠক বলে পরিচিত। বিভিন্ন ক্লাব এবং পুজোর উদ্যোক্তাদের ঘনিষ্ঠ। তাঁর সঙ্গে লড়াইটা খুব কঠিন হয়ে গেল না? উত্তরে এই প্রতিবেদককে সুব্রতবাবু বললেন, “দেখুন, আর্মিতে একটা কথা আছে। ’হোয়েন দি গোইং গেটস টাফ, দি টাফ গেট গোইং’— যখন চাপ বাড়বে, যাঁরা সামাল দিতে পারবেন, তাঁরাই যাবেন। ‘সেনাবাহিনীর কেউই হারের ভয় পায় না। সব সময়ই অফিসার ও জওয়ানরা লড়েন জেতার অদম্য বাসনা নিয়ে। আমিও লড়ছি জিতব বলেই। আদত কথা হল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্কল্পপত্রকে বাস্তবায়িত করা। তার জন্য যা যা করণীয় সেগুলি করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব।’’ রাসবিহারি কেন্দ্রের ভোট সপ্তম পর্যায়ে, ২৬ এপ্রিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *