নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জানুয়ারি৷৷ ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয়া মিজোরামের রিয়াং শরণার্থীদের একাংশকে ত্রিপুরায় স্থায়ীভাবে পুণর্বাসনের প্রক্রিয়া বাস্তব রূপ নিল শনিবার৷ এদিন রাজ্যের একটি অংশে কিছু শরণার্থীকে স্থায়ীভাবে পুণর্বাসন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এদিন শিলংয়ে অনুষ্ঠি এনইসির বৈঠক বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন৷ বৈঠকে পৌরহিত্য করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, সোমবার থেকে আরও কয়েকটি পরিবারকে পুণর্বাসন দেয়া হবে৷ দফায় দফায় রাজ্য সরকার এই পুণর্র্বাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করবে৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিনের বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য এবং আগামীদিনের কর্মপন্থার বিস্তারিত তুলে ধরেন৷ কয়েকটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যেসব প্রকল্প পাঠানো হয়েছে সেগুলির দ্রুত আর্থিক মঞ্জুরিরও দাবী করেছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নরেন্দ্র মোদিজি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের প্রতি বিশেষ নজর ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন৷ এই অঞ্চলের অর্থনীতি, পরিকাঠামো, কর্মসংস্থান, শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নে নীতিরও পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চল পরিষদের প্লেনারি বৈঠকে৷ আজ শিলংয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা এনইসি-র চেয়ারম্যান অমিত শাহের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী এই বৈঠক৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডোনার মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী তথা এনইসি-র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জিতেন্দ্র সিং এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীরাও৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, রাজ্যকে মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত আড়াই বছরে বিভিন্ন বড় উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্যের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে এবং প্শাসন ও কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এসেছে৷ বেড়েছে স্বরোজগারীর সংখ্যা এবং যুব সম্পদায়ের মধ্যে স্বনির্ভরতার মানসিকতা৷ রাজ্যের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজ্যের মাথাপিছু আয় যা ছিলো ২০১৭-১৮ বছরে ১,০০,৪৪৪ টাকা বেড়ে ২০১৯-২০ বছরে দাঁড়িয়েছে ১,২৩,৬৩০ টাকা অর্থাৎ ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ জীবিকা অর্জনের পথ খুলে দিতে এবং গ্রামীণ জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতা তৈরি করতে খুব শীঘই মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনা নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হবে৷ ফল, সব্জি চাষ, পোল্টি ফার্মিং, মৎস্য চাষ, প্রাণী পালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রায় ৬ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারকে সহায়তা করা হবে এই প্রকল্পে৷ কোভিড-১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শহর এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য চালু করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর যোজনা৷ এই প্রকল্পে দোকানদার, ব্যবসায়ী, রাস্তার পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স, বীমা ইত্যাদির সুুযোগ পাবেন এবং এসসি/এসটি/ওবিসি/সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগম থেকে ঋণ দেওয়া হবে৷ সেজন্য ২০টি স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থার এলাকায় বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে৷
কৃষিক্ষেত্রে শস্য বৈচিত্র্য ও ভ্যালু এডিশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ভু-া এবং মাষকলাই ডাল, লাভজনক শস্য চাষ এবং অর্গানিক ফার্মিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বর্গাদার যোজনায় রাজ্যের ৫০,০০০ বর্গাদার চাষির জন্য নাবার্ড থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ২০,৩৭৭ জন ভূমিহীন বর্গাদার এই ঋণ লাভ করেছেন৷ ক’ষকদের আয় ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত সেচ কর্মসূচিতে ২০২৪-২৫-এর মধ্যে ৬৫,৫২৯ হেক্টর ক’ষি জমি সেচের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ক’ষকদের কাছ থেকে নূ্যনতম সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় শুরু করে এখন পর্যন্ত ২৭,৭৩৫ জন ক’ষক থেকে ৪৮,৭১৬ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করে মোট ৮৬.৬৫ কোটি টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশী ফুল চাষ, মাশরুম, ড্রাগন ফ্রুট, আনারস চাষেও নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ আনারসের বাজারজাতকরণের সুুবিধার জন্য তিন জেলায় সোলার নির্ভর কুলিং চেম্বার নির্মাণ করা হয়েছে এবং সারা বছর যোগান রাখতে কেমিক্যাল স্ট্যাগারিং পদ্ধতিতে আনারস চাষ করা হচ্ছে৷
দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাবার উৎপাদক ত্রিপুরার রাবার শিট-এর গুণমান বাড়াতে মোক হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে৷ অটোমোটিভ টায়ার্স ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (আতমা)-র বিশেষ প্রকল্পে ১১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লক্ষ হেক্টর এলাকায় রাবার চাষ করা হবে৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে ৭০০০ মেট্রিকটন৷ ২০২২-২৩ বছরের মধ্যে তা আরও বাড়াতে বায়োফ্লক, খাঁচার মাধ্যমে ও বৈ’ানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ বাছুরের উৎপাদন বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্পে সে’ সর্টেড সিমেন প্রক্রিয়ায় ক’ত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য সম্মতভাবে মাংস উৎপাদনের জন্য পেচারথলে স্প্লটার হাউস নির্মাণ করা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাক’তিক ভারসাম্য বজায় রাখতে বিগত আড়াই বছরে ১৩,৮৪৫.৩৩ হেক্টর এলাকায় বনায়ন করা হয়েছে এবং সৌন্দর্যায়নের উদ্দেশ্যে ১,০০৬.৩০ কিমি রাস্তার পাশে গাছ লাগানো হয়েছে এবং ৯১২.৫০ কিমি নদীর তীরেও গাছ লাগানো হয়েছে৷ তেমনি বাঁশ লাগানো হয়েছে ৬৪৫.০০ হেক্টর এলাকায়৷ এই প্রথম রাজ্যে মুলি বাঁশের বিসুকট তৈরি করা হয়েছে৷ বাঁশের ঝাড় এবং বোতল তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে৷ এ সমস্ত শিক্ষা সামগ্রী তৈরির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বনধন বিকাশ কর্মসূচিতে ১ হাজার জন কারু শিল্পীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ আগর চাষ ও আগরবাতি তৈরি ও বাজারজাতকরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী আগরবাতি আত্মনির্ভর মিশনে৷ ১৫ আগস্ট, ২০২২-এর মধ্যে সমস্ত বাড়িতে বিনামূল্যে পানীয় জলের সংযোগ দিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অটল জলধারা মিশন শুরু করা হয় এবং ২০১৯-২০ বছরে ২২ শতাংশ বাড়িতে এই পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে গেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে এবং ত্রিপুরা থেকে রপ্তানি বেড়েছে ২০১৭-১৮ বছরের ৬.৪৬ কোটি টাকা থেকে ২০১৯-২০-তে ৩০.৩৪ কোটি টাকায়৷ আমদানি রপ্তানি আরও বাড়াতে সাবমে একটি বিশেষ জোন অর্থনৈতিক অ’ল (সেজ) গড়ে তোলা হচ্ছে৷ চ-গ্রাম বন্দরের সাথে যোগাযোগের সুুবিধার জন্য ফেণী নদীর উপর মৈত্রী সেতুর নির্মাণ শেষের পথে৷ সাবমে একটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট স্থাপনের প্রস্তাবও রয়েছে৷ আগরতলা আখাউড়া রেললাইন ২০২১-এর মার্চ-এর মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ফেণী (বাংলাদেশ) এবং বিলোনীয়া (ভারত)-এর মধ্যে রেল সংযোগের ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রকের সাথে আলোচনা চলছে৷ ২০২০-এর ৫ সেপ্ঢেম্বর ভাসমান জেটি উদ্বোধনের সাথে শ্রীমন্তপুর টার্মিনাল জলপথের মানচিত্রে অন্তর্ভক্ত হয়েছে৷ এমবিবি বিমানবন্দরের উন্নয়নে নির্মাণ কাজও শেষের পথে৷ সম্পতি ২৬২.০০ কিমি দৈর্ঘ্যের ৯টি জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় সড়ক যোগাযোগ ও জাতীয় সড়ক দপ্তরের মন্ত্রী৷ এতে ব্যয় হবে মোট ৩,১৯০ কোটি টাকা৷ রাজ্যে ৭৫৩০.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৪টি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে৷ রাজ্যে পর্যটক আগমনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নে ত্রিপুরা পর্যটন নীতি-২০২০-২৫ চালু করা হয়েছে৷ পর্যটনের পরিকাঠামো উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের কাছে একটি ৫০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷
রাজ্যে জনজাতি কল্যাণে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের নাম জনজাতি কল্যাণ দপ্তর করা হয়েছে৷ স্বশাসিত জেলা পরিষদের নাম পরিবর্তন করে দ্য ত্রিপুরা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর ভোকাল ফর লোকালের সাথে সাজয্য রেখে স্থানীয় হস্ততাঁত ও হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের বাজারজাতকরণে প্রয়াস চলছে এবং স্থানীয় রিসার ব্যাণ্ডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মানধন প্রকল্প এবং ব্যবসায়ী ও স্বনির্ভর উদ্যোগীদের জন্য জাতীয় পেনশন প্রকল্প বাস্তবায়নে উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে৷
এই প্রথম বিদ্যৎ পরিষেবার উন্নয়নে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এডিবি থেকে ৪৫৯৪.৫৮ কোটি টাকা পাওয়া গেছে৷ প্রধান আবাস যোজনা (শহর এলাকায়) রূপায়ণে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বা’লের মধ্যে প্রথম এবং সারা দেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ এই অ’লের মধ্যে ত্রিপুরাই একমাত্র রাজ্য এবং দেশের ছয়টি রাজ্যের মধ্যে একটি যেখানে লাইট হাউস প্রকল্পে ১,০০০টি ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর জন্য৷ শহুরে আবাসনের অঙ্গ হিসেবে আগরতলায় আরও ১,৫০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত দু’বছরে ত্রিপুরা পুলিশ বেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যাও হাস পেয়েছে৷ শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আইএএস পরীক্ষার জন্য চালু হয়েছে লক্ষ্য প্রকল্প, ২২টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে অনলাইনে ভর্তি চালু হয়েছে, ৬২টি বাংলা মিডিয়াম বিদ্যালয়কে ইংরেজি মিডিয়ামে উন্নীত করা হয়েছে, ২০টি সরকারি বিদ্যালয় সিবিএসই-র আওতায় এসেছে, বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে, সুুপার ৩০ ও বছর বাঁচাও নামে নতুন প্রকল্প চালু হয়েছে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য দেওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী বার্ষিক রাজ্য পুরস্কার৷
এনইসি প্রকল্পের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২০-এর জন মাসে ২০২০-২১ অর্থবরের জন্য মোট ১১৯.০২ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প হিসেবে এনইসি-র কাছে পাঠানো হয়৷ তারমধ্যে এনইসি ৩টি প্রকল্প যার আর্থিক মূল্য ৩২.৭২ কোটি টাকা সুুপারিশ করে পাঠায়৷ বাকি ৭টি প্রকল্প (৮৬.৩০ কোটি টাকা) ২০২০-২১ বছরে সুুপারিশ করতে পারে এনইসি৷ বর্তমানে এনইসি বাজেটের ৬০ শতাংশ উত্তর-পূর্বা’লের ৮টি রাজ্যের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়৷ বাকি ৪০ শতাংশ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সাহায্যে প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য রাখা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এনইসি বাজেটের ৯০ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে বন্টন করে বাকি ১০ শতাংশ শুধু কেন্দ্রীয় মন্ত্রকগুলির অধীনে আ’লিক প্রকল্পের জন্য রাখার প্রস্তাব দেন এবং সেই সমস্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্য সচিবের নেত’ত্বাধীন কমিটির মাধ্যমে চূড়ান্ত করারও প্রস্তাব দেন৷ তাছাড়া রাজ্যগুলিকে যেন যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকল্পে পরিবর্তন করতে দেওয়া হয়৷ এনইসি-র ৬৬তম প্লেনারী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে ত্রিপুরাকে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে, ১২ শতাংশ বাজেটের টাকা দেওয়া হবে৷ কিন্তু দেখা গেছে গত ৫ বছরে (২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১) মাত্র ৫.৭১ শতাংশ অর্থ দেওয়া হয়েছে৷ তাই তিনি ১২ শতাংশ প্রাপ্য অর্থ প্রদানের অনুরোধ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই অ’লের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক দপ্তরের কর্মীদের ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে পারে এনইসি যাতে উন্নতমানের ডিপিআর তৈরি হয় ও প্রকল্প রূপায়ণ সঠিক হয়৷ প্রতিটি রাজ্যে বছরে কমপক্ষে একবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ এনইসি-র নির্দেশিকা ২০২০ অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে এনইসি বাজেটের ৩০ শতাংশ (২০৫.৮৯ কোটি টাকা) সরিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্পের জন্য৷
মুখ্যমন্ত্রী তিনটি প্রস্তাবিত প্রকল্প ১) সাঁওতালদের জন্য কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (৩.০৫ কোটি টাকা) ২) এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইবেরিতে হিন্দি বিভাগ চালু করা (০.১০ কোটি টাকা) এবং ৫টি ডিগ্রি কলেজে হিন্দি ভাষার বিকাশ (০.৫০ কোটি টাকা) দ্রত অনুমোদনের জন্য এনইসি-কে পাঠানো হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন প্রকল্পে অর্থ প্রদানের সময় যেন সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়৷
২০২০-২৫ অর্থবছরে নর্থ ইস্ট রোড সেক্টর ডেভেলপমেন্ট স্কিমে (এনইআর এসডিএস) ১১৯৪.২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯৮.৫৫ কিমি মোট দৈর্ঘ্যের ১৯টি সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে এনইসি৷ এই প্রকল্পগুলি যেন অনুমোদন করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৮-এর ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নীতি ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠকে পর্যটন, চা, বাঁশ, ডেয়ারি ও মৎস্যচাষ এই ৫টি ক্ষেত্রকে মুখ্য ক্ষেত্র হিসেবে সুুপারিশ করা হয়৷ তার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বরের বৈঠকে রাজ্যগুলিকে উল্লিখিত ক্ষেত্রে প’ বর্ষীয় কর্ম পরিকল্পনা বানিয়ে প্রকল্পের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে পাঠাতে বলেন৷ সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকার রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন নামে ডেয়ারি ক্ষেত্রে ৮৬.৪৯ কোটি টাকার ৫ বছরের (২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫) প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ধর্মনগর বিলোনীয়া ভায়া আগরতলা ও সোনামুড়া বিকল্প রেললাইনের প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ পেঁচারথল-বিলোনীয়া বিকল্প রেলপথের ব্যাপারেও শীঘই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টিয়ার রেলের কাছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা এ মডেল স্টেট রোড ম্যাপ শীর্ষক একটি বুকলেট রাজ্য সরকার নীতি আয়োগের কাছে পাঠিয়েছে যাতে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য ছাড় না দেওয়া মন্ত্রক / দপ্তরগুলির ১০ শতাংশ জিবিএস অর্থ প্রদান করা হয় এবং বিষয়টি ত্বরান্বিত করার অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তাছাড়া, সিএসএস প্রকল্প রূপায়ণে ত্রিপুরায় অর্থের সংকট দেখা দেয় কেননা ৯০ : ১০ নিয়মে রাজ্যের পক্ষে ১০ শতাংশ অর্থ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে৷ এরফলে বহু প্রকল্প রূপায়ণ করা সম্ভব হয় না৷ তাই তিনি এনইসি প্রকল্পে ১০০ শতাংশ অর্থ প্রদানের কথা বলেন৷ আবার এ’টার্নেলি এইডেড প্রকল্পে ৮০ শতাংশ ঋণের ২০ শতাংশ রাজ্যগুলিকে দিতে হয়৷ তাছাড়া ঋণের অর্থেরও ১০ শতাংশ রাজ্যকে বহন করতে হয়৷ উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলির সীমিত আর্থিক সম্বলের নিরিখে তিনি প্রকল্প মূল্যের ২০ শতাংশ ভাগীদারীর বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার অনুরোধ করেন৷ এসব প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়াটিও খুবই জটিল বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এতে অনুমোদন পেতে বহু সময় লেগে যায়৷ তিনি এসব জটিলতা দূর করার জন্য বলেন৷ সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্যে এরকম এ’টার্নেলি এইডেড প্রকল্পের প্রয়োজন আছে৷ আর পুরোনো প্রকল্পগুলি শেষ না হলে ভারত সরকারের অর্থ দপ্তর কোনও নতুন প্রকল্প নিচ্ছে না৷ তিনি বিশেষ করে সড়ক ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প বিবেচনা করার অনুরোধ জানান৷ দেখা গেছে জিএসটি বাবদ কম অর্থ সংগ্রহের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় করের স্বাভাবিক প্রাপ্য অংশে ২৬৩৬.০০ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার অতিরিক্ত গ্যাপ গ্রান্ট দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণের কথা বিবেচনা করতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
তাছাড়া কোভিড মহামারিকালে নিয়মিত নির্দেশিকা প্রদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, রাজ্যে কোভিডজনিত মৃত্যর হার হাস পেয়েছে এবং সুুস্থতার হার বেড়েছে৷ রাজ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে এবং কোভিডের ইউকে নমুনা চিহ্ণিত করার সিকুয়েন্সিং মেশিন আনা হচ্ছে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র নেত’ত্বে উত্তর-পূর্বা’লকে বাকি রাজ্যগুলির সমকক্ষে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং এনইসি বৈঠকে এই আলোচনা উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা নেবে৷

