BRAKING NEWS

কৃষকদের জীবনে আনন্দ, সকলকে আনন্দিত করে তোলে : প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি, ২৫ ডিসেম্বর (হি.স.): কৃষি আইনের প্রতিবাদে এই মুহূর্তে ক্ষোভে ফুঁসছেন অন্নদাতারা। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই কৃষকরা অনড়। এমতাবস্থায় কৃষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী জানালেন, কৃষকদের জীবনে আনন্দ, সকলকে আনন্দিত করে তোলে। শুক্রবার ভিভিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কিশান সম্মান নিধি যোজনার পরবর্তী কিস্তি হিসেবে ৯ কোটিরও বেশি কৃষকের একাউন্টে ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের সঙ্গে বার্তালাপ সেরেছেন তিনি। পিএম কিশান সম্মান নিধি, কিশান ক্রেডিট কার্ড, ফসল বিমার মতো নানা প্রকল্পের সুবিধা কৃষকরা পাচ্ছেন কিনা, সেই সব বিষয়ে খোঁজ খবর নেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেছেন, কৃষকদের জীবনে আনন্দ, আমাদের সকলকে আনন্দিত করে তোলে। আজকের দিন অত্যন্ত পবিত্র। কৃষকরা আজ যে সম্মান নিধি পেয়েছেন, এরসঙ্গে এই দিন অনেক উপলক্ষ্যের সঙ্গম হিসেবে পরিণত হয়েছে। আজ দেশের ৯ কোটিরও বেশি কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সরাসরি, একটি ক্লিকের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। যখন থেকে এই পরিকল্পনা শুরু হয়েছে, তখন থেকে এযাবৎ ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা কৃষকদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে পৌঁছেছে।

কৃষকদের সঙ্গে বার্তালাপের অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ শিকার। পশ্চিমবঙ্গে ধানমন্ত্রী কিশান সম্মান নিধি চালু না করায় কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গে কিশান নিধি চালু করা হচ্ছে না।’ কংগ্রেস, বাম এবং তৃণমূল সরকারকে তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কৃষকদের আলোচনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার আপনাদের সব সমস্যা নিয়ে খোলা মনে আলোচনা করতে তৈরি। আপনারা তথ্য পরিসংখ্যান ও যুক্তি দিয়ে আলোচনায় বসুন। আপনাদের সব সমস্যা সরকার যথাসাধ্য সমাধানের চেষ্টা করবে।” 

এদিন শুরুতেই মোদী বলেন, ‘আজকের দিনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আজ ক্রিসমাস, সারা দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির ভাবনা বজায় থাক। আজ প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর জন্মজয়ন্তী। এই উপলক্ষে দেশবাসী গুড গভর্ন্যান্স ডে পালন করছে। গ্রাম ও গরিবদের দুর্দশা ঘোচাতে অটলজি অনেক কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্প থেকে সোনালি চতুর্ভূজ প্রকল্প করেছেন। গোটা দেশ তাঁকে প্রণাম জানাচ্ছে। আজ দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, গরিব, কৃষকদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, তারও সূচনা বাজপেয়ীজির হাতেই। আমি খুশি, যে আজ দিল্লি থেকে যে টাকা কৃষকদের দেওয়া হয়, তা সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে, কোনও ভাবে অন্য হাতে যায় না। কম্পিউটারের একটা ক্লিকেই ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা পৌঁছে গেল।

প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘পিএম কিশান নিধি প্রকল্পের যাতে অপব্যবহার না হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু আমার দুঃখ সারা দেশে চালু হলেও শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ চালু করেনি কিসান সম্মান নিধি প্রকল্প। রাজনৈতিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্প চালু করছে না? রাজনৈতিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্প চালু করছে না” মোদী বলেন, অনলাইনে বহু কৃষক আবেদন করেছেন, কিন্তু রাজ্য সরকার সেই আবেদনও আটকে রেখেছে। ত ৩ দশক ধরে একটি দল সরকার চালিয়েছে, বাংলাকে কোথা থেকে কোথায় নামিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ বছর ধরে রাজ্য চালাচ্ছেন। ৩০ বছর সরকার চালিয়ে যে দল এখন বিরোধী, তাঁরাও এক দিনও আন্দোলন করেনি। এই দল কৃষকদের জন্য এক দিনও আন্দোলন করেননি, কৃষকদের জন্য এক বারও আওয়াজ তোলেনি। আবার এরাই (বামেরা) পৌঁছে গিয়েছে পঞ্জাবে, এরাই দিল্লিতে আন্দোলন করছে। কেরলে এদেরই সরকার। কিন্তু কেরলে মান্ডি চালু করছে না। আগের সরকারের বিভিন্ন নীতির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছোট কৃষকদের। কিন্তু কৃষকরা এদের চিনে ফেলেছেন। ফসল বিমার কোনও সুবিধা পেতেন না, চাষের জল মিলত না, তবু অনেক পরিশ্রম করে যে ফসল ফলাতেন, তাঁদের সেই ফসল বিক্রি করতে পারতেন না।’

মোদী বলেন, ‘কৃষক গরিব থেকে আরও গরিব হয়েছে। আমরা ২০১৫ সালে কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম। কৃষিতে উন্নত দেশগুলিতে কী ভাবে কাজ হচ্ছে, কী কাজ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে আমরা একাধিক লক্ষ্যে কাজ করতে শুরু করলাম।  চাষের খরচ কমাতে আমাদের সরকার অনেক কাজ করেছে। সারা দেশের কৃষকদের কিশান সম্মান নিধির সুবিধা মিলছে। সামান্য প্রিমিয়াম দিয়ে বড় অঙ্কের ফসল বিমার টাকা মিলছে, এই বছর ৮৭ হাজার কোটি টাকার ক্লেম জমা পড়েছে। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফসলের ন্যূনতম দাম অনেক বাড়ানো হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মান্ডিতে ন্যূূনতম সহায়ক মূল্যে বিক্রি করতে চাইলে বিক্রি করতে পারেন। আপনি মান্ডিতে বিক্রি করতে চাইলেও বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু অন্যদের কাছেও বিক্রি করতে পারেন। এখন জ্যাম, চিপসের সংস্থায় বিক্রি করতে পারেন, তো অসুবিধা কোথায়। আজ নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রচুর মিথ্যে ছড়াচ্ছে। কিছু লোক বলছে, মান্ডি তুলে দেওয়া হবে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন আইনের পরেও হয়েছে। আজ যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের মধ্যে সাধারণ কৃষকও রয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করুন, তাঁরাও ভাল দামে ফসল বিক্রি করেছেন। নতুন আইন হওয়ার পরেও সরকার রেকর্ড পরিমাণ ফসল কৃষকদের কাছ থেকে কিনেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন আইনের ফলে কৃষকরা সরকারি আধিকারিকের কাছে গিয়ে আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারেন এই সব দালাল ফড়েদের বিরুদ্ধে। কৃষক যদি ফসল বিক্রি করতে চায়, তা হলে যে কারও কাছে বিক্রি করতে পারেন। কোনও কৃষকের সঙ্গে কেউ চুক্তি করে, তা হলে সেই সংস্থাও চাইবে ফসল ভাল ও বেশি হোক। ফলে তাঁরা অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কৃষকদের দেবে, উন্নত বীজ দেবে, কারণ তাতে তাদের লাভ বেশি হবে। কোনও কারণে ফসল নষ্ট হলে বা খারাপ হলেও চুক্তিকারী সংস্থা চুক্তিতে উল্লিখিত দাম দিতে বাধ্য। এগুলো কি কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক নয়? এতে কৃষকদের ভাল হবে কি হবে না? কোনও পরিস্থিতিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল যে ফসল ভাল হল, দামও হল, চুক্তিকারী সংস্থা তা হলে বোনাসও কৃষককে দেবে। এখন কৃষকদের ঝুঁকি নেই, কিন্তু লাভ পুরোটাই কৃষকদের।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *