নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/চড়িলাম, ৮ ডিসেম্বর৷৷ ত্রিপুরার ইন্দো-বাংলা উন্মুক্ত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে নিযুক্ত তিন শ্রমিককে অপহরণের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ তিন এনএলএফটি জঙ্গি সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে৷ পাশাপাশি, অপহৃত শ্রমিকদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে পুলিশ৷
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজে নিযুক্ত তিন শ্রমিক সোমবার সকাল থেকে নিখোঁজ৷ তাঁরা পানীয় জল সংগ্রহে গিয়ে আর শিবিরে ফিরে আসেননি৷ এ ঘটনায় ধলাই জেলার আমবাসা মহকুমার অধীন গঙ্গানগর এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷
সোমবার ধলাই জেলার গঙ্গানগর থানাধীন মালদা কুমার রোয়াজাপাড়া এবং হরিয়ামুনি পাড়ার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত ছড়া থেকে জল আনার সময় এনপিসিসি সাইট সুপারভাইজার সুভাষ ভৌমিক, জেসিবি চালক সুবল দেবনাথ এবং শ্রমিক সর্দার গণপতি ত্রিপুরাকে সশস্ত্র এনএলএফটি জঙ্গিরা অপহরণ করেছে৷ ওই এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ চলছে৷ তাঁরা জল সংগ্রহে গিয়ে অনেক সময় পার হয়ে গেলেও ফিরে না আসায় অন্যান্য শ্রমিকরা বিষয়টি বিএসএফ আধিকারিকদের নজরে নেন৷ এর পরই তাঁদের খোঁজ শুরু হয়৷
স্থানীয় সূত্রের খবর, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সুসজ্জিত নিষিদ্ধ ঘোষিত এনএলএফটি-র সাত জঙ্গি ওই শ্রমিকদের অপহরণে এসেছিল৷ পাহাড়ের চূড়া থেকে পাঁচ জঙ্গি নেমে এসে শ্রমিকদের বন্দুকের নলের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷ ওই অপহরণের ঘটনায় পুলিশ গঙ্গানগর থানাধীন মালদাপাড়ার বাসিন্দা জঙ্গি সহযোগী পাঠান মোহন ত্রিপুরা, যতীন্দ্র ত্রিপুরা এবং বৈজয় ত্রিপুরাকে আটক করেছে৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ণতা ধরা পড়ায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷
দীর্ঘদিন পর পুনরায় ত্রিপুরায় অপহরণকাণ্ড শুরু হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷ উগ্রপন্থার সেই কালো অধ্যায়ের কথা অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে৷
বিশালগড় মহকুমার চড়িলামের কামরাজ কলোনি এলাকার সুবল দেবনাথ নামে এক যুবককে সোমবার ধলাই জেলার গঙ্গানগর থানাধীন মালদা কুমার রোয়াঙ্গ পাড়ার উগ্রবাদীদের হাতে অপহৃত হয়েছিলেন৷ মঙ্গলবার সকালে সংবাদমাধ্যমের কর্মী সুবলের বাড়িতে যাওয়াতে মায়ের আর্তনাদ চিৎকার ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সুবলের পিতা নারায়ন দেবনাথ৷ পেশায় দিনমজুর৷ জেসিবি গাড়ির চালক৷ গঙ্গানগর মালদা কুমার রোয়াঙ্গ পাড়ায় সপ্তাহ খানেক আগে ওই জায়গায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন৷ সুবলের এক মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে৷ মেয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়েন বালুয়াছরি উচ্চ বিদ্যালয়ে৷ ছেলে এখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি৷
মঙ্গলবার সুবলের বাড়িতে যাওয়ার পর মায়ের আর্তনাদ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দাও৷ এদিকে সুবল দেবনাথ এর অপহরণের ঘটনায় এনএলএফ টি বিশ্ব মোহন গোষ্ঠী জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেন সুবলের পিতা৷ গতকাল তিনজন গিয়েছিলেন গঙ্গানগর তার মধ্যে চড়িলামের সুবল দেবনাথ একজন৷ সুবলের অবুঝ ছেলে মেয়ে বুঝে উঠতে পারছে না কি বলবে৷ পিতা অপহরণের ঘটনা আজ সকালে নারায়ন দেবনাথ গিয়েছেন গঙ্গানগর থানায়৷ মায়ের আর্তনাদ চিৎকার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দাও৷ অসহায় পরিবার অপহরণের ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন৷ নারায়ণ দেবনাথের দুই ছেলে এক ছেলে সুবল আরেকজন প্রদীপ৷ স্ত্রী কান্নায় কিছু বলতে পারছেন না৷ তবে রাজ্যে অপহরণের ঘটনা শুরু হতে চলছে এমন ইঙ্গিত লক্ষ করা গেল নারায়ণ দেবনাথের পরিবার এর মুখ থেকে৷ ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবার আর্ত চিৎকার এলাকার পরিবেশ ক্রমশ ভারি করে দিয়েছে৷

