লাদাখ, ২১ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : ভারত-চিনের দশম দফার সামরিক কমান্ডার পর্যায়ের ম্যারাথন বৈঠক ইতিবাচকভাবেই শেষ হল। ১৬ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠকে এখনই দেপসাং, গোগরা ও হট স্প্রিং থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও বৈঠকে এই এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে ভারত চিনকে কড়া বার্তা দিয়েছে বলেই খবর। এবিষয়ে আগামীদিনে আরও খুঁটিনাটি আলোচনা চালানো হবে।
শনিবার সকাল ১০টায় প্যাঙ্গংয়ের দক্ষিণ তীরে চুসুলের কাছে মল্ডোতে হওয়া এই বৈঠকে মূলত দেপসাং, হট স্প্রিং ও গোগরা থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। ১৬ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠকে কীভাবে এই সব এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে তার পদ্ধতি নিয়েই দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এর আগেও অনেক বার সেনা প্রত্যাহার করার কথা বলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করেনি চিন। তাই লাল ফৌজ আগে পিছু হটবে। তারপরেই ভারতীয় বাহিনীও পিছু হটবে। কীভাবে ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে তা নিয়ে আলোচনা করতেই নাকি এতটা সময় লেগে যায়।
জানা গেছে এই বৈঠকে লাদাখে ১,৫৯৭ কিলোমিটারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যে সমস্যা আছে, তা সমাধানের জন্য একটি রূপরেখা তৈরির বিষয়ে একমত হয়েছেন ভারতীয় এবং চিনা সেনার প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকের বিষয়ে ভারতীয় সেনার এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘১৬ ঘণ্টার আলোচনা ভালোভাবেই কেটেছে। তবে গোগরা-হট স্প্রিংয়ে সেনা সরানো এবং দেপসাং-এ টহলদারির অধিকারের বিষয়ে যে সমস্যা আছে, তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। ’
গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল প্যাঙ্গং লেকের দুই তীর থেকে সেনা সরানোর কাজ। তা শেষ হয়েছে। প্যাঙ্গং হ্রদের দুই তীরে আর কোনও দেশের সেনা নেই বলেই জানা গিয়েছে। উপগ্রহ চিত্রে হ্রদের উত্তর তীরে জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে যে চিনা মিলিটারি ক্যাম্প দেখা গিয়েছিল সেগুলি আর নেই।
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদে জানিয়েছেন, “ধাপে ধাপে একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে ও সব কিছু খতিয়ে দেখে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে রাজি হয়েছে দু’দেশ।” তিনি জানিয়েছিলেন, প্যাঙ্গং হ্রদ থেকে সেনা সরে যাওয়ার পরেই লাদাখের অন্য অংশে শান্তি স্থাপনের বিষয়ে আলোচনায় বসবে ভারত ও চিন। সেই কাজই শুরু হয়েছে।
তবে প্যাঙ্গংয়ের পাহাড়ি রেঞ্জ থেকে সেনা সরাতে বলে চিন নতুন করে ফাঁদ পাততে পারে বলেও মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। চিন সেনা সরানো শুরু করলে, পিছিয়ে আসতে হবে ভারতীয় বাহিনীকেও। সেই সুযোগে ফের আগ্রাসনের চেষ্টা করতে পারে লাল সেনা, সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ভারতীয় সেনারা জানাচ্ছে, চিনের স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে খুব ভালভাবেই পরিচিত ভারত। তাই প্রতি মূহূর্তেই সতর্ক নজর রাখা হবে চিনের বাহিনীর ওপরে।