পশ্চিমবঙ্গ লিড : শনিবার প্রথম দফার নির্বাচন, কড়া নিরাপত্তায় সর্বত্র

কলকাতা, ২৬ মার্চ (হি. স.) : শনিবার থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ৮ দফা নির্বাচন। রাত পোহালেই প্রথম দফার ভোট শুরু। শেষ হয়েছে প্রথম দফার ভোটের প্রস্তুতিও। শনিবার ৫ জেলার ৩০টি আসনে রয়েছে ভোট গ্রহন। পুরো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া থাকবে কড়া নিরাপত্তায় মোড়া। ফলাফল ঘোষণা হবে ২ মে। শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সব খতিয়ে দেখেন। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে কড়া ব্যবস্থা করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন।শনিবার রাজ্যের ৫ জেলা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মোট ৩০টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর, এগরাতে ভোট হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর, গড়বেতা, শালবনি, মেদিনীপুর কেন্দ্রে নির্বাচন হবে এই দফায়। ঝাড়গ্রামের বিনপুর, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রেও ভোট হবে শনিবার। পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি, বলরামপুর, বান্দোয়ান, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, কাশীপুর, পারা ও রঘুনাথপুর কেন্দ্র এবং বাঁকুড়ার রাইপুর, রানিবাঁধ, ছাতনা ও শালতোড়া কেন্দ্রেও ভোট হবে প্রথম দফাতেই।প্রথম দফার নির্বাচনে রাজ্যে বুথে বুথে মোতায়েন করা হয়েছে ৬৫৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। শুক্রবার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীও পৌঁছতে শুরু করে দেয় একাধিক কেন্দ্রে। ইতিমধ্যে রাজ্যে ৮০০ কোম্পানি বাহিনী পৌঁছে গিয়েছে। তার মধ্যে ৬৫৯ কোম্পানি শনিবারের নির্বাচনে সুরক্ষার কাজে মোতায়েন থাকবে।  এছাড়া ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তিনজন বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও ১১ হাজার রাজ্য পুলিশের মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনের আগে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার নির্দেশ আগেই দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। অবাঞ্ছিত ও সন্দেজনক কেউ যাতে ভোটকেন্দ্রের সামনে অশান্তি তৈরি না করতে পারে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহযোগিতায় সেটিও খতিয়ে দেখবেন কমিশন প্রতিনিধিরা।অন্য যেসব বিষয়ের ওপর নজর রাখা হবে সেগুলো হল, সিসিটিভি-তে নজরদারি, রিটার্নিং অফিসারের অফিসের দুশো মিটারের মধ্যে সর্বাধিক দুটি গাড়ি প্রভৃতি।

এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের করোনা-সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলোর ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এদিন ভোটকর্মীরাও নিজেদের বুথে পৌঁছে প্রস্তুতিপর্ব শুরু করে দেন। করোনা পরিস্থিতির জন্য এবারের ভোটে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ভোটকর্মীকে স্যানিটাইজার, গ্লাভস দেওয়া হচ্ছে। ইভিএম চেক করে তারপর ভোট কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, আগেই ইভিএম নিয়ে ভোটারদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন মুখ্যসচিব। তাতে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশিকাগুলি মেনে চলার পরামর্শ দেন মুখ্য সচিব। তিনি বলেন, “করোনা বাড়ছে, আপনারা সতর্ক থাকুন। কিছু জেলাতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভোটগ্রহণ শুরু হবে তাই দ্রুত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।” একইসঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি সিল করা ও প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

এছাড়া করোনা জন্য ও বয়স্ক ভোটারদের কথা মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার সব বুথ একতলায় করা হবে। করোনার জন্য ভোটের লাইন ও অধিক জমায়েত এড়াতে ভোটের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। আগে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট হলেও, এবার তা বাড়িয়ে সন্ধে ৬.৩০ পর্যন্ত করা হয়েছে।ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে শনিবার রাজ্যের একাধিক জায়গায় নানারকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এদিন সকালে শালবনির বাগমারী এলাকায় রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে একটি গাছে লালমোহন সোরেন নামে এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনায় এবার কমিশন রিপোর্ট তলব করেছে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় শাসকদলের দিকে খুনের অভিযোগ করেছেন বিজেপি স্থানীয় নেতৃত্ব।

উল্লেখ্য, দিনহাটায় বিজেপির পার্টি অফিস সংলগ্ন পশু চিকিৎসালয়ের বারান্দায় মণ্ডল সভাপতি অমিত সরকারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় বৃহস্পতিবারই রিপোর্ট তলব করে কমিশন। বৃহস্পতিবার রাতে রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোচবিহারের সিতাই বিধানসভার ভেটাগুড়ি এলাকা। সংঘর্ষে তির ধনুক নিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে। একে এপরের দিকে হামলার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি।  এদিন জয়পুরের মুরারিগঞ্জে তৃণমূল পার্টি অফিসে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আচমকাই বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। পার্টি অফিসে থাকা কর্মীরা জখম হন। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল কার্যালয়ের ভিতরেই বোমা মজুত ছিল। তা ফেটেই এত বড় দুর্ঘটনা। জয়পুরে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মানিক রায়ের অভিযোগ, তৃণমূল পার্টি অফিসের মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভোটের আগে এখানকার পরিস্থিতি ঠিক কেমন। আবার তৃণমূল নেতৃত্বের পালটা দাবি, কার্যালয়ে কয়েকজন মিলে কাজ করার সময়ে সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা তাঁদের উপর বোমাবাজি করেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এবারে বঙ্গের ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের কাছে কার্যত চ্যালেঞ্জ। তাই ভোটের অনেক আগে থেকেই স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও নানা জায়গায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ, বোমাবাজির মতো ঘটনা ঘটছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *