ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় করবে এই সফর : মোদি

নয়াদিল্লি, ঢাকা, ২৬ মার্চ (হি.স.) : ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুদিনের সফরে ঢাকা গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সকালেই দিল্লি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন মোদী, কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যান ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরে মোদীকে স্বাগত জানাতে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদী বিমান থেকে নেমে বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করা মাত্রই তাঁকে স্বাগত জানান হাসিনা।

বিমানবন্দরে মোদীকে গার্ড অফ অনারে সম্মান জানানো হয়। দেওয়া হয় লাল গালিচা। বিমানবন্দরে দুই প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময়ও করেন।মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকে মোদী চলে যান সাভারে, সেখানে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান। ১১.৩৫ মিনিটে স্মৃতিসৌধে পৌঁছন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সফর চলাকালীনই বাংলায় টুইট করে বাংলাদেশ সফরের কথা জানান প্রধামন্ত্রী। মোদী লেখেন, ‘ঢাকা পৌঁছলাম। বিমানবন্দরে বিশেষ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। এই সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে’। জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মোদী একটি অর্জুন গাছের চারা রোপণ করেছেন।এদিকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে তাঁর ট্যুইটের হ্যান্ডেলে বাংলাদেশ সফর নিয়ে একটি বার্তা দিয়েছেন। সেই ট্যুইট নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, “প্রাচীন যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে মায়ের পুজো করতে আমি উদগ্রীব। এটি পুরাণ-বর্ণিত ৫১টি শক্তিপীঠের একটি। ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্যও আমি বিশেষ ভাবে আগ্রহী। সেখান থেকেই শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর আধ্যাত্বিক বার্তা দিয়েছিলেন।”বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী আরএসএস-এর কর্মসূচিকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন।

রাজ্যে যেদিন প্রথম দফার নির্বাচন শুরু হচ্ছে সেই ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের মন্দিরে যাওয়ার ফলে রাজ্যের মতুয়ারা নির্বাচনে প্রভাবিত হবেন। বিরোধীদের এই অভিযোগকে আরও সত্যি প্রমাণ করেছে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য। বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, ওড়াকান্দিতে জন্ম মতুয়া সম্প্রদায়ের গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের। তাঁর হাত ধরেই পশ্চিমবাংলায় মতুয়া ভাবাদর্শ ছড়িয়ে পড়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থানে গিয়ে প্রণাম করে এলে তার প্রভাব মতুয়া ভোট টানতে বিজেপিকে সুবিধা করে দেবে। এই প্রসঙ্গে মোদীর ওড়াকান্দি সফরের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব। তাঁদের অভিযোগ, “নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর পদটিকে কলুষিত করছেন।”প্রশ্ন উঠছে , বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি কেন ওড়াকান্দিতে যাচ্ছেন তা নিয়ে। প্রশ্ন ওঠার অন্যতম কারণ বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে যশোরের ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান। আর যেদিন প্রধানমন্ত্রী ওড়াকান্দিতে যাচ্ছেন সেই দিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের প্রথম দফা বিধানসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে। রাজ্যে মতুয়া

ভোট সরকার গঠনে নির্ণায়ক শক্তি। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই ওড়াকান্দি সফিরকে ঘিরে মতুয়া ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারা বৈঠক করেছেন।এই প্রসঙ্গে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফা নির্বাচনের দিন প্রধানমন্ত্রীর ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থানে যাওয়ার অর্থ মতুয়া ভোটকে প্রভাবিত করা। আসলে প্রধানমন্ত্রী সব কাজই আরএসএস-এর কর্মসূচিকে সামনে রেখে ও প্রধান গুরুত্ব দিয়েই করে চলেছেন। এটাও তেমনই আর একটা কাজ। এই জাতীয় কাজ একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে করা শোভনীয় নয়।”এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে গিয়ে যশোরের শেষ প্রান্তে ওড়াকান্দিতে চলে যাচ্ছেন হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থানে। আসলে প্রধানমন্ত্রী খুব দৃঢ়ভাবে এই কাজ করে রাজ্যের মতুয়া ভোটকে প্রভাবিত করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর পদটিকেও নরেন্দ্র মোদী একই ভাবে কলুষিত করছেন। এটা নরেন্দ্র মোদীর কুৎসিত রাজনৈতিক প্রয়াস, আমি এর বিরোধিতা করছি।”বাংলাদেশের মানুষদের দীর্ঘদিনের আশা এবার পুরণ হতে চলেছে। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশ ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন পরিষেবা চালু হোক। এবার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। আগামীকাল ২৭ মার্চ থেকে এই যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এই ট্রেনের সূচনা করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। দু’দিনের সফরে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। আগামীকাল শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকা আন্তর্জাতিক ট্রেন উদ্বোধন করবেন। শুক্রবার দুপুরে ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাপা নেতারা মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। ঢাকা সফরের শুরুর দিনেই সে দেশের বিনোদন, খেলা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোদী। মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্মানিত বোধ করছেন বাংলাদেশী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এছাড়াও মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অভিনেত্রী জয়া আহসান, নুসরাত ফারিয়া, সংগীতশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি, ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা-সহ আরও অনেকে। উল্লেখ্য, ৫১ শক্তিপীঠের একটি যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরেও পুজো দেবেন মোদী। করোনা-পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ঢাকা সফর এসেছিলেন, এবার তিনি দ্বিতীয় দফায় ঢাকা সফরে আসলে।