গুয়াহাটি, ২৮ ডিসেম্বর (হি.স.) : বাংলাকে উপেক্ষা করে বড়ো ভাষাকে সরকারি সহযোগী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিধানসভার অধিবেশনে সরকার পক্ষকে তীব্র আক্রমণ করেছেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। গত ২২ ডিসেম্বর রাজ্য ক্যাবিনেটের বৈঠকে বড়ো ভাষাকে সরকারের সহযোগী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারি কাজে এবার অসমিয়ার পাশাপাশি বড়ো ভাষাও ব্যবহার করা যাবে। ক্যাবিনেটের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে আজ সোমবার থেকে অনুষ্ঠেয় তিনদিনের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই সরব হলেন কংগ্রেসি বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
অধ্যক্ষ হীতেশ গোস্বামীর মাধ্যমে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ সরকার পক্ষকে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, বড়ো ভাষায় কথা বলেন মাত্র ১ লক্ষ ৪১ হাজার মানুষ। অথচ সমগ্র অসমে বাংলা ভাষায় কথা বলেন ৯০ লক্ষ ২৪ হাজারের বেশি জনতা। রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহৎ সংখ্যক জনগণ বাংলা ভাষী। তা-হলে বাংলাভাষী এত বিশাল জনগণকে উপেক্ষা করে বড়ো ভাষাকে সহযোগী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো কেন? এই প্রশ্ন তুলে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ ক্যাবিনেটের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙালি এবং বাংলা ভাষার প্রতি চরম অবমাননা করা হয়েছে বলেও বিধানসভা অধিবেশনে সরব হন কংগ্রেসি বিধায়ক কমলাক্ষ।
কমলাক্ষ বলেন, ভাষা সার্কুলার আইন ১৯৬০-এ রাজ্যের প্রতিটি ভাষাকে সমমর্যাদা দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ বিজেপি সরকার ভাষা সার্কুলারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের মর্জিমাফিক রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে একের পর এক সংবিধান বিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেন বিধায়ক। তিনি বলেন, আসলে বাঙালি-প্রীতি হলো বিজেপি সরকারের বহিরাবরণ। অন্তরে বাঙালি বিদ্বেষ পুষে রেখেই বিশাল সংখ্যক বাঙালির সঙ্গে বিজেপি সরকার চরম বঞ্চনা করছে। এভবে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ সদনে তুলেন বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
বিধায়ক কমলাক্ষের এই প্রশ্নের উত্তরে সংসদীয় পরিক্রমা মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি বলেন, রাজ্যের প্রতিটি ভাষাকে সরকার সমান মর্যাদা ও সম্মান দিয়ে থাকে। বাংলা ভাষা একটি উন্নত ভাষা। বরাক উপত্যকা সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সরকারি বাংলা মিডিয়াম স্কুল রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের অন্যান্য ভাষা যেমন, বড়ো, দেউরি, কছাড়ি, কারবি, মিসিং সহ আরও অনেক ভাষা এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার মতো উন্নত হতে পারেনি। তাই পশ্চাদপদ এই সকল ভাষা ও জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বসবাসরত প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা বলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। বড়ো চুক্তির বলেই বড়ো ভাষাকে সহযোগী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এখানে রাজ্য সরকারের অন্য ভাষাকে অবমাননা করার কোনও উদ্দেশ্য নেই বলে বিধানসভায় জানান মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি।