BRAKING NEWS

অসমে ২০২১-২২ অর্থবৰ্ষের ৬০,৭৮৪.০৩ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ অর্থমন্ত্রী, শুক্রবার রাত থেকে কমছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম

গুয়াহাটি, ১২ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : অসম বিধানসভার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে সনোয়াল সরকারের অন্তিম বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। গীতায় শ্ৰীকৃষ্ণের বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে আগামী ছয় মাসের জন্য ৬০,৭৮৪.০৩ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ অন্তর্বর্তী বাজেট (ভোট অন অ্যাকাউন্ট) পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে পাঁচবার বাজেট পেশের সুযোগ পাওয়ায় ড. শৰ্মা মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাজেট ভাষণে মন্ত্রী জানান, আজ শুক্রবার রাত থেকে রাজ্যে শুক্রবার থেকে রাজ্যে পেট্ৰোল-ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা করে কমবে। বাতিল করা হয়েছে মদের ওপর বলবৎ ২৫ শতাংশ উপকর। জানান, কোভিড পরিস্থিতিতে মদ এবং পেট্রোল-ডিজেলের ওপর উপকর বলবৎ করা হয়েছিল। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় উপকর বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কৰ্মী সহায়িকাদের বেতন ৫০০ টাকা করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। ৬১.৫০২ জন অঙ্গনওয়াড়ি কৰ্মী এবং ৫৬,০০৮ জন সহায়িকা এই সুবিধা লাভ করবেন। অন্যদিকে আগামী ২০ ফেব্ৰুয়ারির মধ্যে সরকার চা শ্ৰমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করবে, জানান অর্থমন্ত্রী। তবে চা বাগান ধন পুরস্কার মেলার দ্বারা উপকৃত হয়েছেন ৭.৫ লক্ষ সুবিধাভোগী।

২০১৬ সালে রাজ্য জোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩ জুন অসমের অৰ্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে দাখিলকৃত শ্বেতপত্ৰের স্মৃতিচারণ করে রাজ্যের বিধ্বস্ত অৰ্থনীতিকে কীভাবে চাঙ্গা করা হয়েছে তার বিস্তৃত তথ্য তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা। রূপকোঁওর জ্যোতিপ্রকাশ আগরওয়ালা রচিত কবিতার দুই পঙক্তি উচ্চারণ করে ২০১৯ অর্থবৰ্ষে রাজ্যের মাথাপিছু আয় ২০,৬৯২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান তিনি। অসমে বিকাশের হার ৮ শতাংশের বেশি হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান, রাজ্যের কর রাজস্বের পরিমাণও ১৬,৫২৮ কোটি টাকা হয়েছে। ঘরুয়া উৎপাদনের হার বেড়েছে ৭.৭১ শতাংশ। এছাড়া, কাঁচা তেলের রয়েল্টি হিসেবে অসম ৭,৭৫৬ কোটি টাকা লাভ করেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

বাজেট ভাষণে মন্ত্রী আরও জানান, কামাখ্যা মন্দিরের উন্নয়নে ৩০০ কোটি টাকা ধাৰ্য করা হয়েছে। এছাড়া কনকলতা মহিলা সবলীকরণ প্রকল্পের বলে ১,৯৯,৭০৫টি আত্মসহায়ক গোষ্ঠী উপকৃত হয়েছে। ১৫ থেকে ১৮ কন্যা সন্তানকে ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন মন্ত্রী। এভাবে, অসম মালা প্রকল্পের অধীনে ৮,২১০ কোটি টাকা ধাৰ্য করে রাজ্যের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অসম মালার অধীনে নিৰ্মাণ হবে ৮৯০ কিলোমিটার রাস্তা। অরুণোদয় প্রকল্পে ১৭,২৫,৫৯০ জন মহিলা উপকৃত হয়েছেন। এই প্রকল্পে অর্থের পরিমাণ ৮৩০ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৫০০ জন মহিলাকে। উত্তরণের ১২৪টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে। এছাড়া রাজ্যের চা বাগান অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ হবে ৮৯৬ কিলোমিটার। কেবল তা-ই নয়, অসম দৰ্শন প্রকল্পের দরুন উপকৃত হয়েছে রাজ্যের ৯১৫টি ধৰ্মীয় প্রতিষ্ঠান। প্ৰতিটি ধৰ্মীয় প্রতিষ্ঠানে ১০ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে, বাজেট ভাষণে জানান মন্ত্রী ড. শর্মা।

তিনি জানান, ৮,৭৫৬টি নামঘরে আড়াই লক্ষ করে ইতিমধ্যে অনুদান দেওয়া হয়েছে মোট ২১৮ কোটি টাকা। জানান, রাজ্যের ৮৭০টি সেতুর কাজ চলছে তীব্রগতিতে। ১০০০টি সেতুকে পাকা করার পাশাপাশি রেলওয়ে অভারব্রিজ নিৰ্মাণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২,০৪১টি সেতুর কাজ শুরু হয়েছে এবং এর মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে ৮৭০টির কাজ। কোভিডকালে ১,০০০টি আইসিইউ শয্যা, ৪,৫০০টি নিয়মিত হাসপাতালের শয্যা, ১,৪০৮টি ভেন্টিলেটর, ৪,৫৪১টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১,৬০,৬১২ জন দিব্যাঙ্গকে মাসিক ভাতা হিয়ে এক হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। দীনদয়াল দিব্যাঙ্গ পেনশন প্রকল্পে ব্যয় ৯৬.৩৬ কোটি টাকা।  বিদ্যালক্ষ্মী প্রকল্পে ৩৭.৬০ কোটি টাকার ঋণে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অভিনন্দন-এর মাধ্যমে ৫,৭৯৯টি অ্যাকাউন্টে এককালীন সাহায্য প্রদান করা হয়েছে।

তাছাড়া অসমের পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা হয়েছে ১৩,৫০১ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৫৮ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৮৯ জন এক টাকা মূল্যের চাল পেয়েছেন। এর জন্য রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছে ৭৬৭ কোটি টাকা। এভাবে প্ৰজ্ঞান ভারতী প্রকল্পের অধীনে রাজ্যে বছরে ২ লক্ষ টাকার কম উপার্জনশীল পরিবারের ১৭ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৯০ জন ছাত্ৰছাত্ৰী বিনামূল্যে কলেজে ভরতির সুবিধা পেয়েছে। শিক্ষাঋণের বিপরীতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য প্রদান। এখন পর্যন্ত ইন্দির মিরি বিধবা পেনশন প্রকল্পের বলে এক লক্ষ ৭০ হাজার বিধবা পেনশন লাভ করেছেন। এছাড়া মরান, মটক, চুতিয়া, আহোম সম্প্রদায়ের কীৰ্তিচিহ্ন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি সম্প্রদায়কে ১২৫ কোটি করে ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *