বীরভূম, ২৪ ডিসেম্বর (হি. স.) : বিশ্বভারতীর মাধ্যমে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দূরদৃষ্টি লক্ষ্য এখন আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় শিক্ষণীয়। বিশ্বভারতীর শতবর্ষ অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই দাবি রাখেন। দিল্লি প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে ভার্চুয়ালি বিশ্বভারতীর আচার্য উপস্থিত হয়েছিলেন বিশ্ব বিদ্যালয়ের শতবর্ষ প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানে।
তিনি তার বক্তব্যের শুরু থেকেই বিশ্বভারতীর সঙ্গে কবিগুরুর লক্ষ্য এবং সেইসঙ্গে ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন এর কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি এই সংস্কৃতি বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠান হাত ধরে পরবর্তী প্রজন্মকে দেশের সম্পদ হিসেবে প্রস্তুত করার কোথাও তিনি বলেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩৪ মিনিট বক্তব্য রাখেন। যেখানে তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এবং তার সংস্কৃতি ও রচনাশৈলী কে নিয়ে বিস্তারিতভাবে তার মনোভাব তুলে ধরেন। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী এদিন তার বক্তব্যের মাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন আগামী দিনে ভারত বর্ষ কবিগুরুর দেখানো পথেই আত্মনির্ভর ভারত হয়ে উঠবে।
বিশ্বভারতীর শতবর্ষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। আমন্ত্রণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে বিশ্বভারতীর কাছে বার্তা পাঠানো হয় তিনি সশরীরে নয় ভার্চুয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সশরীরে উপস্থিত হয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। তবে আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারলেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার না আসার কারণ প্রসঙ্গে বিশ্বভারতী তরফে কোন মন্তব্য জানা যায়নি। এদিন বেলা ১১ টা নাগাদ শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বভারতী শতবর্ষ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধি সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বভারতীর অধ্যাপক অধ্যাপিকা এবং অন্যান্য কর্মীবৃন্দ। শতবর্ষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারলেন না বিশ্বভারতী ছাত্রছাত্রীরা। কারণ কোভিড বিধির কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে বিশ্বভারতীর পঠন-পাঠন। এদিন শতবর্ষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকে দেশের অগ্রগতির সঙ্গে একাত্ম করে মন্তব্য করেন, “গুরুদেব সর্ব সমাবেশে, সর্ব স্পর্শী, সহ অস্তিত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে মানবকল্যাণের বৃহত্তর লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বিশ্বভারতীর জন্য গুরুদেবের এই দূরদর্শী লক্ষ্য আত্মনির্ভর ভারত তৈরিতে ও সহকারি। আত্ম নির্ভর ভারত ও বিশ্বের কল্যাণের জন্য ভারতের কল্যাণের পথ। এই অভিযান ভারতকে স্বতন্ত্র করার অভিযান। ভারতের সমৃদ্ধি থেকে বিশ্বের সমৃদ্ধি গড়ে তোলার অভিযান। ইতিহাস সাক্ষী আছে একটি স্বতন্ত্র সমৃদ্ধ ভারত গোটা বিশ্বের উপকার করে।”
ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার ২৭ বছর আগে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানে এবছর বিশ্বভারতী শতবর্ষ প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করছে। আজ থেকে আগামী ২৭ বছর পর ভারত বর্ষ শতবর্ষ উদযাপন করবে স্বাধীনতার। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, “এই ২৭ বছরের জন্য আমাদের নতুন লক্ষ্য স্থির করতে হবে।যে লক্ষ্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্থির করেছিলেন ১০০ বছর আগে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার জন্য আগামী ২৭ বছর আমাদের সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে হবে।”
প্রতি বছরের মতো বিশ্বভারতীতে বিশ্বভারতীর উদ্যোগে পৌষ উৎসব এর আয়োজন করা হলেও গত বছরের মতো এ বছরও পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হবে না শান্তিনিকেতনে। কোভিড বিধির কারনে এ বছরও বন্ধ রাখা হয়েছে পৌষ মেলা। গুরুদেবের সৃষ্টি এই পৌষ উৎসবে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা তে দূর-দূরান্ত থেকে একত্রিত হতেন বহু হস্তশিল্পী, কুটির শিল্পীরা। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে করোনাভাইরাস এর কারণে এই পৌষ মেলা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য রীতিমতো রুজি-রোজগার হীন হয়ে পড়েছেন এই সমস্ত হস্তশিল্পী রা। একথা খুব ভালোভাবেই অবগত রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এই হস্তশিল্পীদের রুজি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য সমব্যথী প্রধানমন্ত্রী। একথা তিনি কার্যত স্বীকার করে নিয়ে তিনি তার বক্তব্যে বিশ্বভারতী কে এই সমস্ত হস্তশিল্পীদের পাশে দাড়িয়ে আত্মনির্ভর ভারতে তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন। পৌষমেলার সঙ্গে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ স্লোগান একেবারে পরিপূরক বলেও মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পৌষ মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে সমস্ত হস্ত শিল্পীরা মেলায় আসছেন তাদের রুজি রোজগারে টান পড়েছে এ কথা আমরা জানি। কবিগুরু এই হস্তশিল্পীদের মাধ্যমে আত্মনির্ভর করে তোলার চেষ্টা করেছেন। আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার জন্য এখন সময়ই এই সমস্ত হস্তশিল্পী প্রতিবন্ধী শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর। আমি বিশ্বভারতী কে অনুরোধ করবো এই সমস্ত হস্তশিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য।তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন তাদের বানানো পণ্যসামগ্রী যাতে অনলাইনে মাধ্যমে বিক্রয় করা যায় সে বিষয়ে সচেষ্ট হন।আগামী দিনে যেন তাদের প্রস্তুত করা সামগ্রী বিশ্বের দরবারে মানুষের হাতে পৌঁছে যায় এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি পদক্ষেপ হয়।” সেইসঙ্গে এদিন প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে গুরুদেবের রচনাশৈলীর সঙ্গে গুজরাট যুগের সঙ্গে তুলনা করলেন তিনি। এদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।কিন্তু উপস্থিত থাকতে পারলেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর সাংবাদিকদের করা রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর কৌশলে পাস কাটালেন। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন প্রধানমন্ত্রীর। ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বাংলা হবে কিনা এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল এদিন বলেন, “দেশের স্বার্থে তৈরি এই বলেছি যেখানে রবীন্দ্র চিন্তা ধারা রয়েছে রবীন্দ্র কৃষ্টি রয়েছে। আমি এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছিলাম দার্জিলিংয়ে থাকার সময়।যদি এ নিয়ে কারও আপত্তি থাকে তাহলে তিনি আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।” তবে এই পলিসি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপস করা প্রসঙ্গ উড়িয়ে দেন রাজ্যপাল। বিশ্বভারতীর শতবর্ষ অনুষ্ঠানে এদিন বিভিন্ন রবীন্দ্র কেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ দিনটিকে পালন করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।