নয়াদিল্লি/আগরতলা, ১১ জানুয়ারি৷৷ করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত অসাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিদর্শন তুলে ধরেছে৷ সোমবার এ কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তাঁর মতে করোনাকে প্রতিহত করতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আলাপচারিতা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে৷
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে করোনা প্রতিষেধক দেওয়া হবে৷ পূর্ণমাত্রায় সংবেদনশীলতার সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে বিশ্বের অন্য প্রান্তের যেভাবে দাবানলের মতন করোনা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের এমনটা হয়নি৷ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে একাধিক আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ করোনাকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অসাধারণ নিদর্শন প্রদর্শন করেছে ভারত৷ করোনা সংকটের বিরুদ্ধে এই ঐক্যবদ্ধতার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছে ভারত৷ প্রথম দফায় প্রায় তিন কোটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে৷ দ্বিতীয় দফায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের এবং ৫০ বছর বয়সের নিচে যাদের কোমোরবিডিটি রয়েছে তাদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে৷
কোভিড-১৯ টিকাকরণের কৌশলগত রূপরেখা তৈরি করতে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে এক ভার্চয়াল বৈঠকে মিলিত হন৷ রাজ্য সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এই ভার্চয়াল বৈঠকে অংশ নেন৷ ভার্চয়াল বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য শাখার মিশন ডিরেক্টর ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সবাল উপস্থিত ছিলেন৷ ভার্চয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে৷ যার ফলে বিশ্বের অন্যত্র যেভাবে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে, আমাদের দেশে সেভাবে ছড়ায়নি৷
করোনা সংকটকালে দেশবাসী সম্মিলিতভাবে একযোগে কাজ করছে৷ প্রসঙ্গক্রমে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শা’কে মরণ করে দেশবাসীকে কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান রাখেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের সচেতনতার ফলে ভারত আজ করোনাকে প্রতিহত করে টিকাকরণ কর্মসূচিতে অবতীর্ণ হয়েছে৷ তবে পাশাপাশি তিনি জনসাধারণকে সাবধানতা অবলম্বন করার কথাও উল্লেখ করেন৷ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশব্যাপী আগামী ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ থেকে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হবে৷ ভারতে তৈরি দুটি ভ্যাকসিন দেশে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে যা সবার জন্য গর্বের বিষয়৷ তিনি বলেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে যাবতীয় সতর্কতা নিয়েছেন বি’ানীরা৷ ভারতে তৈরি দুটি ভ্যাকসিন অন্য দেশের ভ্যাকসিনের তুলনায় সস্তা৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে৷ এরপর সাফাই কর্মী, পুলিশ কর্মী সহ অন্য প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হবে৷ দ্বিতীয় দফায় ৫০ উর্ধ ব্যক্তিদের কোভিড টিকা দেওয়া হবে৷ তার সাথে ৫০-এর নীচে অথচ যাদের কোমর্বিডিটি বেশি তাদেরও টিকা দেওয়া হবে৷ প্রথম দফায় ৩ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে৷ ভ্যাকসিনের ব্যয়ভার বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তিনি আরও বলেন, টিকাকরণের তথ্য সঠিক সময় কো-উইন ডিজিটাল অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড সুুনিশ্চিত করতে হবে৷ প্রথম ডোজ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে৷ দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হওয়ার পর বেনিফিসিয়ারিদের চূড়ান্ত সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷ বিপুল জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্য সরকারগুলির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে কোনও প্রকার গুজব যেন না ছড়ায় সেই দিকে নজরদারি রাখার পাশাপাশি নাগরিকদের সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সচেতনতা সুুনিশ্চিত করতে হবে৷
একই সাথে অন্যান্য যে রুটিন ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালু আছে সেইগুলিকে যথাযথ চালু রাখার জন্যও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ভার্চয়াল বৈঠকে দেশের ৯টি রাজ্যে বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলির কথা উল্লেখ করে বলেন, যেসব রাজ্যে বার্ড ফ্লু নেই সেই সব রাজ্যগুলির স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে৷ পাশাপাশি তিনি বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন কোনও প্রকার গুজব না ছড়ায় সেই দিকেও নজর রাখতে বলেন৷ তাছাড়াও ভার্চয়াল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ৷ ভার্চয়াল বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব রাজেশ ভূষণ কোভিড-১৯ টিকাকরণের কর্মসূচি রূপায়ণে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপনা করেন৷

