নয়াদিল্লি, ২২ ডিসেম্বর (হি.স.): আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈচিত্রই হল দেশের শক্তি। এই শক্তি সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং সেই শক্তিকে কোনও ভাবেই দুর্বল না করার প্রয়াসও আমাদের করা উচিত। মঙ্গলবার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশ্বদরবারে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দেশের ও বিশ্বের অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত পড়ুয়ারা বিশ্বজুড়ে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভবনগুলির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার ইতিহাস ভারতের মূল্যবান পরম্পরার অংশ বিশেষ। বিগত ১০০ বছরে ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশের সম্পর্ক মজবুত করার পিছনে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
করোনা-সঙ্কটের সময় আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের ভূয়সী প্রসংশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা-সঙ্কটের সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে সমাজের সহায়তা করেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনামূল্যে পরীক্ষা করানো, আইসোলেশন ওয়ার্ড বানানো, প্লাজমা ব্যাঙ্ক বানানো এবং পিএম কেয়ার ফান্ডে বিপুল অর্থ সাহায্য করা, সমাজের প্রতি আপনাদের দায়িত্বের জানান দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, এখানে উর্দু, আরবিক ও পারসিক ভাষায় ইসলামিক সাহিত্যের উপরে যে সমস্ত গবেষণা হয়েছে, তাতে সমগ্র ইসলামিক বিশ্বে সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতার বিকাশ ঘটিয়েছে।
বিদেশ সফরের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ সফরে গিয়ে আমার সঙ্গে প্রায়শই আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সঙ্গে দেখা হয়, যাঁরা তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গর্বিত বোধ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন এক শহর, যা ভারতের এক সংক্ষিপ্ত রূপ তুলে ধরে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈচিত্রই দেশের শক্তি। এই শক্তিসম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা জরুরি এবং তাকে কোনও ভাবেই দুর্বল না করার প্রয়াসও আমাদের করা উচিত। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত নীতি বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এদিন জানান, আগে মুসলিম মেয়েদের স্কুল ড্রপআউট রেট ৭০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা কমে ৩০ শতাংশে এস পৌঁছেছে। আগে লক্ষ লক্ষ মুসলিম মেয়েরা শৌচালয়ের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতেন, এখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে একবিংশ শতাব্দীর ভারতের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশের যুব সমাজ ‘দেশ সর্বাগ্রে’ আহ্বানের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। উচ্চ শিক্ষায় এনরোলমেন্ট সংখ্যা বাড়ানো এবং আসন বাড়ানোর জন্য নিরন্তর কাজ করছে সরকার। মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়েও অনেক কাজ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের নজর রয়েছে ভারতের দিকে।
এ দিন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী স্মারক ডাকটিকিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রসঙ্গত, এই প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করলেন। ১৯২০ সালে সংসদে আইন পাশ করে ১৮৭৭ সালে স্যর সৈয়দ আহমেদ খান প্রতিষ্ঠিত মহামেডান অ্যাংলো কলেজকে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছিল।