নিলামবাজার (অসম), ৩১ ডিসেম্বর (হি.স.) : বাংলাদেশি দুষ্কৃতীর হাতে অপহৃত ভারতীয় যুবক। ঘটনার নেপথ্যে ব্যাবসায়ীক লেনদেন থাকার সন্দেহ। পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি ওপারের অপহরণকারীদের। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর ভূমিকায়ও তীব্র সন্দেহ জনমনে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে নিলামবাজার পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিলামবাজার পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, নিলামবাজার থানাধীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা জনৈক সফিক উদ্দিনের ছেলে দিলোয়ার হুসেন চলতি মাসের ২৭ তারিখ রবিবার একই থানা এলাকার দলগ্রাম সংলগ্ন নয়াগ্রামের আফতার আলির ছেলে এলিম উদ্দিনের সঙ্গে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যায়। কিন্ত দিলোয়ার এদিন রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সোমবার সকালে দিলোয়ারের বড় ভাইয়ের মোবাইলে অজ্ঞাতপরিচয় বিদেশি একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনটি রিসিভ করতেই ওপার থেকে দিলোয়ারের সঙ্গী এলিম উদ্দিনের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। এলিম জানায় দিলোয়ার ও তাঁকে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা আটক করে রেখেছে। মুক্তিপণের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করছে। এলিমের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে দিলোয়ারের বড় ভাই চঞ্চল হয়ে ওঠেন। তিনি সাতপাঁচ না ভেবে এদিনই (২৮ তারিখ) নিলিমবাজার থানায় অপহরণ সংক্রান্ত এক এফআইআর দায়ের করেন।
পরের দিন মঙ্গলবার সকালে রহস্যজনকভাবে এলিম উদ্দিন তাঁর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। এলিমের একা ফিরে আসা নিয়ে চারদিকে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। এলিমের রহস্যজনকভাবে বাড়ি ফেরার খবরটি সীমান্ত এলাকায় চাউর হতে সময় লাগেনি। এক সময় খবর গিয়ে পৌঁছে নিলামবাজার থানায়। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ নিলামবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি বুলবুল শইকিয়া এএসআই রহিম উদ্দিন বড়ভুইয়াঁ সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এলিম জানায়, দিলোয়ার ও সে বহুদিন থেকে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছে। ঘটনার দিন (রবিবার) সে ও দিলোয়ার সীমান্ত এলাকায় এক গোপন আস্তানায় তাঁদের কাজে নিয়োজিত ছিল। এমতাবস্থায় একদল বাংলাদেশি দুষ্কৃতী তাঁদেরকে অপহরণ করে সে-দেশে নিয়ে যায়। অপহরণ করে তাঁদের মুক্তির বিনিময়ে নগদ অর্থ দাবি করে।
এলিম পুলিশকে আরও জানায়, বাংলাদেশে তাঁর আত্মীয় রয়েছেন। তাঁরা দাবি অনুযায়ী মুক্তি পণ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এলিমের বয়ানে সন্তুষ্ট না হয়ে নিলামবাজার পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করে তদন্তের স্বার্থে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করে দু দিনের রিমান্ডে নিজেদের নিয়েছে।
এদিকে দিলোয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা দিলোয়ারের মুক্তিপণের অর্থ এলিম উদ্দিনের কাছে দেওয়া হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই খবর তাঁরা পেয়েছেন। দিলোয়ারের পরিবারের কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে নিলামবাজার পুলিশ। অন্যদিকে আটক এলিমকে বুধবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। নিলামবাজার পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এলিমের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করতে নিলামবাজার পুলিশ এলিমকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ মুখ খুলতে চাইছে না। কীভাবে অপহৃত দিলোয়ারকে ওপার বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের কবল থেকে উদ্ধার করা যায় তা নিয়ে পুলিশ জাল বিছানোর কাজ শুরু করেছে।
অপরদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকা জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে বাংলাদেশি দুর্বৃত্তরা ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করে কী করে অপহরণ কাণ্ড সংগঠিত করতে পারল, তা নিয়ে সীমান্ত এলাকার জনমনে চলছে জল্পনা। দিলোয়ারের পরিবারের অভিযোগ এই অপহরণ কাণ্ডে এলিমের হাত রয়েছে। ঘটনাটি আদৌ অপহরণ না-এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, নিরপেক্ষ পুলিশি তদন্তেই তা বেড়িয়ে আসবে।