কেরালায় বিজেপিকে ক্ষমতায় আনা অসম্ভব নয় : বিপ্লব দেব

ত্রিবান্দ্রম, ১৬ মার্চ (হি.স.) : ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম দুর্গ ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে বিজেপি৷ ফলে, কেরালায় তা সম্ভব হবে না এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই৷ আজ মঙ্গলবার কেরালায় নির্বাচনি প্রচারে এসে ত্রিবান্দ্রমে সাংবাদিক সম্মেলনে দৃঢ়তার সাথে এ-কথা বলেন ত্রিপুরায় বিজেপি-র জয়ে অন্যতম কাণ্ডারী তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সাথে সিপিএম ও কংগ্রেসকে লক্ষ্য করে তাঁর কটাক্ষ, বঙ্গে দোস্তি অথচ কেরালায় কুস্তি, জনগণ সবই বুঝেন৷


তিনি বলেন, পাঁচ বছর অন্তর কেরালায় ইউডিএফ এবং এলডিএফ সরকার গঠন করছে৷ তাতে, কংগ্রেসের বিকল্প সিপিএম এবং সিপিএম-এর বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসকে মানুষ বেছে নিচ্ছেন৷ কিন্তু ত্রিপুরায় জনগণ সিপিএম-এর বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসকে বেছে নেননি৷ তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের ডাকে সাড়া দিয়েছেন৷ ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে এক লহমায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন ত্রিপুরাবাসী৷

বিপ্লবের দাবি, ত্রিপুরায় মানুষ সিপিএম-এর রাজত্বে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন৷ অপশাসন, দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণ মানুষের শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল৷ তাই, বিজেপি-কে ত্রিপুরাবাসী বেছে নিয়েছেন৷ তার সুফল তাঁরা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন৷ তিনি বলেন, কেরালায় কোনও উন্নয়ন হয়নি৷ অথচ, এই রাজ্যের চারদিকে ঘেরা রয়েছে সমুদ্র, সমুদ্রবন্দর, খনি, খনিজ পদার্থ এবং বন-জঙ্গল৷ তার সিকিভাগ ত্রিপুরায় উপলব্ধ হলে রাজ্য উন্নতির চরম সীমায় পৌঁছে যাওয়া কেউ আটকাতে পারত না৷ তাঁর দাবি, হাজারো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ত্রিপুরা গত তিন বছরে কেরালা থেকে অনেক বেশি উন্নতি করেছে৷


মুখ্যমন্ত্রী দেবের কথায়, বামপন্থী মানসিকতার জন্যই কেরালা উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে৷ ত্রিপুরা-ও একইভাবে পিছিয়ে ছিল, বামেদের নিশানা করে বলেন তিনি৷ বিপ্লবের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি বাংলাদেশের সাথে সংযোগ স্থাপনে মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেছেন৷ তাতে, চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৭০ কিমি হয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বৃদ্ধি দর ছিল ১১.৪১ শতাংশ, সেই তুলনায় কেরালায় মাত্র ১১.২১ শতাংশ৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ত্রিপুরায় সিএজিআর ছিল ১৬.৩ শতাংশ, কেরালায় মাত্র ৬.১৯ শতাংশ৷ লঘু, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত ত্রিপুরায় বৃদ্ধি ১৪.০২ শতাংশ৷ অথচ কেরালায় বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৯.৭৩ শতাংশ৷ এদিন শিক্ষা ক্ষেত্রে ত্রিপুরার প্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, এখন ত্রিপুরায় ছাত্র-শিক্ষক আনুপাতিক হার ১৫:১, কিন্তু কেরালায় সেই হার ২৮:১৷

এদিন তিনি নয়া শিক্ষা নীতি লাগু না করায় কেরালা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ তাঁর দাবি, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং কলেজ স্তরে স্ট্যালিন, লেনিন পড়ানো হলেও পাঠ্যক্রমে মহাত্মা গান্ধী, স্বামী বিবেকানন্দ অথবা ভারতীয় ইতিহাস স্থান পায়নি৷ তাঁর কথায়, স্ট্যালিন, কার্ল মার্ক সম্পর্কে জানার প্রয়োজন নেই এমনটা বলছি না৷ কিন্তু ভারতের ইতিহাস এবং তার সাথে যুক্ত ব্যক্তিত্ব যেমন মহাত্মা গান্ধী, বাল গঙ্গাধর তিলক, এপিজে আব্দুল কালাম সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি৷
এদিন সিপিএম এবং কংগ্রেসকে এক আসনে বসিয়ে নিশানা করে বলেন, রাজ্যভিত্তিক বোঝাপড়ার মজাদার উদাহরণ তৈরি করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গে তাদের দোস্তি রয়েছে, অথচ কেরালায় কুস্তি করছে৷ ত্রিপুরায়ও তাদের একই বোঝাপড়া ছিল৷ তাই, সুযোগ পেয়েই মানুষ সিপিএম-কে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে৷ বিজেপি-কে বেছে নিয়েছে, তবুও কংগ্রেসকে ত্রিপুরার মসনদে বসায়নি৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম দুর্গ ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন জনগণ৷ কেরালায়ও তা সম্ভব হবে৷ বাম-কংগ্রেসের বিকল্প শুধু বিজেপি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *